Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৬

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৬

সাফায়েত একবার ওর বন্ধু বিপ্লবের থেকে ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল নবনীতার সাথে। ভার্সিটি জীবনে বিপ্লব ছিল সাফায়েতের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বড়লোক ঘরের ছেলে বিপ্লব, তবে আচরণে বোঝা মুশকিল। তখন ফিল্মের ক্যামেরার যুগ ছিল। বিপ্লবের থেকে ক্যামেরা নিয়ে নিজের টাকায় একটা ফিল্ম কিনেছিল সাফায়েত। ছত্রিশটা ফিল্মের জায়গায় আটত্রিশটা পেয়ে সে কি খুশি সাফায়েত। নবনীতাকে সেদিন আয়োজন করে শাড়ী পরে সেজে আসতে বলেছিল। যেন নবনীতাকে নিয়ে সাফায়েতের সেদিন ঘুরতে যাওয়ার একমাত্র শর্ত হল নবনীতাকে যেন পরী দেখায়। প্রতিদিন তো মানবীর সাথে প্রেম হয়, সাফায়েতের সেদিন ইচ্ছে হয়েছিল একটা পরীর সাথে প্রেম করবে। নবনীতাও পরী সেজে এসেছিল। সেদিনও ওরা মেঘবতী ঘুরতে এসেছিল। নৌকায় বসে পানিতে হাত দিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছবি তুলেছিল পরী নবনীতা। তারপর নদীর ওপার এপার, উদ্যানের জারুল গাছতলা, মুক্তমঞ্চ, বাদামতলা, ওদের যত যত প্রিয় জায়গা আছে, সবগুলোকেই যেন ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত মৌসুমী ফটোগ্রাফার সাফায়েত। নবনীতা ব্যস্ত পোজ দিয়ে ছবি তোলাতে। সুন্দর বর্তমানকে কেউ মূল্যায়ন করতে চায় না। ভাবে, এটা তো আছেই। তবে আজ বাদে কাল এই বর্তমান টা যখন অতীত হয়ে যায়, তখন স্মৃতিচারণে একটা আক্ষেপ, অপূর্ণতা তৈরি হয় যে কেন সেই সময়টা বন্দী করে রাখা গেল না। বর্তমানকে ভবিষ্যতের জন্য বন্দী করার প্রযুক্তি যখন আবিষ্কার হয়েছে, তাহলে সেটা আর যথাযথ সদ্ব্যবহারে ক্ষতি কি।

 বিপ্লবের কি খবর এখন? - জানতে চাইলো নবনীতা।

এখনো গানবাজনা নিয়েই আছে। - বললো সাফায়েত।

রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছে? - প্রশ্ন করলো নবনীতা।

হ্যাঁ। দুইবার জেল খেটে রাজনীতিকে সালাম দিয়েছে। তবে দলীয় অনুষ্ঠানে গান বাজনার দরকার হলে বিপ্লবকে বিনা টাকায় পাওয়া যায়। - বললো সাফায়েত।

বাহ, ভালো তো। সেই তখন থেকেই লেগে  আছে গানবাজনার সাথে। আসলে লেগে থাকলে সাকসেস আসবেই। - বললো নবনীতা।

তবে আঠার মত লেগে থাকলেও সবসসয় সাকসেস আসে না। - নিজের মন্তব্য জানালো সাফায়েত।

কেন? - প্রশ্ন করলো নবনীতা।

এই যে আমি এতবছর লেগে আছি। কোনো সাকসেসই পেলাম না প্রেমে। - হাসতে হাসতে উত্তর করলো সাফায়েত।

 মফিজ ভাইয়ের খবর জানো? কদিন আগে একটা নিউজ ভাইরাল হয়েছে দেখলাম। আসল ঘটনা জানো কিছু? - বললো নবনীতা।

: ঠিক দেখেছিলে। মফিজ ভাই ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন। দুঃখের বিষয় এত বছর এত বড় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে খাবারের ব্যবসা করে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মফিজ ভাইকে। বাকির খাতা পূর্ণ করে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে তাঁর পাওনা প্রায় ৬ লাখ টাকা। অধিকাংশই  সহমত ভাই বাহবা পাওয়া ছাত্র নেতা, সরকার দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা, পাতিনেতা, প্রভিশালী কর্মী, তথাকথিত ভালো স্টুডেন্ট। দীর্ঘদিন ধরেই বকেয়া আদায় করতে না পেরে ক্রমে পুঁজি হারিয়ে ফেলেন মফিজ ভাই। সর্বশেষ গত মাসের দশ তারিখে চৌত্রিশ বছরের ব্যবসা রেখে একেবারে নিঃস্ব হয়ে দোকান ছেড়ে দেন মফিজ ভাই। খবর পেয়ে আমি গিয়েছিলাম মফিজ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। মফিজ ভাই খুব মন খারাপ করেই বললেন  ‘ছাত্রাবস্থায় যারা বাকি খেয়েছে, তাদের অনেকে এখন ভালো ভালো জায়গায় চাকরি করে। তারা চাইলে আমার টাকাগুলো দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু দেয় না। বাকি খাওয়াতে খাওয়াতে সে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। দোকান ছেড়ে খালি হাতে ক্যাম্পাস থেকে চলে যাচ্ছে।

: পাবলিক ভার্সিটিতে চাঞ্চ পেয়ে নিজেকে দেশ সেরা মেধাবি যোগ্য স্টুডেন্ট ভাবা, ক্লাসে প্লেস করা মেধাগুলো মুহূর্তেই ভুলে যায় মফিজ ভাইকে।

: হুম। আর সারাজীবন দিয়ে তাদেরকে আগলে রাখা মফিজ ভাইরা হারিয়ে যায় কালের স্রোতে।

 

No comments

Powered by Blogger.