Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৮

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৮

: পাঁচটা বছর একেবারে কম সময় না। ক্যাম্পাসে পরিচয়, এরপর এই বাদামতলা, উদ্যানের জারুলতলা, মেঘবতীতে নৌকায় ভেসে বেড়ানো কিংবা গোলাপপুরে আসিফ ভাইয়ের মুড়ি মাখা সবখানে আমাদের অবাধ আড্ডা। দামি দামি ঝকমকে রেস্টুরেন্ট থেকে ফুটপাতের হোটেলগুলোতে আমাদের প্রেম জমতো বেশ। যদিও বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের খাবারের অফার খুঁজে বের করে তোমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে খেতে যেতাম। তবে তুমি খুব একটা যেতে চাইতে না। মুন্সিবাড়ির চরে ঘুরতে গিয়ে একবার আমি চোরাবালিতে পড়ে গিয়েছিলাম। আমাকে বাঁচাতে এসে তুমিও প্রায় কুপোকাত। তারপরও নিজেকে সামলে চোরাবালি থেকে আমাকে টেনে তুললে একাই। আমাকে টেনে বের করলে ঠিকই তবে চোরাবালির নিচে আটকা পড়েছিল আমার পছন্দের জুতা। তারপর আমার মন ভালো করতে চোরাবালির নিচ থেকে টেনে বের করলে সেটাও। একটু দূরে জমে থাকা কুয়ার পানিতে ধুয়ে দিলে আমার গায়ে লেগে থাকা কাঁদা। সেই প্রেমের শুরু থেকেই তুমি খুব কেয়ারিং, মানতেই হবে। রিক্সায় চড়ে স্কুল কলেজ পার করা মেয়েটা ভার্সিটিতে উঠে তার প্রেমিকের থেকে শুনলো সে নাকি একা একা চলতে পারে না। আমি রিক্সায় ঠিকমত বসতে পারিনা। এমন অজুহাতে আমার প্রেমিক কবি আমাকে রিক্সায় ধরে রাখতো। আর বলতো, প্রতিটা প্রেমিকই রিক্সায় তার প্রেমিকার সিট বেল্ট হিসেবে কাজ করে। কথাটা অবশ্য দারুন লেগেছিল। ক্যাম্পাসের লেবু পিনিক, লেবু চুর, মুড়িমটকা আজব আজব নামের সব খাবার হজম করেছি, মুখস্ত করেছি তোমার সাথে প্রেমের দিনগুলোতে। পাঁচ বছরের সম্পর্কে ক্যাম্পাসে সবাই আমাদেরকে সেরা জুটি হিসেবে সম্বোধন করতো। আমাকে অবশ্য অনেক মেয়ে হিংসাও করতো কবি সাফায়েতের প্রেমিকা হওয়ার জন্য। ওসব নিয়ে যদিও আমার মাথা ব্যাথা কখনোই ছিল না। দশ টাকার বাদাম আর দশ টাকার বুট কিনে আমাদের একটা আস্তো বিকেলের প্রেম হয়ে যেতো। কখনো কখনো খাবারের তালিকায় হাওয়ায় মিঠাও যোগ হতো। আমাদের সেই সাদাসিধে প্রেমে আমি যেমন খুশি ছিলাম, তেমনি তুমি তোমার সাবলীল প্রেমের কবিতায় ডুবতে পারতে। আমাদের সেই প্রেমের সময়গুলো নিয়ে তুমি অনেক প্রেমের কবিতা লিখেছিলে সেসময়। সেসব কবিতার অংশবিশেষ কেউ যখন সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে, দেখলেই নিজের ভেতরে একটা অনুভূতি নাড়া দেয়। প্রেম নিবেদনের উন্মাদনায় তাদের সেই পোস্ট পড়ে আমি মনে মনে হাসি, এই আমাকে নিয়ে লেখা ছিল কবির এসব লেখা। বিলবোর্ডে তোমার ছবি দেখে এখন তোমার আর আমার মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারি। তুমি তো এখন সেলিব্রেটি। - আর কিছু বলতে পারলো না নবনীতা।

লেখক কখনো সেলিব্রেটি নন। সেলিব্রেটি হতে হলে পারফর্ম করতে হয়। লেখালেখি পারফর্মিং আর্টের মধ্যে পড়ে না। এ কারণে চিত্রশিল্পীরাও সেলেব্রেটি নন, কারণ তারা পারফর্ম করেন না। আমি পারফর্ম করি না। আর কোনো লেখক যদি নিজেকে সেলিব্রেটি ভাবে, তাহলে বুঝতে হবে সে আসলে লেখা বাদে পারফর্ম করতে শুরু করে দিয়েছেন! - নবনীতাকে থামিয়ে উত্তর দিল সাফায়েত।

 তুমি বড় মাপের একজন মানুষ। তোমার অবস্থান কত্তো উপরে! আর আমি কত ছোট তোমার কাছে। অথচ আজো ঘুরে ফিরে দুজনেরই এই একই শহরে বসবাস। - এবার বাকি কথা সারলো নবনীতা। নিজেকে যেন আর লুকাতে পারছে না নবনীতা ।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

কে আমাকে কিভাবে ভাবে সেসব ভাবার সময় পাইনা আসলে। সারা দিনের ব্যস্ততার পর যখন ঘরে ফিরি তখন যেন আমি নিজেকে আবিষ্কার করি আমার মত করে। আমারও তো মন আছে, আবেগ, অনুভূতি, কষ্ট, স্মৃতি আছে। সেগুলো আমাকে খুব কাঁদায়। আমার বাসা টা কেমন জানো? বিশাল বড় বড় জানালার সাথে বিশাল একটা রুম। বারান্দা যেন ফুলের বাগান। নয়নতারা, অপরাজিতা, পর্তুলিকা, গাঁদা, পুদিনা, তুলসী গাছ আছে। এত বেশি চা খাই, পুনিদা তুলসী গাছ রেখেছি সেজন্যই। বলতে পারো স্বাস্থ্য সচেতন। ছোট্ট একটা দোলনাও আছে। মাঝে মাঝে নিজে নিজে চা বানিয়ে দোলনায় বসে চা খাই, কবিতা লিখি। চিনতে পেরেছো বাসাটা? - নিজের বাসা, বারান্দার গল্প বলছে সাফায়েত।

মনে পড়ে গেলো, ঠিক এমন একটা গোছালো বাসার স্বপ্ন ছিল আমাদের। তোমার সাথে এমন একটা সুন্দর গোছালো বাসায় টোনাটুনির মত সংসার করার কি দারুণ একটা স্বপ্ন ছিল আমার মধ্যে! বড় একটা বেডরুম হবে। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বিশাল জানালা থাকবে। বারান্দা ভরা গাছ থাকবে। বারান্দায় একটা দোলনা থাকবে। পরিপাটি একটা রান্নাঘর থাকবে। আমি চা বানিয়ে বারান্দায় আসবো। তারপর দুজন মিলে দোলনায় দুলে চা খাবো। তুমি আমায় শোনাবে তোমার লেখা নতুন কোনো সৃষ্টি। আমি অবাক দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রবো আমার ব্যক্তিগত কবির দিকে। লেখালেখির জন্য তোমার আলাদা একটা ঘর থাকবে। তিন দেয়ালে থাকবে বইয়ের মিছিল। আর অন্য দেয়ালে তোমার সব অর্জন। বেডরুমের দেয়ালগুলো আমি আমাকে নিয়ে তোমার লেখা প্রেমের কবিতা লিখে ভরিয়ে ফেলবো। আমাদের ছোট একটা সংসার হবে এই শহরে। - নবনীতার চোখে যেন হঠাৎ ই ধরা দিলো বহু বছর আগের পুরনো সেই স্বপ্ন। আহা জীবন!

No comments

Powered by Blogger.