Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৩০

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৩০

সাফায়েত তার কথা রাখার জন্য অল্প পানিতে ঘন দুধকফি বানিয়েছিল সেদিন। কফির ঘ্রাণের মাদকতায় প্রেমে ডুবেছিল দুজন। এত দিনের প্রেমে এমন নিবেদন ওদের দুজনের কাছেই অপরিচিত। তাই যেন উপভোগের আগ্রহটা বেশি। উপভোগের উপসংহারে সাফায়েত কফি বানিয়েছিল। প্যাকেট কফিতে নিজের প্রতিভা দেখানোর খুব একটা সুযোগ না থাকলেও নবনীতার অনুরোধে সাফায়েত সেদিন একটা কবিতাও লিখেছিল। -

একদিন তোমায় ডুবিয়ে মারবো দেখো..
 তুমি সাঁতরাবে আমার গল্পে।
 কিংবা ডুব দেবে আমার কবিতার ছন্দে।
 তুমি আমার সাথে ভাসতে চাইবে-
 আমার দুষ্টুমি মাখা ভালোবাসায়।

আমার তোলা ছবি দেখে প্রেমে পড়বে আমার।
 কিংবা আমার বেসুরো গানে-
 তোমার প্রাণোচ্ছ্বল হাসি,
 তোমার প্রতি বাড়িয়ে তুলবে আমার প্রেম।

তোমার খোলা চুল, কাজলকালো চোখ, টিপ,
আর হালকা লিপস্টিকের হাসি দেখতে-
তোমাকে আমি ডুবতে দেবো না।
আমি আপলক চোখে দেখবো তোমার নিদারুন সৌন্দর্য্য।
তারপর তোমায় ভেবে লেখা গল্প কবিতায় -
আবার তোমায় ডুবিয়ে মারবো দেখো।

 

ফ্লোরিং করা বিছানাতে রংচটা একটা চাদর পাতা। বিছানা চাঁদরটা তখনো কুঁচকে আছে। দেয়ালে দুটো বালিশ হেলান দিয়ে তাতে হেলান দিয়ে বসেছে সাফায়েত আর নবনীতা। নবনীতার হাতে একটা কফির মগ। রাত জেগে গল্প লেখা সাফায়েতের জন্য এই কফির মগটা উপহার দিয়েছিল নবনীতা। তবে আজই প্রথম দুজন সেই মগের কফি এভাবে ভাগ করে খেতে পারছে, তাও কিনা এত কাছাকাছি বসে! সাফায়েত বরাবরই চিনি কম খায়। আর এতক্ষণের মধুর আলিঙ্গনে এই মুহূর্তে কফিতে চিনি কম খেতেও আপত্তি নেই নবনীতার। ভাগাভাগি করে কফিতে চুমুক দিচ্ছে দুজন। তারপর অপরজনের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে। দুজনের মায়া যেন কাটছেই না। এখনো যেন তারা চুমুর ঘোরেই আছে।

: কেউ একজন বলেছিল - মানুষ বলে টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না। তারা মিথ্যা বলে । টাকা দিয়ে কফি কেনা যায় আর কফি আমাকে খুশি করে ।

: ভুল কিছু তো বলেনি।

: জোনাথন সুইফট একবার বলেছিলেন- কফি আমাদের তীব্র, শান্ত এবং দার্শনিক করে তোলে। জেসি লেন অ্যাডামস বলেছিলেন- কফির গন্ধ পবিত্র মাটির স্বর্গের মতো। নর্থ অফ বিউটিফুল খ্যাত জাস্টিনা হেডলি বলেছিলেন- জীবনে দুঃসাহসিক কাজ ভাল, কফিতে ধারাবাহিকতা আরও ভাল।

: বাহ। কফি নিয়ে কবি সাফায়েতের মন্তব্য কি, শুনি।

: প্রেমিকার পাশে বসে এককাপ ধোঁয়া ওড়া কফি। তাতে চিনি কম। প্রেমিকার ঠোঁটে অসমাপ্ত হাসি। কবির নেশার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।

পোড়াটে কফির পোড়াটে এক গন্ধ যেন তখনো মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। দুজন দুজনকে ছুঁয়ে রেখেছে তখনো। যেন কোনো ভাবেই আলাদা হবে না দুজন। চুমুকে চুমুকে কফি শেষ হয়, বন্ধ ঘরে কার্বনডাইঅক্সাইড বাড়ে। সেই সাথে বাড়ে ওদের প্রেমও।

: এভাবে তোমায় ছুঁয়ে থাকতে পারলে মন্দ হতো না।

: এখন ছাড়ো তো, বাসায় যেতে হবে।

বাসায় যাবে মানে কি? এখন কি রাস্তায় আছো নাকি। - হেসে হেসে উত্তর দিলো সাফায়েত।

কবি সাহেব, আমি তোমার বাসার কথা বলিনি। আমি আমার বাসার কথা বলছি। - দুহাতে সাফায়েতের গাল টেনে উত্তর দিলো নবনীতা।

: চলেই তো যাবে, আরেকটু থাকলে কি এমন ক্ষতি হবে?

: আরেকটু না থাকলে কি এমন ক্ষতি হবে শুনি।

: ক্ষতি হবে তো। এখন তোমার দিকে তাকিয়ে গল্প খুঁজছি। তুমি চলে গেলে গল্পরা নিখোঁজ হয়ে যাবে। যদিও আজ রাতে আমার ঘুম হবে না। সারা রাত লিখতে থাকবো।

: সারা রাত কি এমন লিখবে?

: সারা রাতও তো কম হবে। তোমার নিজস্ব মানচিত্র থেকে যে গল্প পেয়েছি আজ, তা লিখতেই আমার কয়েক বসন্ত লাগবে।

: তাহলে কয়েক বসন্ত পরেই আমাদের দেখা হোক, তোমাকে তাহলে বিরক্ত না করি।

যেন নিজের কথার মারপ্যাচে আটকা পড়লো সাফায়েত। চোখে মুখে পানির ছিঁটা দিয়ে সাফায়েতের সেই না ধোঁয়া  গামছা দিয়ে মুখ মুছে সেদিনের মত বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে নবনীতা। নবনীতার এই গোছগাছ খুব কাছ থেকে উপভোগ করছে সাফায়েত। কবি সাহেব যেন এখানেও ছন্দ খুঁজতে ব্যস্ত। সে যেন মগ্ন আছে নবনীতাতে। চোখের সামনে হাত নেড়ে ধ্যান ভাঙালো নবনীতা। তারপর জেনে নিলো কিভাবে তাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে। দুজন একসাথে নামবে না অন্য কেউ যদি দেখে ফেলে সেই ভয়ে। নবনীতাকে পথ চিনিয়ে কিছুক্ষন পরে নামলো সাফায়েত। তারপর বেশ খানিকটা দূরে গিয়ে রিক্সা নিয়ে নবনীতাকে পৌঁছে দিলো রাজা বাজার পানির ট্যাংকির পাশে ওর মেসে। 


No comments

Powered by Blogger.