শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৬
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৬
প্রায় দশ বছর আগের কথা। দশ বছর, একেবারর
কম সময়ও নয় কিন্তু। তবে এতগুলো বছরে অনেক কিছু বদলালেও তোমার স্মৃতিশক্তিটা সেই আগের
মতই আছে দেখছি। স্মৃতি রোমন্থনে একটুও এদিক
ওদিক হয়নি তোমার আমার প্রেমের সেই সুন্দর গল্পটা। - কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে কথা
বলা শুরু করলো নবনীতা ।
হয়তো কেবল তুমি আর আমি জানি যে এটা আমাদের
প্রেমের গল্প। সে গল্পের বাস্তব দুটো চরিত্রই আমি আর তুমি। জীবনের গল্প নিজেদের হয়।
আর বইয়ের গল্পগুলো হয় পাঠকের। বইয়ের শক্ত মলাটের ভেতরে আমাদের গল্পটা পাঠকের কাছে অসমাপ্ত
প্রেমের গল্প মাত্র। ভাবছি এবার আমার গল্প লিখবো। কল্পনাতে আসা চরিত্রগুলো সাজিয়ে আমার
লেখা অনেক কবিতা, উপন্যাসই তো জনপ্রিয় হলো। হয়তো আমার নিজের গল্পটা এর আগের আমার সব
সৃষ্টিকে ছাড়িয়ে যাবে। গল্পটার নাম কি দেবো সেটা এখনো পুরোপুরি ঠিক করিনি। হতে পারে
"প্রাক্তন"। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেখানে কেবল তোমার আর আমার বিচরণ
থাকবে। গল্পের চরিত্রগুলোর নাম ভিন্ন হলেও সেখানে তোমার আমার ছায়া থাকবে। পাঠকের কথা
ভেবে কিছু ঘটনা অতিরঞ্জিত করে ফুটিয়ে তুলতে হবে। কিছু ঘটনা বাদ দিতে হবে। তবে তুমি
জানবে, গল্পটা তোমাকে নিয়েই সাজানো। যদিও তাতে তোমার কোনো আপত্তি কিংবা মাথাব্যাথা
থাকবে না। আর থাকলেও আমি এখন মুখ বুজে মেনে নেবার পাত্র নই। - নিজেদের রেখে আসা প্রেমের
সময়টা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানালো সাফায়েত।
এতগুলো বছর পর তুমি আমাকে কিভাবে খুঁজে
পেলে? আর এতগুলো বছর পর আমাকে খুঁজে পেতে রুচি হলো তোমার? আমার জন্য তোমার ভেতরে ঘৃণ্যা
নেই? - সাফায়েতকে প্রশ্ন করলো নবনীতা ।
প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহূর্ত মনে মনে
তোমাকে খু্ঁজে বের করার একটা চেষ্টা করতাম। তবে এতগুলো বছরের প্রতিটা সন্ধ্যায় কাজ
শেষে ক্লান্ত আমি ব্যর্থতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। আমার সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে জেদ করে তুমি
হঠাৎ ই বিয়ে করে নিলে। আর তারপর কোথায় যেন হারিয়ে গেলে ইচ্ছে করেই। তোমার আমার স্মৃতিমাখা
জায়গাগুলো ছেড়ে নতুন কোনো জায়গাতে সংসার বাঁধলে। যৌবনে তুমি আমার প্রেমিকা ছিলে, আজ
অন্যকারোর বউ। দুজন নাকি দুজনকে ছাড়া বাঁচবো না। অথচো এখনো মরিনি কেউ। আমার কোনো অভিযোগ
নেই। সময় কিংবা তোমার নিজের প্রয়োজনে, তোমার নিজের জন্য যেটা ভালো মনে হয়েছে তুমি সেটাই
করার সিদ্ধান্ত নিয়েছো মাত্র। হয়তো তোমার দিক থেকে তুমি ঠিক করেছিলে। আমার কথা ভাবার
থেকে নিজের কথা ভাবাটা তোমার কাছে তখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একজন খুনিও তার খুনের
পক্ষ্যে দশটা যুক্তি দিতে পারবে। তার যুক্তিতে সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে।
দুনিয়ার যেকোনো কাজ ই কারো কাছে ভালো কাজ, কারো কাছে খারাপ কাজ। তোমার এই হারিয়ে যাবার
পর এতগুলো বছর তোমাকে খুঁজেছি। আমাদের প্রেমের সাক্ষী উদ্যানের জারুল তলা, চায়ের আড্ডার
বাদামতলা, আসিফ ভাইয়ের মুড়ি মাখার দোকানে আমাদের বিশেষ দিনগুলোতে গিয়েছি। যদিও নিজেকে
লুকিয়ে রাখতাম। যেন কেউ না চিনতে পারে। আমার বর্তমান অর্জন আমাকে এভাবে লুকিয়ে রাখতে
বাধ্য করে। সারাদিন বসে থেকেও তোমার দেখা পাইনি। তুমি আমার কাছে এক অধরার নাম হয়ে উঠলে।
কদিন আগে একটা বৃষ্টিভেজা দুপুরের অলস সময়ে জনপ্রিয় রেডিও প্রোগ্রাম কথার কথা শুনছিলাম
প্রথম বারের মত। তোমার ছদ্মনামটা সুন্দর। আমার লেখা গল্পের নায়িকার নামটা নিয়েছো নিজের
নাম লুকাতে। কথা। আমার গল্পের নায়িকার নাম, সেই সাথে খুব চেনা কণ্ঠ। এক আর এক দুই মিলিয়ে আমি আবিষ্কার
করলাম সময়ের জনপ্রিয় রেডিও প্রোগ্রাম কথার কথার আরজে আমার খুব চেনা, একসময়ের খুব কাছের
কেউ। যার আসল নাম নবনীতা। তারপর ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে তোমাকে খুঁজে বের করে এক সপ্তাহ
অপেক্ষা করেছি আজকের দিনটার জন্য। কারন আজ তোমার জন্মদিন। তোমার জন্মদিনের দিনে তোমার
সামনে আসলে তুমি আমাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না এটুকু বিশ্বাস আমার ছিল। প্রেমের সময় তোমার
প্রতি জন্মদিনে তুমি আমার কাছে আমার পুরো দিনটা চাইতে। আর আজ আমি তোমার কাছে তোমার
দিনটা চাইলাম। - যেন সব কাজ ফেলে সারাদিন দুজনের একসাথে সময় কাটানোর জন্য রাজ্যের আবদার
করে বসলো সাফায়েত।
এতগুলো বছর পরও তুমি স্বার্থপর আমার
জন্মদিনটা ভোলোনি। তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না কবি। তবে তুমি আজ অনেক বড় মাপের
কেউ হয়ে উঠেছো। আমি থাকলে হয়তো সেটা পারতে না। আমি তোমার জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলতাম।
আর বিশেষ দিনের কথা বললে না, বিশেষ দিনে আমাদের স্মৃতিমাখা জায়গাগুলোতে যেতে সাহস পেতাম
না, যদি তোমার মুখোমুখি হতে হয়! কারণ তোমার মুখোমুখি হবার সাহস আমার নেই। আর আজ যেটা
হয়েছে সেটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। এড়িয়ে যাবারও উপায় ছিল না। অবশ্য এড়াতে চাই
নি। সত্যি বলতে অনেকদিন ধরেই একটা প্রশান্তির
খুব দরকার ছিল। তুমি আমাকে স্বার্থপরও ভাবতে পারো। - হাসতে হাসতে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে
রেখে প্রতুত্তর করলো নবনীতা ।
No comments