শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৫
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৫
তুমি তো দেখছি আগের মত এখনো চায়ে চিনি
কম খাও। তখন না হয় কারণ ছিল। যুক্তি দিয়ে বলতে যে আমার মিষ্টি ঠোঁটের সাথে ব্যালেন্স
করতে তুমি চায়ে চিনি কম খাও। তাহলে এখন কেন চায়ে চিনি কম খাও কবি? – কথাটা শেষ করেই
একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের কাপে প্রথম চুমুক দিলো নবনীতা।
তোমার স্মৃতিশক্তি এখনো আগের মতই আছে
দেখছি। এখনো ভোলোনি! অবাক হলাম। সত্যিই অবাক হলাম। টং চায়ের দোকানে আমি ভুলে গেলেও
মামাকে একটা কাপে চিনি কম দিতে বলতে তুমি কখনো ভুলতে না। আমার ব্যাপারে আমার থেকে তুমি
বেশি কেয়ারিং ছিলে। আমি কি খায়, কতটুকু খায়, কি খায় না এসব তোমার মুখস্ত ছিল। কতই না
সুন্দর ছিল আমাদের সেসব দিনগুলো, তাই না। - কথাটা শেষ করেই মুচকি হাসিতে একটা দীর্ঘশ্বাস
ছেড়ে নিজের কাপটাতে চুমুক দিলো সাফায়েত।
এখন এই কেয়ার টা কে করে শুনি। - নিজের
কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে এক গাল হাসি দিয়ে প্রশ্ন করলো নবনীতা। নবনীতার এই হাসিটা যেন
নবনীতার মতই অস্পষ্ট। নবনীতা কিছু লুকানোর বৃথা চেষ্টাতে এমন হাসির চর্চা করছে বলে
মনে হল। আর সুযোগে এটাও জানতে চাইলো সাফায়েত এখন প্রেম করে কি না।
এখন নিজের অভ্যাসগুলো নিজেই রপ্ত করে
নিয়েছি। কে কার জন্য থেমে থাকে বলো! দিনশেষে নিজের বলতে তো কেবল নিজের অর্জনটুকুই থাকে।
নিজের অর্জন ছাড়া মানুষ শূণ্য। আর শূণ্য মানুষের চারপাশও শূণ্য। তাই না? - বললো সাফায়েত।
আজকে আমার জন্মদিন। এতবছর পর আমরা দুজন
আবারো একসাথে। এটা আমার সৌভাগ্য নাকি আমার জন্য দুর্ঘটনা সেটা বিশ্লেষণ করার সাহস আমি
হারিয়ে ফেলেছি আমার দোষেই। আজ আর কোনো ভারি কথা না বলি আমরা। - নবনীতা যেন গল্পের জন্য
ধোঁয়াসার মত কিছু একটা নিষেধ করলো।
এই গোলাপী রঙের শাড়িটাতে বেশ মানিয়েছে
তো তোমাকে! মনে হচ্ছে কয়েক জনম পর তোমার দেখা পেলাম, তাও আবার শাড়িতে! আমার কাছে এখনো
স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। তুমি একটুও বদলাওনি দেখছি। শুধু সেদিনের খোলা চুলে আজ খোঁপা
হয়েছে। আমাদের দুজনের মাঝে দূরত্ব হয়েছে। - দুচোখে নবনীতার মুগ্ধতা হজম করে চায়ে চুমুক
দিলো তার এক সময়ের প্রেমিক, সাফায়েত।
জন্মদিন তো। তাই আজ নিজের জন্য একটু
সেজেছি বলতে পারো। এখন তো আর দেখার মত কেউ নেই। আমাকে নিয়ে কবিতা লেখারও কেউ নেই। তবে
সেই তুমি ঠিকই দেখে ফেললে। - হৃদয়ে পাথর চাপা হাসিতে উত্তর দিলো নবনীতা। তবে হাসিটা
যে অভিনয় সেটা বুঝতে সময় লাগলো না সাফায়েতের।
তাহলে তো আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে
দাবি করতেই পারি, কি বলো? - হাসতে হাসতে বললো সাফায়েত। তারপর আবার যোগ করলো- আচ্ছা আমার মধ্যে কি পরিবর্তন দেখলে বললে না তো?
আমার মনে হয় আমি কিন্তু আগের মতই আছি।
তোমার চোখে আমি হয়তো বদলাই নি। তবে আমার
চোখে তুমি সেদিনের ছন্নছাড়া প্রেমের কবি থেকে আজ এসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি, লাখো পাঠিকার
স্বপ্নপুরুষ। তুমি তো এখন আর আমার নেই গো কবি। তুমি এখন বহু মনের, বহু মানুষের। - চায়ের
কাপে চুমুক দিয়ে হাসতে হাসতে উত্তর দিলো নবনীতা ।
উজ্জ্বল শ্যামলা আর চিকন গঢ়নের অবয়বটা
যেন ঠিক আগের মতই আছে। যৌবনের সেই রক্ত প্রবাহে এখন বয়সের ছাপ হয়তো স্পস্ট। তবে নবনীতার
পরিপাটি সাজসজ্জাতে চাপা পড়েছে সে ছাপ। হালকা গোলাপি রঙের শাড়িতে সাদাটে বৃত্তের মিছিল।
এলোমেলো কুঁচিতে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপনের বিশাল ইচ্ছে তার মধ্যে। খোপাতে চুলের কাঠি
গুঁজে চুলগুলো নিয়ন্ত্রণেও রেখেছে। ক্লাসে ধর্ম স্যার যেমন বেতের ভয় দেখিয়ে অবাধ্য
ছাত্রদের ভদ্র বানিয়ে রাখে, ঠিক তেমন। একটা টিপ আর ঠোঁটে লেপ্টে রাখা হালকা গোলাপি
রঙের লিপস্টিকে যেন আস্তো গোলাপ ফুল সেজেছে নবনীতা। কানের দুল, গলার মালা আর হাত ভর্তি
চুড়ি, কিংবা কপালের রাজধানীতে শাড়ির সাথে রঙ মিলিয়ে একটা গোলাপী টিপ, কিছুই বাদ পড়েনি
নবনীতার সেদিনের সাজে। নিজেকে পরিপাটি ভাবে গোলাপ সাজাতে নবনীতার এই ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত
চেষ্টা সফলও হয়েছে। যদিও নবনীতা কল্পনাও করেনি এতগুলো বছর পর ঠিক এভাবে তার প্রাক্তন
প্রেমিক, বর্তমান সময়ের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কবি সাফায়েতের সাথে তার ঠিক এভাবে
দেখা হয়ে যাবে।
No comments