Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৪

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১৪

সেদিন বিকালে সাফায়েত নবনীতার চায়ের আড্ডা বেশ জমেছিল। ক্যাম্পাসের উঠতি সেলিব্রেটির সাথে কথা বলতে আসছে অনেকেই। নবনীতাও উপভোগ করছে সময়টা। ক্যাম্পাসের শিমুলতলার হাটে ওদের চায়ের আড্ডা হল। নবনীতা সেই প্রথম দিনেই জেনে গিয়েছিল সাফায়েতের চিনি কম খাওয়ার কথা। চায়ের প্রতি নবনীতারও দুর্বলতা থাকলেও সেই মুহূর্তে ওর ধ্যানজ্ঞান জুড়ে ছিল সাফায়েত। যে মানুষটা এত সুন্দর লেখে, সে তার লেখার মতই সুন্দর। কত সুন্দর, সহজ ভাবে কথা বলে। তার সাথে যে ই কথা বলতে আসছে, হাসিমুখে কথা বলছে সবার সাথে। প্রয়োজনবোধে সাফায়েত নবনীতাকে ওর বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। সেদিনের বিকালটা দুজনেরই মনে থাকার কথা। দুজনের প্রথম দেখা। এটা সহজে ভুলে যাবার মত ব্রেইন ওদের কারোর ই নেই। কে জানতো, সেদিন শিমুলতলার হাটে চিনি কম দিয়ে চা খাওয়া ছেলেটা আজকে সময়ের জনপ্রিয় কবি।

:  আপনার বইয়ের কবিতাগুলোর কোনো এক কবিতার প্রেমিকার সাথে আমার একটা মিল আছে।

: কি মিল?

: দুজনেরই নীল রং আর কাঠ গোলাপ ফুল পছন্দ।

: আরেহ, তাই নাকি?

: সেটাই তো বলছি। এজন্যই তো মনে হয় কবিতাটা আপনি আমাকে নিয়ে লিখেছেন। কবিতাতে আপনার রূপক প্রেমিকার দুটো পছন্দের সাথে আমার পছন্দ মিলে গেছে। আমি তো বিশ্বাস ই করতে পারছি না।

: যাক, অপ্রস্তুত ভাবে আপনার খুশির কারণ হতে পেরেছি।

: হ্যা সত্যি। আর এজন্যই ওই কবিতাটা সবচে বেশিবার পড়েছি। আর বারবার নিজেকে কল্পনা করেছি।

: আপনার এমন কল্পনা আমার সার্থকতা।

: আপনাকে ধন্যবাদ এত চমৎকার একটা বই আমাদেরকে উপহার দেবার জন্য।

: ছোটবেলা থেকেই আমার লক্ষ্য আমি বড় হয়ে লেখক হবো। সেই প্রস্তুতি থেকেই লেখা, বই বের করা। তবে প্রথম বইয়ে যে এত পরিচিতি পাবো সেটা ভাবিনি।

: লেখালেখিকে পেশা হিসেবেই নিবেন? নাকি শখ?

: পেশা হিসেবে নেবার ইচ্ছে আছে।

: চাকরি ব্যবসার এই যুগে আপনি বেশ সাহসী মনে হচ্ছে।

: অ্যারিস্টটলের একটা অমর বাণী আছে, ‘সাহস হচ্ছে মানুষের প্রথম গুণ যা অন্য সব অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে।’ সাধারণ মানুষ তাদেরকেই অনুসরণ করে যাদের সাহস আছে। সবার সাহস থাকে না। যাদের সাহস আছে, তারাই ঝুঁকি নিতে পারে। বিল গেটস আর তার বন্ধু সাহস দেখিয়ে ১৯৭৫ সালে স্কুল ছেড়ে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা না গড়লে পৃথিবী উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের দেখা পেত?

: নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস থাকা খুব দরকার। তাহলেই মানুষ সফল হবে।

: বিশ্বসাহিত্যের কৃতী পুরুষ ম্যাক্সিম গোর্কি কামারশালা, এমনকি জুতার দোকানেও কাজ করেছেন। কিন্তু এ আভিজাত্যহীনতা আপন প্রতিভাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। দুনিয়ার দেশে দেশে সাহিত্য জগতে গোর্কি এক জনপ্রিয় নাম। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের জন্য গোর্কি আজ বিশ্ব সাহিত্যের পরিচিত নাম।

বাড়িতে কে কে আছে আপনার? - জানতে চাইলো নবনীতা।

বাবা, মা, দাদী, ছোট ভাই আর আমি। বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এখন আজিজনগর বাজারে ব্যবসা করে। মা গৃহিনী। ছোট ভাই এবার ক্লাস নাইনে পড়ছে। আমার বাবার আর কোনো ভাইবোন নেই। দাদী ই আমাদের পরিবারের নিউক্লিয়াস। ছোটবেলা কেটেছে দাদীর কাছে গল্প শুনে। রাজা বাদশার গল্প, সুলতান সুলেমানের গল্প, ভূত, গোপাল ভাঁড়ের গল্প। তখন থেকে স্বপ্ন ছিল গল্পকার হবো। তাহলে আমার গল্পগুলোও থেকে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। - নিজের বাড়ির মানুষের কথা বললো সাফায়েত।

: বর্ষাকালে কণকডাঙা থেকে যাওয়া আসা করতে সমস্যা হয় না আংকেলের? পুরো রাস্তায় কাঁদা জমে থাকলে বললেন।

সমস্যা তো হয় ই। তবে ওই যে, অভ্যাস। আপনার বাড়িতে কে কে আছে। - এবার নবনীতার বাড়ির খবরাখবর জানতে চাইলো সাফায়েত।

: দুই বোন, বাবা মা। আমি বড়। প্রীতিলতা এবার কলেজে উঠলো। আমাদের জয়েন্ট ফ্যামেলি। বাবারা ৩ ভাই একসাথে থাকে। বাবা ছোট। বন্যাপুরবাজারে কাপড়ের দোকান আছে। তারা তিন ভাই একসাথে ব্যবসা করে। আমার দুই চাচার ছেলে। তাই বাবারও শখ ছিল তার ছেলে বাবু হবে। আমি মেয়ে হওয়াতে মাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল। আর আমার ছোটটাও মেয়ে হওয়াতে মাকে সবাই অলক্ষী বললো। মায়ের কষ্ট মা কখনো বুঝতে দেয়নি। বড় হবার পর আমি আর প্রীতিলতা ই নিজে থেকে বোঝা শুরু করেছি। আমার মায়ের নাম রাজিয়া সুলতানা। রাজিয়া সুলতানা কে জানেন?

: কে আবার, আপনার মা।

: না। রাজিয়া সুলতানা হলেন দিল্লির মামলুক সুলতানাতের শাসক।  তিনি ইসলামী জগতের প্রথম নারী শাসক। তবে তার শাসনকাল মাত্র চার বছরের। ১২৩৬ থেকে ১২৪০ সাল পর্যন্ত। তবে আমাদের বাড়িতে সেই একই নামের মানুষটাকে থাকতে হয় কাজের লোকের মত। 

একদিনে অনেক কিছুই জেনে গেলাম। কিছু গল্প জমিয়ে  না রাখলে পরে তো বোবা হয়ে বসে থাকতে হবে। কথা খুঁজে পাবো না। - নবনীতার মুখে গুমোট মেঘ দেখে প্রসঙ্গ বদলাতে থামিয়ে দিলো সাফায়েত।

: আচ্ছা, এবার আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেন তো। এত সব লেখা মাথায় আসে কি করে?

: একদিনে সব শুনে ফেললে তো নেক্সট আর দেখা করবেন না।

একদমে নিজের কনটাক্ট নাম্বার দিলো নবনীতা । - এটা আমার কনটাক্ট নাম্বার।

এত দ্রুত বললে তো মনে থাকবে না। শেষে দেখা যাবে রং নাম্বারে অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছি। - হাসতে হাসতে উত্তর দিলো সাফায়েত।

সাফায়েতের  হাতে ওর মোবাইলটা দিয়ে নবনীতা বললো - আপনার কনটাক্ট নাম্বারটা দিন। রাতে গুড নাইট ম্যাসেজ পাবেন। ওটাই আমার নাম্বার। এই বলেই একগাল হাসি দিলো নবনীতা।

: আপনি সবসময় হাসেন! এটা ভালো গুণ কিন্তু।

হ্যা, সব সময় হাসি। আমার হাসি রোগ আছে। - বলেই আবারো হাসলো নবনীতা।

: এই রোগটা কিন্তু দারুণ। সবাই হাসতে পারে না। এটাকে আমি রোগ না বলে গুণ বলি।

: আপনার এমন কোনো রোগ বা গুণ আছে নাকি?

: আমারটা রোগ, গুণ না?

: কি রোগ?

: ঘুম রোগ। সহজে ঘুম আসে না, আর ঘুমালে ভূমিকম্প হলেও টের পাই না। - বলেই সাফায়েত হো হো করে উঠলো।

: আপনিও অনেক হাসেন তো!

এটা সাফায়েতের সাথে নবনীতার দেখা হবার প্রথম দিনের ঘটনা। 

No comments

Powered by Blogger.