শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১২
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১২
আচ্ছা আপু, আপনি কি রাইটারের উপর বাকবকি
করে মাথাটা একটু ঠান্ডা করতে পেরেছেন? - নবনীতা কে প্রশ্ন করলো সাফায়েত।
হ্যাঁ। আপাতত ঠিক ঠাক। তবে উনাকে আমি
এখন সামনে পেলে আমিই সরাসরি খুব করে বকে দিতাম। - দম ছেড়ে ছেলেটাকে উত্তর দিলো নবনীতা
।
স্টলের ছেলেটা বইয়ের লেখক পরিচিতির ছবিটা
বের করে নবনীতা কে প্রতুত্তর করলো- আমার নাম ই সাফায়েত। আমিই এই বইয়ের রাইটার। আপনি
এতক্ষণ ঠিক মানুষটাকেই বকছিলেন। নুতুন করে আর বকা দিতে হবে না।
স্টলের ছেলেটার কাছ থেকে এমন কথা শোনার
জন্য নবনীতা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। অবাক বিস্ময়ে নবনীতার চোখ দুটো চঞ্চল হয়েছে। খুশিতে
আত্মহারা নবনীতা আনন্দে বেশ কয়েকবার লাফিয়েও উঠলো। তবে নিজের কাছে হঠাৎ ই মনে হচ্ছে
সে খুব অন্যায় করে ফেলেছে। মনের রাগ মেটাতে বইটার লেখককেই কিনা ইচ্ছামত বকে দিলো!
: ‘মন খারাপ, তুমি রাগ করেছো তাই।‘ এই
লেখা টা কেমন?
: চলো রাগ আর মন খারাপ একসাথে উড়াই।
: ও চোখে এত প্রেম জমেছে দেখছি।
আমায় তোমার প্রেম দেবে? আমি মন পেতে
আছি। - নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে কবিতার লাইনটা বলে পরিস্থিতি সামলে নেবার চেষ্টা
করলো নবনীতা। - আসলে আমি খুব সরি। আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। চিনলে হয়তো এত এত মন্দ
কথা আপনাকে হজম করতে হতো না। আপনি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করবেন।
না না। আমি কিছু মনে করিনি। - হাসিমুখে
প্রতুত্তর করলো সাফায়েত ।
তবে আপনি এখানে কেন? এখানে তো সেলসম্যানের
থাকার কথা। - এবার নিজের দোষ চেপে সাফায়েতকে প্রশ্ন করলো নবনীতা ।
সারাদিনই ছিল। মাত্রই একটু বের হল। তাই
আমি বসে আছি। তবে আমার ভাগ্য খারাপ নাকি ভালো জানি না সে যাবার পরপরই আপনি এসেছেন।
তবে ভালোই হয়েছে। প্রথমেই যদি জানতেন যে মনবন্দি বইটা আমার লেখা, তাহলে হয়তো এত স্বাধীন
মনে মন্তব্য জানাতে পারতেন না। আমার লেখা নিয়ে পাঠক কি ধরনের অনুভূতি পাচ্ছে, কি মন্তব্য
করছে সেটা জানতে আমি বরাবরই আগ্রহী। দিনশেষে আমিও চাই পাঠক হাজার লেখকের ভীড়ে আমার
বইটাও কিনে পড়ুক। আমার বই পড়েও ভাবুক, কল্পনা করুক, মজা পাক। সমালোচনা করুক। - ছোট
প্রশ্নের অনেক বড় উত্তর দিলো সাফায়েত।
না না, আমি আপনার লেখা কবিতাগুলো পড়ে
মজা পেয়েছি সেটা সত্যি। তবে কিছু কিছু কবিতা পড়ে নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো
কবিতার কথাগুলো আমার। আমি কাউকে বলতে পারছি না। জানেন গতকাল রাতে আমি খুব কেঁদেছি।
এমন আচোরণের জন্য আমি আপনাকে সরি বলছি ঠিকই। তবে আমাকে কাঁদানোর জন্য আপনাকেও সরি বলা
উচিৎ। কারণ আপনার লেখা দিয়ে আপনি আমাকে কাঁদিয়েছেন। - নবনীতা উত্তর দিলো।
আচ্ছা আচ্ছা। আমি অনেকগুলো সরি আপনাকে
কাঁদানোর জন্য। আমার নেক্সট গল্পে আমি আপনার চোখের জলের কথা ভেবে লিখবো। - প্রতুত্তর
করলো সাফায়েত।
না না। আমি আপনাকে সেটা বলছি না। আপনি
আপনার মত করেই লিখবেন। একজন পাঠক কি মন্তব্য করবে সেটা না হয় পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিন।
আপনি তো আর সব পাঠকের মন রাখতে পারবেন না। লেখার প্রয়োজনে তার স্রষ্টা তার ইচ্ছে মত
কলমের ব্যবহার করবে। অবশ্যই সেটা পাঠকের কথা ভেবে করবে না। বরংচো পাঠক তার লেখা পড়ে
লেখকের মত করে ভাবতে বাধ্য হবে। - সুন্দর উত্তর দিলো নবনীতা।
: তুমি উড়ে যাবার আগে,
ছুঁয়ে যেও আমার চোখের কোণ,
যখন দুমড়ে মুচড়ে যাবে আমার সবকিছু,
চোখে লাগা তোমার ছোঁয়ার গন্ধ নেবো তখন।
যদি সময় থাকে ঢের,
ধরে রেখো এহাতটা কিছুক্ষন।
ফিরে আসবে কিনা জানি না, তাই -
তোমার চুমুতে আমার সেচ্ছায় আত্মসমর্পন।
যদি অনাপত্তি থাকে তোমার-
এক শক্ত আলিঙ্গনে আমার ফুসফুসে দিয়ে
যেও প্রাণ,
আমি তোমাতেই হারাই, তোমাতেই ডুবি,
নাকে আটকে থাক তোমার ঘ্রাণ।
No comments