শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৭
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৭
এখানে না আসলে, পেটে সামাদ মামার হাতের
চা না পড়লে যেন পেটের ভাত হজম হতো না, রাতে ঘুম হতো না, তোমার সাথে প্রেম জমতো না।
তাই না? - চায়ে চুমুক দিয়ে গম্ভীর একটা মুচকি হাসিতে স্মৃতি হাতড়াচ্ছে সাফায়েত।
পকেটে টাকা না থাকলেও পায়ের উপর পা তুলে
চায়ের কাপে সরাৎ সরাৎ শব্দ করে চা খাওয়া যেত একমাত্র সামাদ মামার দোকানেই। - নবনীতারও
মনে পড়ছে সেই ফেলে আসা সময়গুলো।
তোমার মনে আছে, একদিন এখানে প্রোজেক্টরে
ফুটবল খেলা দেখছিলাম। - বললো সাফায়েত।
দিলে তো হাসিয়ে। সে কি ভোলা যায়। - চায়ের
কাপে চুমুক দিতে গিয়েও না দিয়ে কাপ সরিয়ে হেসে ফেললো নবনীতা।
ব্রাজিল গোল দেওয়া মাত্রই সাংবাদিক ক্যামেরা
নিয়ে হাজির আমাদের অনুভূতি জানার জন্য। আর ক্যামেরা দেখে তো দুজন দুদিকে দৌঁড়। - বলেই
হো হো করে হেসে উঠলো সাফায়েত।
বজ্জাত সাংবাদিক আমাদের পিছু নিলে সেদিন
সাংঘাতিক রকমের বিপদে পড়তাম। - চায়ে চুমুক দিয়ে যোগ করলো নবনীতা।
বৃষ্টিভেজা এক রাতে দুজনের কাজ শেষে
শিক্ষাভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে এক ছাতাতে ফিরছিলাম। প্রেমের প্রথম দিকে। কবি প্রেমিক
সেদিন প্রেম নিয়ে তার প্রেমিকাকে চুমু দেবার সাহস পায়নি। তবে কাছে আসছিল বারবার। প্রেমিকা
এগিয়ে আসবে ভেবে। বৃষ্টিতেই ভেজা হলো, প্রেমে ভেজা হলো না সে রাতে। - স্মৃতি চারণ করলো
সাফায়েত।
: তোমার দেখছি এসব খুঁটিনাটি কথাও মনে
আছে।
একবার তো চারুকলার সামনের রাস্তা দিয়ে
রিক্সায় আসার সময় চুমু দিয়েছিলাম তোমার গালে। - বললো সাফায়েত।
হুম। ওটাই প্রথম। তবে আমি একটু রাগও
করেছিলাম। - যোগ করলো নবনীতা।
মনে আছে তোমার। সেই খেলার রাতে তোমাকে
আমার বাসায় নিয়ে গেছিলাম। ডালভাত খেয়েই বের হলাম আবারো। সবাই খেলা দেখতে গিয়েছিল। সুযোগটা
কাজে লাগিয়ে তোমাকে বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল তোমায় খুব শক্ত করে জড়িয়ে আদর
করার। হলো না। প্রেমিকাকে খুব কাছে পেয়েও কাছ থেকে দেখা হলো না। খেলা দেখতে চলে গেলাম
বাদামতলাতে। একবার তো বাদামতলাতে সে কি ঝুম বৃষ্টি, মনে আছে তোমার? - মনে করিয়ে দিলো সাফায়েত। এখানেই যেন ওদের হাজারটা
গল্প আছে।
হ্যাঁ। এই সামাদ মামার থেকেই বিস্কুটের
পলিথিন নিয়ে সে যাত্রায় মোবাইল বাঁচিয়েছিলাম। আর তারপর দুজন একসাথে ভিজলাম। অচেনা এই
শহরে চেনা প্রেমিকের সাথে ভিজতে বেশ লাগে। - বললো নবনীতা।
তুমি সেদিন গানটা বেশ গেয়েছিলে। শ্রীকান্তের
সেই 'আমার সারাটি দিন মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম। শুধু শ্রাবণ সন্ধাটুকু চেয়ে
নিলাম'। আজকে শোনাবে নাকি অল্প একটু? - প্রাক্তন প্রেমিকার কাছে গান শোনার আবদার করলো
সাফায়েত।
আজকে তো সেদিনের মত বৃষ্টি নেই। আর আমি
এখন গান গাওয়ার মানসিকতেও নেই। অন্য কোনো সময়ে, যদি আবার কখনো দেখা হয়ে যায় হুট করে,
কথা দিচ্ছি সেদিন তোমায় গান শোনাবো। তবে তুমি কিন্তু একটি কবিতা শোনাতে পারো। ধরো এটা
আমার জন্মদিনে এই সময়ের জনপ্রিয় প্রেমের কবি সাফায়েতের দেওয়া উপহার।
: একদিন তুমি আমার হইয়ো মায়াবতী,
তোমায় নিয়ে রিক্সায় চেপে,
শহরের রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলো গুনবো।
কখনো তুমি আমার হাত জড়িয়ে রাখবে,
কখনো আমার হাত তোমার উন্মুক্ত কোমর কিংবা কাঁধ ছুঁয়ে থাকবে।
অথবা তোমার পুরোটায় আমার বাহুডোরে বাঁধা
থাকবে।
সেই সন্ধ্যার শহরে-
তুমি আমার গালে চুমু দেবে আমার আবদার
মেটাতে।
আর আমি শর্ত ভেঙে চুমু খাবো তোমার কম্পিত
ঠোঁটে।
রাগ, অভিমানে ডুবতে যাওয়া তোমাকে স্বাভাবিক
করতে-
আমি দীর্ঘস্থায়ী চুমুর ছবি আঁকবো-
তোমার ঠোঁটের জমিনে।
No comments