শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৮
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৮
আমাদের শত চাওয়ার সবগুলোই মাটিচাপা পড়ে গেছে এখন। কেবল আমরাই জানি সেই দিনগুলোতে আমাদের অপ্রকাশিত ইচ্ছেগুলো। - নবনীতা যেন কবিতার উত্তর দিলো।
সময় কত দ্রুত বদলে যায়, তাই না? সবকিছু
যেন চোখের সামনে ভাসে। মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। সেসব ভেবে নিজে নিজে হাসি, কাঁদি।
কাউকে বলা যায় না সেসব কথা। - ঠান্ডা চায়ে শেষ চুমুক দিলো সাফায়েত।
তোমার এখনো প্রেমের সেই সময়গুলোর কথা
সব মনে আছে দেখছি! একেবারে অল্প দিনের কথাও তো না। আমি এখনো মাঝ রাতে এটা ভেবে মনে
প্রশান্তি পাই যে, আজকের জনপ্রিয় কবি অনেক অনেক বছর আগে আমার প্রেমিক ছিল। - মুচকে
হেসে যেন মনের কষ্ট লুকানোর চেষ্টা করলো নবনীতা।
অতীতের সুন্দর সময়গুলো নিয়ে আমরা বাঁচতে
চাই। আর কষ্টের সময়গুলো ভুলতে চাওয়ার ওছিলাতে আমরাই বার বার সেসব মনের মধ্যে আনি।
- নবনীতাকে উত্তর দিলো সাফায়েত। সেদিনের প্রেম পাগল প্রেমিক সাফায়েত আজ বেশ পরিণত।
সেটা হয়তো বয়স অথবা তার বর্তমান অর্জনের জন্যই সম্ভব হয়েছে।
জানো, আমি আমার বিষণ্ণ সময়গুলোতে তোমার
আমার স্মৃতিগুলো ভাবি। সেই আমি আর এই আমির মাঝের সময় আমি ভুলে থাকতে চাই। - হঠাৎ যেন
আবেগী হয়ে উঠলো নবনীতা ।
আমার উপর তীব্র অভিমানে বড় আয়োজন করেই
তুমি বিয়ে করছিলে। আমাদের সুন্দর সময়টা মুহূর্তেই অসুন্দর হয়ে উঠলো। বিয়ের পর নবনীতা
সত্যিই আমার থেকে হারিয়ে গেল। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই নবনীতা আজ এক বাক্যেই আমার সাথে
সময় কাটাতে রাজি হল, ব্যাপারটা আমার কাছে সত্যিই অবাক করার মতই। তাও কিনা আজ নবনীতার
জন্মদিন। - যেন অবাক হয়েই কথাগুলো বলছিলো সাফায়েত।
সময় বড় অদ্ভুত। মানুষ মানুষকে ক্ষমা
করলেও প্রকৃতি আর সময় মানুষকে কখনোই ক্ষমা করে না। আমি জানি আমার প্রতি তোমার কোনো
অভিমান, অভিযোগ নেই। থাকলে নিশ্চয় এতগুলো বছর ধরে আমাকে খুঁজতে না। তবে খেয়াল করেছো,
সময় কিন্তু আমাকে ক্ষমা করেনি। - নবনীতা যেন কোনো কারণে অনুতপ্ত।
কেন? তোমার কি হয়েছে বলো তো। - প্রশ্ন
করলো সাফায়েত।
বাদ দেও। কেন বাদ দিতে বলছি জানো? তুমিই
আমাকে বলতে অতীতের কষ্টের কথা ভেবে বর্তমান সময় খারাপটা করা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
তোমার এই কথাটা আমি খুব মানি। তুমি তো আমার
কাছে আজকের একটা দিন চেয়েছো। তাই এই একটা দিন আমি ভাল ভাবে শেষ করতে চাই কবি। যদি তুমি
আমাকে তোমার অনেকগুলো দিন দিতে, সেই অনেকগুলো দিনের একটা দিন না হয় আমার কষ্টের কথা
বলে তোমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম। যদিও তোমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার সেই ভাগ্য তো এখন আমার
নেই। আর তুমি তো এখন আর সেই তুমি নেই। তুমি এখন সময়ের জনপ্রিয় কবি। আমি তো তোমার হাজার
হাজার ভক্তের মধ্যে হারিয়ে যাবো কবি। তবে তোমার আজকের অবস্থানের জন্য আমাকে ধন্যবাদ
দিতেই হবে। আমার তো মনে হয় আমার সাথে জেদ করেই তুমি আজও লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছো। আর
তার ফলও পাচ্ছো। - যেন জোর করে নিজের প্রশংসা শুনতে চাইলো নবনীতা ।
কি সব বলছো আজকের এই সুন্দর দিনে। কষ্টের
কথাগুলো বাদ দেও। - হাসতে হাসতে নবনীতাকে থামালো সাফায়েত।
তুমি যদি ভালো চাকরি না করো তাহলে আমারো
কিছু করার থাকবে না। তোমার চেষ্টা মানে যদি শুধু চেষ্টা হয় তাহলে কোনো লাভ নেই। চেষ্টা
করে ভাল ফল হবার উপরেই আমাদের বিয়ে নির্ভর করছে। কারণ তুমি কিছু না করলে আমার পক্ষ্যেও
তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমি পরিবারের কথার বাইরে যেতে পারবো না। তোমাকে এমন কথা
ই বলেছিলাম তখন। - বললে বলতে থেমে গেলো নবনীতা।
কি সব ভুলভাল বকছো? তাও আজকের দিনে?
- নবনীতাকে থামিয়ে দিলো সাফায়েত।
ওমা, ভুল কি বললাম। তুমি চাকরি করবে
না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে। আর আমার পরিবার কবির সাথে বিয়ে দেবে না। আর আমার পরিবার
বলতে তো শুধু আমার বাবা মা না। চাচাদের কথাও শুনতে হয়। পরিবারকে খুশি রাখতে নিজের ইচ্ছার
বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভুল করেছিলাম। বড্ডো বেশিই ভুল করেছিলাম। - যেন অনুশুচনা
করছে নবনীতা। তারপর আবারো শুরু করলো- তোমার সাথে থাকলে এতদিনে বনলতার মত কোনো জনপ্রিয়
নারী চরিত্র হয়ে যেতাম, কি বলো? - কষ্ট ভুলে হাসার চেষ্টা করলো নবনীতা ।
তেমনটাই তো লিখতে চেয়েছিলাম। সুযোগটা
আর পেলাম কই? আমার ই বা কি দোষ বলো। - উত্তর দিলো সাফায়েত।
বাহ, সুযোগে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করলে।
- হাসতে হাসতে প্রতুত্তর করলো নবনীতা ।
আরেকবার চা খাবে? - প্রসঙ্গ বদলাতে নবনীতাকে
জিজ্ঞেস করলো সাফায়েত।
এখনো চায়ের নেশাটা আছে দেখছি। - মাথা
নাড়িয়ে চা খাওয়ার আগ্রহ জানিয়ে প্রশ্ন করলো নবনীতা ।
তুমি আমাকে ছেড়ে গেলেও চা আমাকে ছাড়েনি।
বলতে পারো আরো বেশি করে আকড়ে ধরেছে। - সাফায়েতও হেসে হেসে প্রতুত্তর করলো।
চলো উদ্যানের ভেতরে একটু হটি। কাজের বাইরে এদিকে আসতেই
পারি না। হাটতেও পারি না। এতগুলো বছর পর যখন আসলে তখন আমাদের স্মৃতি লেগে থাকা জায়গাগুলো
চলো একটু ঘুরে দেখি। - বললো নবনীতা।
No comments