শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৪
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৪
আজ আমায় নিয়ে যাবে? - নবনীতার আবেগি
প্রশ্ন।
সত্যি? তুমি যেতে চাচ্ছো! - সাফায়েত
যেন বিশ্বাস ই করতে পারছে না।
: আমার ভীষণ দমবন্ধ লাগছে। মানুষের এত
এত কথা এত এত গ্লানি হজম করতে করতে আমি বিমূর্ষ হয়ে গেছি। তোমার সাথে আমার যে দূরত্ব,
তার শতভাগ দোষ আমার। জানো সাফায়েত, সবসময় নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করে। সবার
থেকে আড়াল রাখি নিজেকে। আজ তুমি যখন আমাকে খুঁজে পেলে। এতগুলো বছর পর যখন তুমি আমি
মুখোমুখি, জানো, ভীষণরকম দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল আমার ভেতরটা। সম্পর্কের দূরত্বে তোমাকে
সেটা বলতে পারিনি, দেখাতে পারিনি। তবে আমার ভিতরটাতে আর আমি নেই। জানি মুখে না বললেও
তোমার মন, মস্তিষ্ক কখনোই আমাকে ক্ষমা করবে না। ক্ষমা চাওয়ার অধিকার কিংবা দাবি কোনটাই
আমার নেই। তবুও বলি, যে কোন সময় তোমাকে, তোমাদেরকে, তোমার এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে
আমি চলে যাব। আমার দেহে প্রাণ থাকাকালীন আমার প্রতি তোমার সহস্র অভিমান রাগ ক্ষোভ প্রাণ
চলে যাওয়ার পর যেন দোয়ায় রূপ নেয়। মৃত মানুষের প্রতি কোন অভিযোগ রাখতে নেই। মানব
জনমের প্রস্থান তাকে সবকিছুর উর্ধ্বে তুলে দেয়। আমিও যখন তোমাদের সবাই কে ছেড়ে হারিয়ে
যাব, তখন আমাকে আর খারাপ বলো না। সম্ভব হবে কিনা জানি না, পারলে আমার জন্য দোয়া করো।
: এসব কথা বাদ দেও তো। এখন যাবে মেঘবতীতে?
তোমার সাথে না হয় কিছুক্ষণ ভেসে ভেসে স্মৃতিচারণ করবো বছর পাঁচেক আগের আমাদের সেই
সুন্দর সময়গুলো। গল্পে গল্পে খুঁজবো আমাদের হারানো প্রেম।
: আমি জানি সবই তোমার মনে আছে। তোমাকে
যতটুকু চিনি, তাতে তুমি ভুলবার পাত্র নাও। মানসিক চাপ আর সময়ের ব্যস্ততায় আমি নিজেই
ভুলে গেছি অনেক কিছু। মনে রেখে কি করবো বলো, যে স্মৃতি গুলো আমাকে তীব্র অপরাধী বানিয়ে
তোলে, সেই স্মৃতিগুলো আমি কেনই বা মনে রাখতে চাইবো বলো।
: তোমার
মনে আছে তোমায় নিয়ে একবার ঘুরতে গিয়েছিলাম শ্যামলাপুর। আমার এক বন্ধুর আমন্ত্রণে।
: খুব মনে আছে। শহরের খুব কাছে একটা
গ্রাম। এমন স্মৃতি কি এত সহজে ভুলা যায়! আচ্ছা ওটা কি এখন আর গ্রাম আছে আগের মত?
: তুমি যেটা দেখে এসেছো সেটা তোমার স্মৃতির
পাতাতে রেখে দাও। সেটা এখন অতীত। শ্যামলাপুর এখন আর গ্রাম নেই। আকাশ ছোঁয়া বড় বড়
দালান নিয়ে শহরের সাথে পাল্লা দিচ্ছে শ্যামলাপুর।
: কি জানি নাম তোমার বন্ধুটার, ওহ রাব্বি।
কি করে সে এখন?
: কয়েকটা কোম্পানি বদলে এখন একটা কোম্পানির
মোটামুটি ভালো বেতনে চাকরি করছে।
: ওর সেদিনের আপ্যায়ন টা দারুন ছিল।
আচ্ছা ও কি জানে তোমার আমার দূরত্বের কথা?
: আয়োজন করে বলতে যাইনি তবে নিজে থেকে
জানে কিনা সেটা জানিনা।
: কি সুন্দর একটা বিকেল ছিল আমাদের,
তাই না? অদ্ভুত। অদ্ভুত রকমের সুন্দর।
: ক্লাসের পড়া আমার মস্তিষ্কে খুব একটা
থাকে না সেটা তুমিও জানো। তবে তোমার সাথে আমার সময়গুলো কোন একটা ঘটনাও আমি ভুলিনি।
টিউশন থেকে ফিরে ক্লান্ত তুমি যখন আমার চোখে প্রশান্তি খুঁজছিলে, ঠিক তখন তোমাকে বিশুদ্ধ
বাতাস উপহার দিতে আমার গ্রাম দেখতে চাওয়ার ইচ্ছেতে তুমি আপত্তি করোনি। যদিও তুমি তখন
আমার কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখতে না।
: কেনই বা আপত্তি করবো বলো। আমার কাছে
কোনো জায়গাতেই কোন আপত্তি ছিল না যদি সাথে তুমি থাকতে। তোমার মনে আছে তখন আমি তোমাকে
প্রায়ই বলতাম, তোমার সাথে বনবাসে যেতেও আমি রাজি।
: তোমার মনে আছে, তুমি বলতে তুমি আমাকে
ছাড়া বাঁচবে না। আর আমি বলতাম আমিও তোমাকে ছাড়া মারা যাবো। সেই তোমার আমার এখন আলাদা
জগত হয়েছে। আমরা এখন যে যার মত আলাদা থাকি। আর হাসির কথা হলো আমার দুজন আমাদের মত করে
ভাল আছি, বেঁচে আছি। অবসরে এসব কথা ভেবে খুব হাসি। কিছুই ভুলিনি আমি।
: বাদ দেও তো সেসব কথা। আচ্ছা, ওই নদীটাতে
কি এখনো নৌকা চলে?
: ওটা মেঘবতীর একটা শাখা নদী। অনেকদিন
ওদিকে যাই না। যা গেছি তোমার সাথেই গেছি।
: তখন কখন কোথায় যেতাম কি করতাম কিছুই
ঠিক ছিল না। মনের কথা শুনতাম । এখন তো পারি না। মনের কথা মত চলার শক্তি এখন নেই।
: নিজেকে ভালো রাখতে মনের কথা শোনাটা
খুব দরকার।
: শ্যামলাপুর যাওয়ার ওই নদীটা পার হলে
মনে হতো গ্রামের ভেতর চলে গেছি। মানুষগুলো কিভাবে যেন তাকাতো। যেন কখনো মেয়ে দেখেনি।
: ব্যাপারটা হলো ওরা হয়তো ছেলে মেয়েকে
একসাথে ওভাবে চলাফেরা করতে দেখেনি।
: সেটাও হতে পারে।
: ওখানকার মুড়ি ভর্তাটা কিন্তু মজার
ছিল।
: মানুষের জীবনের সুন্দর সময় ক্ষণস্থায়ী
হয়, তাই না?
: হ্যাঁ তো। আমাকে দেখো। তাহলেই তো প্রমাণ
পাবে।
: জীবন সুন্দর, তুমি যদি সুন্দর ভাবে
ভাবতে পারো।
: তোমার সাথে তর্কে যাবো না। একটা কবিতা
শোনাবে কবি?
: তুমি আমারে
ছাইড়া চইলা গেলা,
আর আমিও নিজেরে
হারাইয়া ফেললাম।
হাজার খুঁইজাও
নিজেরে আর -
আগের মত বিছরাই
পাইলাম না।
অতীত ভুইলা
থাকোনের কোনো ট্যাবলেট আছে?
থাকলে খাইয়া
দেখতাম তোমারে ভুলোন যায় কিনা।
তুমি কোন
কৌশলে আমারে ভুইলা আছো?
আমারে একটু
শিখাইবা?
শেষ একটাবার
না হয় দেখা কইরা আমারে বাঁচাও।
আমি আর পারতাছি
না গো।
তোমার আমার
প্রেমের দিনগুলোতে কাটানো সময়,
মুখস্ত পড়ার
মত একদমে সব কইয়া দিতে পারবো।
তোমার আমার
হাজারটা দিনের হাজারটা গল্পের-
কোনোডাই
তোমার মনে পড়ে না?
বর্তমানের
সাথেও আমাদের কোনো গল্প মিলে যায় না?
তখন কি করো?
আমার চুমুতে
নাকি তুমি নেশা পাইতে,
নেশা তোমার
বদলাইয়া গেছে,
বদলাইয়া গেছে
মানুষটাও।
: আমাকে নিয়ে এত অভিমান তোমার মনে?
: সবকিছু নিজের সাথে মিলিয়ে ফেলো না।
কবিতা শুনতে চেয়েছো, তাই কবিতা বলেছি।
: আমার এই রোগটা তো অনেক পুরনো। আমাদের
বিচ্ছেদ হয়েছে তো এই জন্যই। বাদ দেও।
No comments