Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৫

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৫

এসব গল্পে গল্পে ওদের রিক্সা এসে থামলো আজগর আলী হোটেলের সামনে। জ্যামের জন্য ওখানেই নেমে গেল। পাঁচ বছর আগে অবশ্য জ্যাম কম ছিল। এখন অনেক বেশি। যদিও সাথে প্রেমিকা থাকলে জ্যামটা বেশ লাগে। কিছুক্ষন নিশ্চিন্তে পাশাপাশি বসে থাকা যায়। হোটেলের লম্বা রফিক এখনো এখানে কাজ করে। এক হোটেলেই দুইটা রফিক ছিল, তাই ওর নাম লম্বা রফিক। তবে সে যে খুব লম্বা তা কিন্তু না। বেটে রফিক এখন আর এই হোটেলে কাজ করে না। এখানে এখন একটা রফিক ই কাজ করে। তবুও তার নাম সবার মুখে এখনো সেই লম্বা রফিক ই। কেউ কেউ রফিক্কা বলেও ডাকে। এখন তো আর ওরা প্রেমিক প্রেমিকা না। তাই জ্যামে বসে না থেকে রিক্সাভাড়া মিটিয়ে ওরা হেটেই পৌঁছে গেলো মেঘবতীর নৌকা ঘাটে। এই মেঘবতীও তাদের প্রেমের একটা অংশ ছিল। প্রেমের সময়ে তো সপ্তাহে দু'একটা দিন আসা হত ই। আর নিজেদের অলস সময়, সুন্দর আবহাওয়ার দিনে নবনীতা যদি শখ করতো মেঘবতী আসার জন্য, সেই শখ পূরণের জন্য সাফায়াতের কোন ত্রুটি থাকতো না। কবি তার সমস্ত কাজ ফেলে প্রেমিকা নবনীতাকে নিয়ে ঘুরতে আসতো মেঘবতীর পাড়ে। কখনো কখনো ওরা রঙ মিলিয়ে শাড়ি পাঞ্জাবি পরে আসতো। এসব রং পছন্দ করে কাপড় কেনা, বানানোর কাজটা নবনীতা ই করতো সবসময়। এই নৌকা ঘাট থেকেই ঘণ্টা চুক্তিতে নৌকা ভাড়া করে ওরা হারিয়ে যেত নদীর মাঝে। বাতাসে নদীর ঢেউয়ে দুলতো ওদের নৌকা, সাথে ওরাও। সাঁতার না জানা নবনীতার বিন্দুমাত্র ভয় ছিল না তাতে। ওর একটা অন্ধ বিশ্বাস ছিল তখন, সাফায়াত তাকে বাঁচাবে। জীবনের যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে সাফায়েত কখনো তাকে একলা রেখে চলে যাবে না। যদিও নবনীতা নিজেই সাফায়াত কে একলা রেখে চলে গিয়েছিল। এই নদীতে তাদের অনেক অনেক স্মৃতি। নদীতে বয়ে চলা বাতাসে নবনীতার চুল উড়ে নবনীতার খুব কাছে বসে থাকা সাফায়েতের মুখে জড়ো হতো। কবি সাফায়েত গন্ধ নিতো প্রেমিকার চুলের। নবনীতার ভয় পাওয়ার অজুহাতে সাফায়েত শক্ত করে ধরে রাখতো ওর হাত। নবনীতা বুঝেও না বোঝার ভান করে প্রেম খুঁজতো প্রেমিকের স্পর্শে। এই স্পর্শে তীব্র একটা প্রেম ছিল তখন। যেন অল্প একটু ছুঁয়ে থাকার মাঝে এক পৃথিবীর সমান সুখ অনুভব করতো ওরা দুজনই। যেন দুজন দুজনকে দেখেই পার করে দিতে পারবে তাদের বাকিটা জীবন। ভালোবাসার মানুষকে ছুঁয়ে থাকার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা, সেটা মুগ্ধ করতো অপরজনকে। আর তাতেই ওদের ভালোবাসা বেড়ে যেত বহুগুণ।

 : লেখালেখি ছাড়া আর কিছু কি করো?

: তথ্য অনুসন্ধান করি।

: কিসের তথ্য?

: মখলেস উদ্দীন কে তো চেনো।

: চিনি ততো। গবেষক। উনার কথা বলছো?

: উনি ছাতার মাথা গবেষক। সব তথ্য তো আমি জোগাড় করে দিই। যদিও মাগনা না। আর তাতে আমারো লাভ হয়। একটা তথ্যের জন্য অনেক পড়তে হয়। এসব জ্ঞান আমার লেখাতেও কাজে লাগে।

: কেমন তথ্য?

: উনি হঠাৎ হঠাৎ উদ্ভট কিছু প্রশ্ন দিয়ে বসেন। এই যেমন ধরো কোন কবিকে শিশু শেক্সপিয়র বলা হতো? অনেক ঘাটাঘাটি করে পেলাম ফরাসি কবি নিকোলাস আর্থার রিম্বাউডকে শিশু শেক্সপিয়র বলা হতো। কিংবা চেরাগ আলি ফকিরের কথা লেখক আখতারুজ্জান ইলিয়াস কোন উপন্যাসে বলেছিল। সেটা খুঁজে বের করে দিতে হবে আমাকে। উনার লেখা পড়ে জানলাম এটা তার খোয়াবনামা উপন্যাসের একটা চরিত্র।

: এটা তো বহু ঝামেলার কাজ।

: বহুত বলতে বহুতের চূড়ান্ত পর্যায়ের ঝামেলা।

: এখন কি তথ্য খুঁজছো?

: লোকমুখে প্রচলিত যে সৈয়দ শামসুল হক এক জন ইসলাম বিরুদ্ধি লেখক ছিলেন। তার কাছে নাকি আযানের সুরের চেয়েও কাকের কা কা শব্দ অনেক মধুর লাগে। তিনি তার একটা লেখাতে ভোরের কাককে অনুরোধ করেছেন, ও কাক তুই খুব জোরে কা কা কর যাতে মুয়াজ্জিনের আযানটা আর না শোনা যায়। আমাকে এই লেখার বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে হচ্ছে।

: কি পেয়েছো অনুসন্ধানে?

: এই লাইনটা শামসুল হক তার "Dead Peak" এর বঙ্গানুবাদ "মরা ময়ূর" নামক একটা কবিতাতে বলেছেন ঠিকই। তবে কাব্যনাটকের প্লট টা এমন ছিল - এক মেয়েকে একজন মুয়াজ্জিন ধর্ষণ করে, তাকে এমনভাবে ভয় দেখানো হয়, যাতে সে কারো কাছে মুখ না খুলে এবং সে প্রায়ই মেয়েটার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতো। মেয়েটার বাড়ি মসজিদের পাশেই ছিল। প্রতিদিন সকালে যখন সেই মুয়াজ্জিন আযান দিতো, মেয়েটা তখন ঘৃণায় বলতো..." ও কাক তুই জোড়ে জোড়ে ডাক, যেন অই মুয়াজ্জিন এর গলায় তার আযান শুনতে না হয়!

: এই কথাটাই এভাবে ছড়িয়ে গেছে?

: উনাকে নিয়ে অনেক কথা ই প্রচলিত আছে।

: কি কথা?

: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে পাকিস্তান সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যে পঞ্চান্ন জন বুদ্ধিজীবি বিবৃর্তি দিয়েছিলো। তাদের স্বাক্ষরের তালিকায় পঞ্চাশ নম্বর সিরিয়ালের নামটি হলো সৈয়দ শামসুল হকের। এই বিবৃর্তিটি আকারে প্রকাশিত হয় দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় ১৯৭১ সালের ১৭ মে তারিখে। এছাড়াও আহমদ শরীফ, কাজী নুরুজ্জামান, ও শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত একাওরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায় বইয়ের ১৪২ থেকে ১৪৬ পৃষ্ঠায় এর বিস্তারিত রয়েছে।

: তার মানে কি তিনি রাজাকার?

: সেটাও বলতে পারছি না আমি।

: কেন?

: জাহানার ইমাম তার একাত্তরের দিনগুলি বইয়ে লিখেছেন - এখন বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীদের ধরে তাঁদের দিয়ে খবরের কাগজে বিবৃতি দেওয়ানোর কুটকৌশল শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী যে বেয়নেটের মুখে সই দিতে বাধ্য হয়েছেন, তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই।

: তাহলে সৈয়দ শামসুল হক যে স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করেছে নাকি বাধ্য হয়ে সাক্ষর করেছে সেটা অমিমাংসিত মনে হচ্ছে।

: অধিক তদন্ত, তথ্য কিংবা গবেষণাতে কোনো বিশ্লেষক হয়তো উনাকে কোনো একটা পাশে রাখতে পারবে। তবে আমি এখনো অতটা বলতে পারছি না। কারণ আমি তার সেই সময়ের কর্মকান্ড সরাসরি দেখেনি। আমার ভরসা কেবল দালালিক প্রমাণ।

: উনার খেলারাম খেলে যা উপন্যাসটা পড়েছো?

: পড়েছি। তবে এই গল্পের একটা মজার ব্যাপার কি জানো? তসলিমা নাসরিন এই উপন্যাসটা পড়ে দাবী করেছেন খেলারাম খেলে যা উপন্যাসের ফটকা চরিত্র বাবর আলী আসলে সৈয়দ শামসুল হকের নিজেরই চরিত্র। যদিও এই মন্তব্যের জন্য সৈয়দ শামসুল হক তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

 : তুমিও আমাকে নিয়ে অনেককিছুই লিখেছো। আমি কি মামলা করবো?

: মামলা করলে তোমার লাভ না হলেও আমার ক্ষতি হবে। একবার কি হলো জানো ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনে তসলিমা নাসরিনের ক নামের একটা উপন্যাসের বিরুদ্ধে মামলা করলো সৈয়দ শামসুল হক।

: তারপর?

: আইনী জটিলতায় লেখাটা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

: তোমার এমন ক্ষতি করবো না কখনোই। এমনিতেই তোমার কম ক্ষতি করিনি। তুমি সময়ে অসময়ে আমাকে অনেক উপহার দিয়েছো। আমিই কিছু দিতে পারলাম না।

: যদি কখনো আমায় কিছু উপহার দিতেই চাও তবে এক মুঠো সময় দিও। অন্য কিছু তো চাইলে আমি নিজেই কিনে নিতে পারি।

No comments

Powered by Blogger.