শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১০
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ১০
তুমি আমার মন বোঝোনি ঠিকই, তবে তোমার
উত্তরটা ভুল। তোমার উত্তরটা হওয়া দরকার ছিল- আমি যে তোমাকে ছেড়ে চলে যাব, আমাকে দেখে
তুমি কখনো সেটা বুঝতে পারোনি। - নবনীতাও নিজেকে দোষী প্রমাণে ব্যস্ত।
কোনো কথা বললেই প্রতিটা কথাতেই তুমি
কেন বারবার দোষটা তোমার কাঁধে নিচ্ছো। - প্রশ্ন করলো সাফায়েত।
মানুষের অপবাদ আর দোষ কাঁধে নিতে নিতে
কাঁধটা বেশ চওড়া হয়ে গেছে। তাই তোমার শূন্য কাঁধে খালি খালি দোষ চাপিয়ে ভারী করার
কি দরকার? সবটা না হয় আমিই নিলাম। - উত্তর দিলো নবনীতা।
মানুষ যেটা খুব ভালোবাসে, সব সময় সেটা
হারানোর ভয়ে থাকে, কোনো এক তুচ্ছ কারণে মানুষ সেটাই হারিয়ে ফেলে, সেটার জন্যই খুব
কষ্ট পায় এবং সেই কষ্টকে ধরে রেখে বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়ার মত পাষাণ হতে পারে। -
কথা বলতে বলতে চায়ের কথা যেন খেয়াল ই নেই। ঠান্ডা চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে প্রতুত্তর করলো
সাফায়েত।
তার মানে তুমি পাষাণ? তবে সেটা তো মনে
হয় না। একটা পাষাণ মন কখনো এত সুন্দরভাবে ছন্দ বেঁধে প্রেমের কবিতা লিখতে পারে না।
- নবনীতা সাফায়েতকে দোষ দিতে নারাজ।
সেটা আমার সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত উপহার।
আর আমি কেবল সাধনা করে সেই উপহারটার যত্ন নিই। - বললো সাফায়েত।
কজন ই বা যত্ন নেয় বলো। অনেকে তো অন্যের
চাপে বাধ্য হয়েই নিজের সাধনা চালিয়ে যেতে পারে না। - যোগ করলো নবনীতা।
তা ঠিক। তুমিও তো আমার সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত
উপহার ছিলে। তোমাকে সাধনা করে ধরে রাখতে পারলাম কই? - জারুল তলায় পৌঁছে মনপোড়া একটা
হাসিতে বললো সাফায়েত।
একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করেছে?
- সাফায়েতকে প্রশ্ন করলো নবনীতা।
কি? - জানতে চাইলো সাফায়েত।
এই যে, এতগুলো বছর পর আমাদের দেখা হলো।
আর আমরা দুজনই কেমন যেন মহান সাজার চেষ্টা করছি। মানে দুজনের বিচ্ছেদের সব দায় আমরা
দুজনই নিয়ে নিতে চাচ্ছি, অন্যজনকে মুক্তি দিতে চাচ্ছি। - কারণ বললো নবনীতা।
আমাদের বিচ্ছেদের সময়ও কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি
হয়নি। - যোগ করলো সাফায়েত।
কেন হবে? ভালোবাসতাম তো। যাকে ভালবাসতাম,
তার সবকিছু জেনে সবটা দিয়েই তো ভালবাসতাম। তাহলে চলে যাবার সময় তাকে কেন দোষী, অপরাধী
বানিয়ে যাবো? - প্রসঙ্গ আরো বড় করতে চাইলো নবনীতা।
ভালবাসতে! এখন বাসোনা? - সুযোগ বুঝে
প্রশ্ন করলো সাফায়েত।
আমি এখন অতীতের সময় নিয়েই কথা বলছি।
বর্তমান নিয়ে কিছু বলছি না। - কৌশলে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলো নবনীতা।
ওহ, তারমানে উত্তরটা জানা হলো না। -
বললো সাফায়েত।
এসব জেনে আর কি করবে বলো? এর থেকে অতীতের
সুন্দর সময়গুলো ভাবো। মনে শান্তি পাবে। আমাদের প্রথম দেখা হবার কথা মনে আছে তোমার?
- বর্তমান প্রসঙ্গ চাপা দিতে অতীতে ফিরতে চাইলো নবনীতা।
সে কি আর ভোলা যায়! বাচ্চা একটা মেয়ে।
আমাকে দেখেই এক লাফে মনে হলো আমাদের ভার্সিটির ফেরদৌসি আমীন ভবনের ছাদে উঠে গেছিলো।
- হাসতে হাসতে উত্তর দিলো সাফায়েত।
খবরদার বাচ্চা বলবা না। আমি তোমার ইমিডিয়েট
জুনিয়র। আর এক বছরের ছোট কোনো ছোট না। - শাসন ভরা চোখে প্রতুত্তর করলো নবনীতা। অনেকগুলো
বছর পর যেন পুরনো রূপে ফিরেছে নবনীতা। নবনীতার এই রূপটা ই সাফায়েতের খুব চেনা, সবচেয়ে
পছন্দের।
তোমাকে যে
ঠিক কি বলে ডাকবো বুঝে উঠতে পারছি না। - বললো সাফায়েত।
নবনীতা বলেই ডেকো। আচ্ছা তুমিতো বেশিই চা খাও। গ্রীন
টি খেতে পারো। এটা হেলদি। এই সময়ের লেখক হয়ে তো তোমাকে স্বাস্থ্যসচেতন হতে হবে। - প্রসঙ্গ
বদলালো নবনীতা।
গ্রিন টি তো কয়েক শতাব্দী ধরে সংস্কৃতিবান আর উচ্চবিত্ত
সমাজের মানুষদের কাছে প্রাধান্য পেয়ে আসছে। আমি এখনো এত জাতে উঠতে পারিনি নবনীতা।
- বললো সাফায়েত।
তোমার মুখে সরাসরি আমার নামটা বেমানান লাগছে। তুমি
আমাকে কবিতা বলেই ডেকো। - মিষ্টি এক হাসিতে উত্তর দিলো নবনীতা।
No comments