Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২১

 
Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২১

২০০৫  সালের কোন একটা দিন।  এক সন্ধ্যায় ওদের দেখা করার প্লান করা ছিল আগে থেকেই। টিউশনি শেষ করে ক্লান্ত নবনীতা এসেছে। ছিমছাম পোশাকের সাথে স্টুডেন্টের বাসা থেকে নিজেকে একটু পরিপাটি দেখানোর জন্য এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে লিপস্টিকটা দিয়েছে কেবল। আর একটা টিপ। রিক্সায় আসতে আসতে চুড়ি পরেছিল। প্রেমিকের সাথে দেখা করা যেন প্রেমিকার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে একটা। আর ক্লাস শেষে রুমে গিয়ে নতুন উপন্যাসের কিছুটা অংশ লিখেই সাফায়েত বেরিয়ে পড়েছিল প্রেমিকা নবনীতার সাথে সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটাবে বলে। জিন্সের সাথে শার্ট ওর নিয়মিত পোশাক, আর এলোমেলো চুল যেন ওর পরিচিতি। দূর থেকে ওর চুল দেখলেই সবাই চিনতে পারে। আজকে কোথায় ঘুরতে যাবে সেটা নবনীতার ঠিক করার কথা। এসব ভেবে সাফায়েত ওর মাথা নষ্ট করতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট থেকে রিকশা নিয়ে দুজন মিলে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলো গোলাপপুরের স্ট্রিট ফুড খেতে যাবে। নবনীতা ওর এক বন্ধুর থেকে শুনেছিল ওখানকার কলিজা দিয়ে মুড়ি মাখানো টা বেশ মজার। সেই সাথে বিভিন্ন পদের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠাটাও নাকি খাওয়ার অনেকক্ষণ পরেও ঠোঁটে-জিভে লেগে থাকে। সন্ধ্যার শহরের হরেক রকম রঙিন বাতিও সাফায়েতের  চোখে ফিকে হয়ে যায় নবনীতার হাসিমুখ দেখে। এই মুখেই যেন লেপ্টে আছে সহস্র আলোকচ্ছটা। এই মুখেই যেন লুকিয়ে আছে সহস্র কবিতার সারসংক্ষেপ। সময় নিয়ে সেসব খুঁজে বের করে লেখাটা বাকি মাত্র। সেদিনের ঠান্ডা হাওয়ার শহরে সাফায়েতের  একটা চাদর ভাগ হয়েছিল ওদের দুজনাতে। কবি সাফায়েতের যুক্তি- প্রতিটা প্রেমিক নাকি রিক্সাতে তার প্রেমিকার সিটবেল্ট হিসেবে কাজ করে। প্রেমিকা সাবধানে বসতে পারবে না এই অজুহাতে প্রেমিকাকে শক্ত করে ধরে রাখে এই শহরের প্রায় সব প্রেমিক। কি অদ্ভুত ব্যাপার, প্রেমিক ছাড়া জীবনের একটা বিরাট সময় পার করে আসা প্রেমিকা গুলো প্রেমিকের সাথে রিকশায় উঠলে নাকি সাবধানে বসতে পারে না। এই শহরের অজুহাত গুলো ধুলো হয়ে উড়ে গিয়ে, প্রেমগুলোর নেমে আসা দরকার বৃষ্টিতে, ঠাণ্ডা হাওয়ায় কিংবা রোদের তাপে।

ওখানে কি বাকরখানী পাওয়া যাবে? - প্রশ্ন করলো সাফায়েত।

তা তো জানি না। তবে যেতে পারে। - উত্তর দিলো নবনীতা।

গরম চায়ে বাকরখানী চুবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে হঠাৎ করে। - বললো সাফায়েত।

বেশ। যদি বাকরখানী পাওয়া যায় তবে তোমার এই ইচ্ছেটা পূরণ করবো। - সাফায়েতের ইচ্ছাকে সমর্থন জানালো নবনীতা।

আচ্ছা, বলো তো বাকরখানী নামটা কিভাবে এসেছে? - প্রশ্ন করলো সাফায়েত।

কিভাবে? - পাল্টা প্রশ্ন করলো নবনীতা।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

: বাকরখানি তৈরির পেছনে রয়েছে এক অমর প্রেমকাহিনী। আগা বাকের নামে তুর্কিস্তানের এক বালক ক্রীতদাস হয়ে এসেছিল এই দেশে। তখনকার বাংলার সুবেদার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ সুদর্শন এই বালককে কিনে নিয়েছিলেন। আগা বাকেরের বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে নবাব তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। আগা বাকের প্রথমে চট্টগ্রামে ফৌজদারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি বাকলা চন্দ্রদ্বীপের শাসনকর্তা ছিলেন। তার নামানুসারেই বাকেরগঞ্জ জেলার নামকরণ হয় যাকে আমরা এখন বরিশাল নামে চিনি। আগা বাকের ভালোবেসেছিলেন সুন্দরী নর্তকী খনি বেগমকে। তার প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্ব্বী ছিলেন কোতয়াল জয়নুল খাঁ। এই নর্তকীকে ঘিরে আগা বাকের ও জয়নুল খাঁর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এই দ্বন্দ্বের কারণে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বাকেরকে এক বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করেছিলেন। শক্তিধর বাকের বাঘকে হত্যা করে খাঁচা থেকে বীরের মতো বেরিয়ে এসেছিলেন। ততক্ষণে খনি বেগমকে অপহরণ করে দুর্গম চন্দ্রদ্বীপের গহীনে পালিয়ে গিয়েছিলেন জয়নুল খাঁ। আগা বাকের প্রেমিকাকে উদ্ধারে চন্দ্রদ্বীপে উপস্থিত হলে জয়নুল খাঁ খনি বেগমকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। খনি বেগমকে না পেলেও প্রেমের স্মৃতি চিরজাগরুক রাখতে আগা বাকের নতুন ধরনের শুকনো রুটি তৈরি করিয়ে তার নাম দিয়েছিলেন বাকেরখনি। পুরান ঢাকার প্রখ্যাত লেখক নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ গ্রন্থেও বলা হয়েছে এ কথা। সাধারণ মানুষের উচ্চারণে যা আজ বাকরখানি হয়ে গেছে।

কবি, লেখকের সাথে প্রেম করলে নিজেরও জ্ঞান বাড়ে। - হাসিতে ধন্যবাদ জানালো নবনীতা।

 

আচ্ছা শোনো, গোলাপপুর থেকে পেট পূজো সেরে ক্যাম্পাসে আমরা হেঁটে আসবো। - প্রস্তাব করলো সাফায়েত।

মানে? তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? - নবনীতার চোখ যেন কপালে।

প্রেমে পড়লে সবাই একটু আধটু পাগল হয়। এটা নতুন কিছু না তো। - হেসে উড়িয়ে দিলো সাফায়েত।

তাই বলে গোলাপপুর থেকে ক্যাম্পাস? রিকশায় যেতেই তো প্রায় ঘন্টা খানেক সময় লাগবে। হেটে ফিরলে কি আদৌ আজকে পৌঁছাতে পারবো? - নিজের যুক্তি দিলো নবনীতা।

তোমার সাথে তোমার প্রেমিক আছে মেয়ে। পথ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলেও তোমার আপত্তি কিসের? - রায় নিজের দিকে রাখতে সাফায়েতের  সুক্ষ্ণ চেষ্টা।

আপত্তি নেই। তবে তোমার কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে। - কৌশলী উত্তর দিলো নবনীতা।

আমার কিছু হবে না। তুমি হাঁটতে পারবে তো? - জানতে চাইলো সাফায়েত।

No comments

Powered by Blogger.