Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৭

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৭

এটা কি এক অদ্ভুত ব্যাপার তাই না! শুনেছি অনেকগুলো বছর পর পর প্রকৃতি আবার আগের নিয়মে ফিরে আসে। দশ বছর আগের কোনো একটা সময় আমি তোমার সাথে চা খেতে চেয়েছিলাম। আর দশ বছরের ব্যবধানে তুমি এই মানুষটার সাথে চা খাচ্ছো। এর মাঝে বহুবার আমাদের চা খাওয়া হয়েছে, আড্ডা হয়েছে, তবে সেই প্রথম দিন আর আজকের দিনটা বেশ অদ্ভুত। - ভেতরে ভেতরে লজ্জাতে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া নবনীতা বারবার নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করছে। তবে প্রতিবারই কবি সাফায়েতের চোখে ধরা পড়ে যাচ্ছে। তারপর বলো, কেমন চলছে তোমার এখনকার দিনকাল। - প্রশ্ন করলো নবনীতা ।

এই তো বেশ আছি। তোমার চোখে আমার সেদিনের পাগলামি আজ পেশা হয়ে গেছে। এখন আমি গল্প কবিতা লিখেই খাই। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অনেক কিছুই লিখি, লিখতে হয়। লেখার মাঝে প্রশান্তি খুঁজে পাই। - উত্তর দিলো সাফায়েত।

হ্যাঁ, তুমি তো এখন বড় মাপের কবি। তোমাকে সব জায়গাতে পাওয়া যায়। না চাইলেও তোমার খোঁজটা নেওয়া হয়। তবে চাইলেও আগের মত তোমায় ছোঁয়া যায় না। স্যোশাল মিডিয়ায় কত শত মেয়ে তোমার লেখা দিয়ে ছবির ক্যাপশন দেয়, স্টাটাস দেয়। তখন তোমার আইডিতে গিয়ে তোমায় দেখি। তোমার ছবি দেখে বুকের মাঝে একটা চাপা হাসি দোল খায়। আর ভাবি এই মানুষটার সাথে আমার দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিল। এই শহরের অলিগলি দাপিয়ে বেড়াতাম আমরা। শহরের আনাচে-কানাচে, ফুটপাতে, প্রাচীরে যেন আমাদের প্রেমের কাব্য লেখা। সেসব এখন কেবল আমার মনের মধ্যে পুষে রাখা স্মৃতি। কাউকে বলতেও পারি না। অবশ্য কাউকে বললে কেউ বিশ্বাসও করবে না। আমাকে পাগল ভাববে। বা ভাববে আমি মিথ্যা বলছি। কোথায় তুমি আর কোথায় আমি। এটা ভাবার সাহসটাই তো আমি হারিয়ে ফেলেছি। তোমার লেখালেখির জন্য আমি তোমাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম। তাই আজ তোমার লেখালেখি নিয়ে সাফল্যে আমি আনন্দ প্রকাশ করতে লজ্জা পাই। তবে মনে মনে খুব খুশি হই।

: যাক, তাও মনে তো রেখেছো।

: তোমার মনে আছে তোমার পারফিউমের গন্ধ আমাকে কেমন উন্মাদ করে দিতো।

: তোমাকে নিয়ে আমার হাজারটা স্মৃতি আছে। আমি এখন এক নিঃশ্বাসে সব বলে দিতে পারবো। আর এত সুন্দর স্মৃতিটা কি করে ভুলে যাই বলো তো।

: প্রেমের কবি সাফায়েত আমাকে প্রায়ই প্রেমপত্র দিতো।

: কতটা প্রেমপত্র দিয়েছিলাম বলতো?

: সঠিক সংখ্যা তো জানিনা। তুমি এত এত চিঠি দিতে, এক সময় চিঠি গুনে রাখা ই বাদ দিয়েছিলাম। তবে তোমাকে গুণে গুণে দুইশো উননব্বইটা চিঠি দিয়েছি।

: বাবাহ, তুমি গুণে রেখেছো!

: তোমাকে যতবার চিঠি দিয়েছি, ডায়েরীতে দাগ দিয়ে গুণে রেখেছি। তোমার সাথে বিচ্ছেদের পর সেগুলো যোগ করেছি। দুইশো উননব্বইটাতে এসে থেমেছে আমার প্রেমপত্র লেখা।

: আফসোস, সেই সুন্দর দিনগুলো আমি হারিয়ে ফেলেছি।

: তোমার পারফিউমের গন্ধ আমার ভালো লাগতো বলে তোমার লেখা প্রেমের চিঠিতে পারফিউম মাখিয়ে খামবন্দি করে দিতে আমার কাছে। আর খাম খুলতেই আমি যেন আমার প্রেমিকের নিজস্ব গন্ধ পেতাম।

: সেই পাগলামির কথা মনে আছে?

: পাগলামি তো কতই করেছি। কোনটার কথা বলছো? ওই যে আমাকে একটা বই উপহার দিলে। কি জানি নাম, ওহ, মনে পড়েছে। হুমায়ুন আহমেদের দেয়াল ।  বইয়ের প্রতিটা পাতাতে পারফিউম মাখিয়ে দিয়েছিলে। যেন আমি বই পড়ছিলাম না, তোমার গন্ধ নিয়ে তোমাকে পড়ছিলাম।

: আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর এতকিছু কেন মনে রেখেছো? আর যদি মনেই রাখো তাহলে ছেড়ে গেছো কেন ?

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

: ঠিক তোমার এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার মতো সৎ সাহস আমার নেই বলেই অসহায়ের মত আমি এতগুলো বছর লুকিয়ে বেঁচেছি। তুমি না চাইলে হয়তো আজকের এই দিনটাতে তোমার সাথে আমার দেখাও হতো না। কারণ তোমার সামনে দাঁড়াবার মত মুখ আমার নেই এখন। সেদিনের হাসি খুশি অভিমানী প্রেমিকা আজ জীবন যুদ্ধে ভেঙে পড়া নির্জীব হয়ে জীবনের স্রোতে বাধ্য হয়ে ভেসে থাকা এক বিধবা নারী।

: দেখো আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে চাইনি। আজকে তোমার জন্মদিন। এভাবে আর কথা বলোনা। আমাদের প্রেমের এতগুলো বছর গেছে। আমাদের কথা বলার মত হাজারটা বিষয় আছে। এই একটা ব্যাপারে আটকে থেকে মন খারাপ করে আজকের দিনটা নষ্ট করো না।

: তোমাকে ফেলে এভাবে চলে যাওয়ার পরও আমাকে ভালোবাসতে তোমার এত রুচি কেন?

: চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়। চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী। চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে। জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে। জীবন সুন্দর। আকাশ-বাতাস পাহাড়-সমুদ্র সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর। আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা। তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়!

: বাহ, দারুণ বলেছো।

: কথাগুলো রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর লেখা। তবে আমার কথাগুলোর সাথেও মিলে যায়। তুমি এখন আমাকে, তোমার সেই সময়ের কবি প্রেমিকটাকে একটুও ভালোবাসো না নবনীতা?

: ভালবাসার সময় তো নেই। ব্যস্ত ভীষন কাজে, হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে। ঘামের জলে ভিজে সাবাড়, করাল রৌদ্দুরে। কাছে পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে। কাজের মাঝে দিন কেটে যায়, কাজের কোলাহল। তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।

: বাহ, তুমি দেখছি আমার অভাবে রুদ্রকে রপ্ত করেছো।

No comments

Powered by Blogger.