শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৩
শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ৩
বাদামতলাতে সামাদ মামার এই দোকানে ঠিক
কত বছর পর চা খেতে এলাম বলো তো। - সামাদ মামার চায়ের দোকানের সামনে চা প্রত্যাশীদের
ভিড়ের মিছিলে যোগ হলো আরো দুটো মুখ, সাফায়েত আর নবনীতা। অনেক দিনের বিরতিতে সামাদ মামার
কাছে চেহারা দুটো হয়তো অপরিচিত হয়ে উঠবে, তবে এই মুখ দুটো ওদের দুজনের কাছে বেশ চেনা।
এমনও দিন গেছে যে ওরা দুজন দিনে রাতে কতবার নিঃশ্বাস নিতো সেটাও অন্যজন বলতে পারতো।
প্রেমের প্রথম দিকে মানুষ যেরকম পাগলামি করে আর কি। তবে সময়ের সাথে সাথে অভ্যাসগুলোও
বদলায়। এক সাথে চলা মানুষদের রাস্তা বদলে আলাদাও হয়। দুটো প্রবাদ মানুষ খুব বলে। মানুষ
অভ্যাসের দাস। আরেকটা হলো মানুষের দ্বারা কোনো কিছুই অসম্ভব না। তাই হয়তো মানুষ নিজেকে
বদলে নিতে পারে।
তোমার কথা তো বলতে পারবো না। তবে আমি
তোমার সাথেই শেষবার এসেছিলাম। সেটাও চার পাঁচ বছর তো হবেই। - উত্তর দিলো নবনীতা।
: আমিও আর আসিনি। তোমাকে খুব মনে পরবে
বলে। তাও তুমি আমার মনের কোনো এক কোণে থেকে গেছো। তোমায় ভীষন বাজে ভাবে মনে পড়ে যখন,
আমার ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে মুচড়ে যায়। তুমি আসোনি কেন?
: আমার খোঁজ করতে গিয়ে তুমি যদি এই জায়গাটাকেই
ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলো, সেজন্য। প্রেমের সময়টাতে তুমি যেসব পাগলামি করতে, তাতে তোমার প্রতি
এমন বিশ্বাস হওয়াটাই তো স্বাভাবিক, নাকি।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে
বাদামতলাকে বলা হয় এই শহরের আড্ডার রাজধানী। বাদামতলা যেন ক্লান্ত হয় না,
বাদামতলা ঘুমোয় না। কখনো কখনো একটু ঝিমিয়ে পড়ে মাত্র। জোয়ান থেকে বৃদ্ধ কিংবা নারী-পুরুষ
সবাই এখানে চা খায়, সিগারেট খায়, আড্ডা দেয়। দম বন্ধ হওয়া এই শহরে মানুষ যেন এখানে
আসে একটু প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে। স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়েরা যেমন বন্ধুদের নিয়ে
এখানে আড্ডা দেয়, তেমনি রংমিলিয়ে শাড়ি আর
পাঞ্জাবি পরে আসা প্রেমিক-প্রেমিকাও চায়ের কাপে প্রেমের ঝড় তোলে। জীবনের সংজ্ঞা বুঝি
এটাই। নিজের মতো করে ভালো থাকা। সবাই ভালো থাকতে চায়। কজনই বা পারে। তবে চেষ্টা করতে দোষের কি। চেষ্টাতে
যদি মিলায় সর্ব সুখ, চেষ্টাতে যদি দূর হয় দুঃখের অসুখ তবে মন্দ কি। মান্নাদের কফি হাউজ গানের মত আড্ডার
মানুষেরা বদলায়, তবে জায়গা আর আড্ডা ঠিকই থেকে যায়। ব্যস্ততায় কেউ হারিয়ে যায়,
তো কেউ আবার তীব্র শূন্যতায় পূর্ণতা খুঁজে পায় সেই একই জায়গাতে। সময় আর জীবনের দৌঁড়ে
হাঁপিয়ে ওঠা মানুষগুলো স্বস্তি খুঁজে পায় এই এক কাপ চায়ে কিংবা দুঃখগুলো উড়ে দেয়
সিগারেটের ধোঁয়ার মতো করে। ফেলে আসা ব্যর্থতাগুলোকে ভেবে বদ্ধমনে গুংরানো ছাড়া কিছুই
যে আর করার থাকে না কারোর। অনাগত ভবিষ্যতে নিজের সুন্দর সময় কল্পনা করে মানুষ একটা
তীব্র প্রশান্তি পায় তার মস্তিষ্কে।
No comments