শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৬
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৬
লাল হলুদ সাদা গোলাপ দেখলেও সাফায়েত যেন জীবনানন্দের সাথে হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথে হাঁটতে হাঁটতে একটা জীবন্ত গোলাপি গোলাপের দেখা পেয়েছে। জীবন দা পেয়েছিল তার বনলতাকে আর সাফায়েত পেয়েছে নবনীতাকে। কাকতালীয়ভাবে এই দুই রহস্যময়ী মানবীর নামের শেষ অংশে মিল আছে। আর তাতেই কবিদ্বয় তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। অনিয়ন্ত্রিত প্রশস্ত ভ্রু আর দুচোখে কাজলের বেরিকেট। যেন চোখ দুটোতে প্রেম আটকে রাখার চেষ্টা। তাতে নবনীতা সফলও বটে। তবে নবনীতা কি সত্যিই চোখে প্রেম রেখেছে? নাকি বিষাদ, অপূর্ণতা, আক্ষেপ, অভিমান? এতগুলো বছর পর প্রাক্তন এর জন্য প্রেম থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। যেখানে তার বিবাহিত একটা জগত আছে। বিচ্ছেদের পর সম্পর্কের দূরত্বে ভালোবাসার মানুষের প্রতি মানুষের একটা ঘৃণা জন্মায় এবং প্রেমের সময় গুলোতে জমিয়ে রাখা আকাঙ্ক্ষা, অপূর্ণতাগুলো মন্দ কথায় রূপ নিয়ে ছড়াতে থাকে বাতাসের থেকেও দ্রুত গতিতে। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই মানুষটার প্রতি থাকেনা কোন রাগ, থাকে না কোন অভিমান, মন্দ কথার ছড়াছড়ি। এই মানুষটা তখন নেহাৎ একটা অতীত মাত্র। যে অতীত চাইলেও ভুলে থাকা সম্ভব না, চাইলেই বর্তমান দিয়ে তাকে চাপা দেওয়া সম্ভব না। তবে চাইলেই নিজের বর্তমান সময়েও সেই অতীতটাকে ধারাবাহিকভাবে স্মৃতিতে আনা সম্ভব। ছোট্ট এই পৃথিবীতে পথ চলতে গিয়ে জীবনের কোন একটা সময়ে, কোন এক গলির মোড়ে বিচ্ছেদ হওয়া সেই মানুষটার সাথে দেখা হওয়াটা যেমন খুব স্বাভাবিক। তেমনি সেই মানুষটার সাথে হঠাৎ দেখায় চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে সেই মানুষটা কেমন আছে জানতে চাওয়াটাও অপরাধ কিংবা অস্বাভাবিক নয়। মৃদু বাতাসে কিছু চুল উড়ে দখলে নিয়েছে নবনীতার কপাল আর বাম চোখের একটা পাশ। বিষন্ন নবনীতার সেদিকে খেয়াল নেই তখন। অবাধ্য চুলগুলা গুছিয়ে চুলের মিছিলে ঠেলে দেওয়ার মতো অধিকারে নেই সাফায়েত।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারেপ্রেমের সময় হলে অবশ্য চুল এলোমেলো করে দেওয়া কিংবা গুছিয়ে দেওয়া,
কোনো কিছুতেই অনুমতির প্রয়োজন হতো না তার। মানুষটা একই হলেও বর্তমানের এই সময়টা সম্পূর্ণ
ভিন্ন। এখনকার এই সম্পর্কে যেমন অনুমতির প্রয়োজন আছে তেমনি প্রয়োজন আছে দূরত্ব বজায়
রাখার। যদিও এলোমেলো চুলে মন্দ লাগছে না এখনকার নবনীতাকে। নিজের সবচেয়ে ভালোবাসার
মানুষটাকে এতগুলো বছর পর হঠাৎ খুঁজে পেয়ে ছুঁয়ে না দেখার আক্ষেপে প্রেমের কবি সাফায়েত
যেন ছন্দহারা এক সাধারণ কেউ। যে হাত, চোখ, কপাল, গালে ছিল তার বাঁধাহীন অধিকার, সময়ের
পরিবর্তনে সাফায়েত আজ সেগুলোর দর্শক মাত্র। সাফায়েত জানতো প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে
তার আজ দেখা হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। তবে দেখা হওয়ার পর তার সাথে স্মৃতিচারণের এই
আবদারে যে নবনীতা এত সহজে রাজি হবে সেটা কল্পনাতেও ছিল না তার। কালো পাঞ্জাবিতে সাফায়েতকে
নাকি বেশ লাগে। প্রেমের সেই সময়টাতে এমনটাই বলতো নবনীতা। আর সেই স্মৃতিচারণ করে আজকে
কালো পাঞ্জাবি পরেছে সাফায়েত। কোঁকড়া চুল, গাল ভর্তি পরিপাটি গোঁফ দাড়ি। ঘড়ি আর
চশমাতে বেশ গোছালো। সময়ের জনপ্রিয় তরুণ কবি সাফায়েতের প্রেমের কবিতা পড়ে বা শুনে
প্রেম হয়েছে বহু মানুষের। ওর লেখা প্রেমের কবিতা পড়ে প্রেমিকার রাগ ভাঙিয়েছে বহু প্রেমিক।
সেই প্রেমের কবি সাফায়েতের জীবনে প্রেম নেই, আছে একটা প্রাক্তন। যে মানুষটা তার জীবনে
নেই, সেই মানুষটাকে ভেবে তার লেখা প্রেমের কবিতাগুলো প্রেম জাগিয়েছে বহু মনে, কি অদ্ভুত
এই ব্যাপারগুলো। লেখনী আর চিন্তাশক্তির প্রভাব হয়তো এটাই। লেখকের অপ্রাপ্তি আর অপূর্ণতার
লেখাগুলোতে কখনো কখনো পূর্ণতা পায় পাঠকেরা। তবে লেখক যে অপূর্ণতার সাগরে ডুবে মরে
সেটা কেউ জানতেও পারে না। আর যারা জানে তারা বিশ্বাস করে না।
No comments