Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১১

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১১

২০০২ সালের মাঝামাঝি কোনো একটা সময়ের কথা। সাফায়েত তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র। লেখালেখিতে নতুন নাম লিখিয়েছে। তার প্রথম প্রকাশিত বই মনবন্দি। যদিও এখন সাফায়েতকে পরিচয় দিতে ওর নিজের নামটাই যথেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের বইমেলাতে একটা স্টলে সাফায়েতের মন্দিবন্দিটাও ছিল। সাফায়েত মাঝে মাঝে সময় দিতো স্টলে।  মনবন্দি বইটা তার বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার সময়ে বেশ অনেকদিনই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। প্রেমের কবিতার বই মনবন্দি প্রকাশের পর রাতারাতিই অখ্যাত সাফায়েত তার বিশ্ববিদ্যালয়ে সকলের চেনা মুখ হয়ে উঠলো। এক নামে সবাই তাকে চিনতে শুরু করলো। মনবন্দি সাফায়েত। প্রেমের কবি সাফায়েত। ২১ মে, দিনটা মনে রেখেছে সাফায়েত। স্টলের ছেলেটা বাইরে যাওয়াতে সেই সময়টাতে সাফায়েত স্টলে বসেছিল। বেশ অনেকক্ষণ ই চায়ের স্বাদ নিতে না পারা সাফায়েতের মধ্যে ততক্ষণে অস্থিরতা জন্ম নিয়েছে।

জলপাই রঙের গ্যাবাডিং প্যান্টের সাথে এ্যাশ কালারের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির বোতামে  কালো রোদ চশমা ঝুলিয়ে রাখা। স্মার্ট ছেলেটা তখন থেকেই ঘড়ি পরে। অগোছালো চুল। কাকের বাসা মনে করে শালিক পাখি ডিম পেড়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। মুখে হালকা দাঁড়ি, তবে যতটুকু আছে বেশ গোছালো কাটিং দেওয়া। লম্বা,  দেখতেও সুদর্শন। কি, কিছু বাদ দিলাম নাকি? - স্মৃতি হাতড়ে বছর দশ বছর আগের সাফায়েতের সূক্ষ্ণ বর্ননা দিলো নবনীতা।

নবনীতা তখন ফাস্ট ইয়ারের একটা মেয়ে। খয়েরী জামার উপর ছোট ফুলের ছাপা জামা। বেণী দুটো দুকাঁধে রাজত্ব করছিল। আর সামনের চুল গুলো দখলে নিয়েছিল তার কপাল। এক কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ। চঞ্চল হাত কখনো চুল ঠিক করছে, কখনো ব্যাগের বেল্ট। চোখে মুখে ক্লান্তি, নাকের ডগায় কিঞ্চিৎ ঘাম জমেছিল। তবে ওড়নার এক কোণা দিয়ে মুছে নিয়েছিল । ক্লান্তি লুকাতে পারেনি ঠিকই। তবে ক্লান্ত মেয়েটা নিজেকে পরিপাটি রাখতে পটু। সৃষ্টিকর্তা মেয়েদেরকে একটা বিশেষ ক্ষমতা দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তারা যে কোনো পরিস্থিতিতেই নিজের সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে পারে। এটা অবশ্য ছেলেদের মধ্যে নেই বললেই চলে। ছেলেদের খেয়েদেয়ে এত কাজ নেই যে সবসময় নিজেকে নায়ক সাজিয়ে রাখতে হবে। ছেলেরা কয়েকটা সময় নিজেকে গোলালো বানায়। একটা হল ক্লাসের প্রেজেন্টেশন, চাকিরর ভাইভা আর প্রেমের প্রথম একমাস। এরপর যেই লাউ সেই কদু টাইপের ব্যাপার। ছেলেদের ধৈর্য্য বেশ কম। তবে নবনীতার ধৈর্য্যের প্রশংসা করতেই হবে। না হলে সকাল আটটা থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্লাস করে আর এতক্ষণ মেলাতে ঘুরছে! ভার্সিটির বিল্ডিংগুলো চেনার আগেই চিনে ফেলেছিল এক কবিকে। সাহিত্যের প্রতি নেশা ছিল না ঠিকই, তবে  আবেগ ছিল। নিজেকে ভাবতো কালজয়ী নারী চরিত্রে। তবে তার বসবাস ছিল বাস্তবে। ছিমছাম গঢ়নের সাধারণ এক কিশোরী। ক্যাম্পাসের শত রমনী থেকে আলাদা ভাবে দেখার জন্য আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য নেই তার মধ্যে। চঞ্চল, লাবণ্যময়ী এটা বিশেষ কিছু না, মোটামুটি সব মেয়ের মধ্যেই এমন বৈশিষ্ট্য আছে। সব মেয়ে ই সুন্দর। তবে তাদের প্রেমিক বা পছন্দ করা মানুষদের চোখে সুন্দরের সংজ্ঞা আলাদা আলাদা। গতকাল রাত জেগে বই পড়া, সারা দিন ক্লাস করে মেয়েটার চোখে মুখে ক্লান্তির মিছিল। তবুও যেন বই মেলা ঘোরা তার খুব শখ। মেলা থেকে বান্ধবিকে দিয়ে গতকাল যে বইটা কিনিয়েছে, রাতে সেই বইটা পড়ে সেই বইয়ের আরো একটা কপি নিজের সংরক্ষণে রাখতে চায় নবনীতা। এই অভ্যাসটা নবনীতার নতুন নয়। টাকা দিয়ে বই কিনে যেই বইটা পড়ে মজা পায় না সেটা অন্যকে পড়তে দিয়ে দেয়, তবে যেটা ভালো লাগে সেটা কাউকে দেয় না। আবার কারো থেকে বই নিয়ে পড়লে সেই বই ভালো লাগলে নিজের সংরক্ষণে রাখার জন্য বইটা নিজে থেকে কেনে। তবে নবনীতা বইপোকা না। এই বই জমানো অভ্যাসটা তার পুরণো, তবে কিঞ্চিৎ।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

মনবন্দি বই খুঁজতে খু্ঁজতে সাফায়েতের স্টলেই এসেছিল নবনীতা। নবনীতার হয়তো ভাবনাতেই ছিল না এত সহজে সাফায়েতের সাথে ওর দেখা হবে। যার লেখা কবিতা পড়ে গতরাতে খুব কান্না করেছে সে। লেখক পরিচিতি পড়লেও বইয়ের পেছনে আটকে রাখা মানুষটার সাথে সেসময় সামনে দাঁড়ানো সাফায়েতের তেমন মিল নেই বলা চলে। বইয়ের সাফায়েতের  ছোট চুল, পরিচ্ছন্ন চাহনী। ফরমাল লুকের, ভদ্র একটা ছেলে। আর বইয়ের স্টলে বসে থাকা ছেলেটার বড়চুল, পাঞ্জাবির বোতামে চশমা ঝুলানো। অভদ্র না, তবে চেহারার মধ্যে লেখক সত্ত্বার বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। তাকে দেখে বিক্রয় প্রতিনিধি ই মনে হচ্ছে।

আপনার এখানে যে মনবন্দি বইটা আছে, বইটার রাইটারের সাথে কি আপনার দেখা হবে? - স্টলের ভেতরে থাকা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলো নবনীতা।

রাইটার আমার পরিচিত। উনাকে তো আমি চিনি। - উত্তর দিলো স্টলের ভেতরে থাকা সাফায়েত। মেয়েটা যেহেতু ওকে চেনতে পারেনি, তাই আপাতত নিজে থেকে আর নিজের পরিচয় দিলো না।

একটা কাজ করতে পারবেন আমার জন্য? উনাকে আমার হয়ে খুব করে বকে দিতে পারবেন? বলবেন যে প্রথম দিকের কবিতাগুলো ঠিক ই ছিল। তবে শেষের দিকে এত কষ্টের কবিতা লিখেছে কেন। কবিতা পড়ে কান্না করেছি আমি। টাকা দিয়ে বই কিনে সময় নষ্ট করে পড়বো কি কান্না করার জন্য? মনবন্দি নামের কবিতা টা পড়ে মনে হচ্ছিল কবিতা টা আমাকে নিয়ে লেখা। ভদ্র লোকটা আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছে আমাকে না জানিয়ে! "আমি ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছি নিজের অজান্তে। আমি সুখ খুঁজি, তবে পাইনা পৃথিবীর কোনো প্রান্তে।" কি দারুন কথা। তাও আমি উনাকে বকা দেবো। তার লেখা পড়ে পাঠক যদি কাঁদে তবে এর দায়ভার সেই লেখক কোনো ভাবেই এড়াতে পারেন না। আপনি প্লিজ আমার হয়ে রাইটার কে আমার কথা বলবেন। বলবেন যে নবনীতা, সমাজবিজ্ঞান ফাস্ট ইয়ার, তাকে তার বইয়ের শেষের কবিতাগুলোর জন্য খুব করে বকে গেছে। - একদমে কথাগুলো বললো নবনীতা।

No comments

Powered by Blogger.