Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৩

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

 শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২৩

রিক্সা করে দুজন মিলে রওনা দিলো গোলাপপুরের উদ্দেশ্য। জীবন আর সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে বদলে গেছে সবকিছু। রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে, ছোট ছোট বিল্ডিং গুলো আকাশের দিকে বেড়েছে। যেই সাফায়েত আর নবনীতার  মাঝে দূরত্ব বলতে আগে ছিল কেবল দুজনের কাপড়, সেই দুজনের মাঝে আজ যোজন যোজন দূরত্ব। আগে দুজনের ছুঁয়ে দেখাতে কোন অনুমতির প্রয়োজন হতো না। আর এখন ওরা অনুমতি নেওয়ার মতো সম্পর্কে নেই। তারা দুজনের প্রতি দুজনের ভালোবাসাটা হয়তো আছে, দুজনের একসাথে স্মৃতি আছে। তবে দুজনের মধ্যে প্রেম কিংবা দুইজনের জন্য আবেগটা এখন হয়তো আর সেভাবে নেই। তাইতো এত সুন্দর ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা নবনীতাকে  ছুঁয়ে দেখার তীব্র ইচ্ছেটা নিজের মস্তিষ্কে বন্দি রেখেছে সাফায়েত। হয়তো তার কোন লেখায় প্রকাশ করবে, যে লেখা পড়ে পাঠকের ইচ্ছে করবে তার প্রেমিকাকে ছুঁয়ে দেখার। তবে ব্যক্তি সাফায়েত এর প্রাক্তনকে ছুঁয়ে দেখার তীব্র ইচ্ছার আক্ষেপটা ব্যক্তির মধ্যেই থেকে যাবে। জীবনের কোনো এক সময়ে কোনো এক বাঁকে এসে মনে হবে জীবনে অর্জন বলতে কিছু নেই। এই যেমন এখন সাফায়েতের  মস্তিষ্কের ঠিক এ কথাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। যাকে ভেবে যাকে নিয়ে লিখে সাফায়েত আজকে সময়ের জনপ্রিয় লেখক, সেই নবনীতার এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। শুধু স্বাভাবিকভাবে বর্তমান সময়টা সুন্দরভাবে পার করার চেষ্টা করছে মাত্র।

আজ কিন্তু আসিফ ভাইকে পেলে আবারো তার প্রেমিকার কথা শুনতে হবে। - সাফায়েতকে মনে করিয়ে দিলো নবনীতা।

: এই পাঁচ সাত বছরে হয়তো অনেক কিছু বদলে গেছে।

: স্বাভাবিক নয় কি? তুমি আর আমি এক রাস্তার মানুষ থেকে দুইজন আজকে পৃথিবীর দুই মেরুর পথিক। পৃথিবীর বাকি প্রাণীদের ই বা কি দোষ দেবে বলো।

: অর্জন কিংবা দোষের কিছু নেই। পৃথিবী তার নিজ গতিতে চলবে। নিজের প্রয়োজনে মানুষকে নিয়ে খেলবে। তুমি আমি পৃথিবীর এই খেলার খেলনা মাত্র।

: তোমার মনে আছে আমাদের প্রেমের দিনগুলোতে তুমি রিক্সায় ঘোরার সময় তোমাকে আমার সিটবেল্ট বানাতে।

: সময় বদলেছে তাই আগের সেই তোমাকে ইচ্ছে মত ছুঁয়ে থাকার অভ্যাসটা বদলে গেছে। এই মুহূর্তে কেবল মন ভরা সংশয়, না জানি কিভাবে নেবে আমায়।

: ইচ্ছামত যখন ইচ্ছে আমাদের জড়িয়ে ধরার আবেগটা এখন হয়তো নেই। তবে তোমার কথাই এই সহস্র বছর পর আমাদের এই আজকের দিনটাতে আঙুলে আঙুল রাখলেও আমি কোন আপত্তি করবো না। কথা দিচ্ছি। কি জানি আবার কত বছর পর আমাদের দেখা হবে।

সাফায়েত নবনীতার হাতটা ধরলো। -

"ঠিক কত সহস্র বছর পর,

আজ আমি তোমায় ছুঁয়ে দেখলাম আমি জানিনা।

এক এক করে সহস্র বছর গোণার মত পর্যাপ্ত সময় আমার নেই।

এখন আমার কাছে যতটা সময় আছে,

তার পুরোটাই তোমাকে ছুঁয়ে থাকার।

কি জানি, হঠাৎ কখন তুমি আবার-

হারিয়ে যাবে তোমার নিজের নিয়মে।

সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘোরার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে।

আসিফের মুড়ি মাখানো মগে-

পরিচিত দুটো মুড়ি ঘুরতে ঘুরতে পাশাপাশি আসারও সম্ভাবনা আছে।

তবে তোমার ভাষায় তোমার সাথে আমার-

দেখা হওয়ার সম্ভাবনা টা বেশ ক্ষীণ।

আজ তুমি জেনে গেলে তোমাকে আমি খুঁজি।

হয়তো এখন থেকে তোমার লুকিয়ে থাকার মুখোশটা-

আরো শক্তিশালী হবে, আরো স্থায়ী হবে।

আমার অবস্থানের জন্য তুমি চাইলেই আমার খোঁজ পাবে।

এবং এটা ভেবে পাষন্ডের মত মজা পাবে যে-

আমি তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি না।

সহস্র বছরের অতীত কিংবা সহস্র বছরের ভবিষ্যৎ না ভেবে,

আমি তোমার কাছে কেবল আজকের দিনটাই চাই।

এই সুন্দর পৃথিবীতে কে কখন প্রস্থান করবে সেটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।

আমি কেবল তার কাছে-

তোমার আমার আজকের দিনটা চেয়ে নিয়েছি।"

আসিফের মুড়ি দোকানের সামনে চলে আসাতে তাড়াহুড়ো করে কবিতাটা শেষ করলো সাফায়েত। তারপর রিকশাভাড়া মিটিয়ে আসিফের দোকানের সামনে যেতেই আসিফের চিনতে একটু দেরী হলো না।

: আরে কি খবর ভাইজান? কই ছিলেন এতদিন। দুইজনরে তো বেশ মানাইছে। বিয়ে-শাদী করলেন কবে? আপনারে নিয়া কত মার্কেটিং করছি। মাগার আপনার কোন খবরই নাই।

: মার্কেটিং? কিসের মার্কেটিং?

: আরে যারা মুড়ি খাতি আসে, সবাইরে তো কই যে এখনকার যে জনপ্রিয় লেখক সাফায়েত ভাই, হেই আমার এখানে মুড়ি খাতি আসে। আপনি তো ধরেন আমার এই মুড়ির দোকানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। সকাল সকাল কই থাইকা আইলেন। কি মুড়ি খাইবেন কন।

: একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করলে কিভাবে উত্তর দেবো আসিফ ভাই। একটা একটা করে বলেন।

: ছি ছি লজ্জা দিয়েন না। অনেকদিন পর দেখা হয়েছে তো, আবেগে বেশি কথা বলে ফেলেছি।

: আমরা বিয়ে করিনি। এতবছর পৃথিবীর বাইরে ছিলাম। হঠাৎ পৃথিবীতে এসে আপনার মুড়ি মাখা খেতে ইচ্ছে হলো। তাই সকাল সকাল চলে এলাম।

: কনে ছিলেন এতদিন?

: বললাম না, পৃথিবীতে ছিলাম না। অন্য গ্রহে ছিলাম।

: সকাল সকাল মজা নিয়েন না তো।

: আপনার খবর কি বলেন। আপনার সেই প্রেমিকার কি খবর?

: পেমিকা মুড়ি খেয়ে টাকা দিত না। আমার সাথে পল্টি মেরেছে। এই গল্প কি করিলাম।

: হ্যাঁ বলেছিলেন।

: তাহলে এখনকার গল্প আলাদা। এক গল্প কাস্টমার বেশিদিন খাইতে চায় না। তাই নতুন গল্প বানাইছি।

: কি গল্প?

আরে সাফায়েত ভাই, আপনে গল্প লিখে আজকে সেলিব্রেটি। আমার এই গল্প আপনার ভালো লাগবো না। আপনি মুড়ি খান। - এই বলেই দুজনকে দুই প্লেট কলিজা মুড়ি দিলো আসিফ।

 

আচ্ছা আমার সাথে দূরত্বের পর কখনো মেঘবতী গিয়েছো? - মুড়ি খেতে খেতে সাফায়েতকে প্রশ্ন করলো নবনীতা ।

যাওয়া হয়নি। তবে মেঘবতী আর তোমার আমার নৌকা বিলাস ভেবে বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলাম। - উত্তর দিলো সাফায়েত।

বাহ, আমি না থেকেও তোমার কবিতা হতে পেরেছি। - জোর করে হাসার চেষ্টা করলো নবনীতা।

:         অবশেষে একটা কবিতার মৃত্যু হল।

কবির কবিতা কবিকে বললো-

সে আর ছন্দ হতে রাজি নয়।

ব্যাচ, মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল সব ছন্দ।

কবিতার লাইনগুলো অদৃশ্য হল।

তুমি ভালো থেকো কবিতা।

তুমিও ভেবে নিও এ কবির মরণ হয়েছে।

যে কবি তোমায় নিয়ে কবিতা লিখতে ব্যকুল থাকতো।

মাঝ রাতে এই কবি-

তোমাকে আর বিরক্ত করবে না।

জোর করে তোমাকে রাত জাগিয়ে-

নিরামিষ কন্ঠে তোমায় কবিতা শোনাবে না।

শত বৃষ্টিতেও এখন আর-

এ কবি প্রেমে ভিজবে না।

কবিতার সাথে মেঘবতীতে আর ভাসবে না নৌকায়।

তুমি ভালো থাকো কবিতা।

আজ একটা মৃত্যু হল।

কবিতার। অথবা কবির।

No comments

Powered by Blogger.