Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৫

 

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৫

: সিম কোম্পানিগুলোর অফারের মত আমি যেন তোমাকে কেবল সেই একটা রাত পেয়েছিলাম। কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই তোমাকে নিয়ে যেন হাজারটা কৌতূহল জড়ো হয়েছিল আমার মনে। এক রাতেই যেন তুমি নামের বইটা পড়ে শেষ করার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। হাজারটা প্রশ্নে তোমাকে খুব বিরক্ত করেছিলাম সেই রাতে।

: সেদিনের রাতটা তোমার মনে পড়ে? জানো আমি এখনো প্রায় রাতে সেই রাতের কথা ভেবে একা একা বড্ড হাসি। যৌবন শুরুর সময়ে আমারও যে তুমি নামক একটা প্রেমিক ছিল, সেটা ভেবেই আনন্দ পাই।

: সময় কত দ্রুত চলে যায়, তাই না! দেখতে দেখতে প্রায় দশটা বছর চলে গেল। অর্ধেকটা সময় তুমি ছিলে। বাকি অর্ধেক সময়ে ছিলে না। তুমি আমার সঙ্গে থাকার সময়গুলো যতটা দ্রুত শেষ হয়েছে, তুমি না থাকার সময়টা ঠিক তার উল্টো।

: আমার জন্য মন খারাপ করে তোমার সময়টা নষ্ট করো না। তোমার মনটাকে এমন কিছুতে কাজে লাগাও যাতে তুমি আর দেশ দুটোই ভালো থাকে। তোমার জগতে আমি এখন নিতান্তই তুচ্ছ, অপ্রয়োজনীয়।

সম্পর্ক টিকবে কী টিকবে না আমরা আগে থেকে কেউই জানি না। তবুও ভালোবেসে ভরসা করে এগোই। কিছু সম্পর্ক টিকে যায়, পরিণতি পায়। কিছু সম্পর্ক চিরতরে হারিয়ে যায়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মানেই কি সেটা শেষ? মিথ্যে? কিছুই ছিল না? না ছিল। ভীষণ রকম সত্যি ছিল। মানুষটার সঙ্গে যেমন আমার খারাপ স্মৃতি আছে, তেমনি ভাল স্মৃতিও আছে। শুধু খারাপ মনে রেখে ভালোটাকে অবহেলা করি কী করে?

 

তারপর রাতে ওদের গুড নাইট ম্যাসেজ বিনিময়, সময়ের অবসরে কন্ঠ শুনতে, গল্প করতে ফোনালাপ। ইমিডিয়েট জুনিয়র হওয়াতে আর বন্ধুমহলে বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে সম্পর্কটার সম্মোধন খুব অল্প দিনের মধ্যেই আপনি থেকে তুমি হয়েছিল। ওরা যেন ওদের আস্তো জীবনের সুন্দরতম সময় পার করছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলোতে একসাথে থাকার সময়গুলো মুহূর্তেই পার হয়ে যায়। আর অদেখা সময় যেন যুগ যুগের সমান। এত বছরের সম্পর্কে ওদের হাজার ছাড়িয়ে লাখ লাখ স্মৃতি জমেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরপাড়, আনিস মামার চায়ের দোকান, লেকের জংপড়া ব্রিজটা, আমবাগান, সমাজবিজ্ঞানের সিঁড়ি আর ক্যাম্পাসের প্রেম রোড নামে জনপ্রিয় চারুকলার রাস্তাটা যেন ওদের প্রেমের সময়গুলোর সাক্ষী। মফিজ ভাইয়ের খুপড়ি দোকান ছিল ওদের কাছে সেভেনস্টার রেস্টুরেন্ট। ওরা যেদিন প্রথম রং মিলিয়ে নীল পাঞ্জাবি আর নীল শাড়ী পরেছিলো, দিনটা ছিল ১৫ মে। নবনীতার আসতে দেরি হয়েছিল পাক্কা দু'ঘণ্টা। আর এই দুইঘন্টা তে গুণে গুণে আট কাপ চা হজম


অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

করেছিলো সাফায়েত। নবনীতার প্রতি জন্মানো তীব্র ক্ষোভ, বিরক্তি মুহূর্তেই পানি হয়ে গিয়েছিল নবনীতা নামক দেবীটাকে সরাসরি দেখে। নীল শাড়ীতে সাফায়েতের  ব্যক্তিগত দেবী সেজে আসা নবনীতার সে কি নিরব আত্মসমর্পণ, শাড়ীর কুঁচি ঠিক করতে গিয়েই তার নাকি এই দেরি। অপরাধী কন্ঠে দেরি হবার শাস্তি নিতেও প্রস্তুত ছিল। সেদিন শাস্তি অবশ্য পেতেও হয়েছিল নবনীতাকে। নাট্যকলার পুরোটা পথ হেঁটে জামরুল গাছের নিচে শানবাঁধানো বেঞ্চে বসে রবী দার একটা গান শোনাতে হয়েছিল সাফায়েতকে। আমারো পরাণও যাহা চায়, তুমি তাই, তাই গো, আমারো পরাণও যাহা চায়। মানুষের সুখের সময়টা হয়তো খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না। আর দুঃখের সময়গুলোতে এই সুখের সময়ের স্মৃতিগুলো কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটার মতো মনে হয়। তবুও যেন কোথাও, কোনো এক কোণে অদ্ভুত রকমের একটা অমীমাংসিত ভালোবাসা, ভালোলাগা, সুখস্মৃতি বিরাজ করে। এই স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরেই মানুষ জাতি একটা আস্ত জীবন পার করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলার এটা একটা কারণ হতে পারে।

পুরো ক্যাম্পাস ততদিনে সাফায়েত আর নবনীতার প্রেমের কথা জেনে গিয়েছিল। ক্যাম্পাসের অনেক মেয়ের কাছে হিংসার পাত্রী হয়েছিল নবনীতা। হবেই বা না কেন? তরুণীদের পছন্দের সাফায়েত ভালোবেসেছে তাকে। কিছু মেয়ের বাঁকা দৃষ্টি তো হজম করতেই হবে। সে ব্যাপারে অবশ্য নবনীতা কিংবা সাফায়েতের  কখনোই কোনো মাথাব্যথা ছিল না। তারা তাদের মত করে তাদের সময়টাকে সর্বোচ্চ উপভোগ করেছে মাত্র। নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, নীল টিপ আর চোখে লেপ্টে থাকা কাজলের প্রেমে পড়ে নবনীতাকে নিয়ে সেদিন সাফায়েত একটা কবিতা লিখেছিল। আসলেই কবির প্রেমিকা হলে তার মৃত্যু নেই। এই যেমন নবনীতার সাথে প্রেম বিচ্ছেদের এত বছর হয়ে গেল তবুও কবি সাফায়েতের  কোন এক সৃষ্টিতে বেঁচে রইলো নবনীতা। কলমের শক্তি এখানেই, দেহের প্রস্থান ঘটলেও মানুষটাকে বাঁচিয়ে রাখে অনন্তকাল।

No comments

Powered by Blogger.