Header Ads

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২

 

Books, Writer, slider,প্রাক্তন, prakton, Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, romantic story, bangla story, short bangla story, bangladeshi writer

শাহরিয়ার সোহাগ এর "প্রাক্তন"। পর্ব - ২

বাদামতলা। জায়গাটার নামটাই কেমন যেন আজগুবি টাইপের। আমগাছের নিচে বাজার বসলে সবাই সেটাকে আমতলা বাজার কিংবা বেলগাছের নিচে বাজার বসলে সেটাকে বেলতলা বাজার বলবে। এটা স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নেওয়া যায়। তবে বাদামতলা! এটা তো কোনো দিক থেকেই যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আর বাদাম গাছের নিচে তো বাজার বসাও সম্ভব না। শুধু বাদাম বাজার হলে না হয় মানা যেত এটা বাদাম কেনাবেচার বাজার ছিল। পরে আস্তে আস্তে অনেক দোকানপাট হয়েছে। এই শহরে মানুষের থাকার জায়গার অভাবে যেখানে তারা ছাদের উপর ছাদ দেয়। সেখানে এই শহরে বাদামের চাষ অযৌক্তিক, অস্বাভাবিক, অবাস্তব। তবুও জায়গাটার নাম বাদামতলা। যেন কেউ কপালে বন্দুক তাক করে তালগাছকে বেলগাছ বলা শেখাচ্ছে। চায়ের আড্ডা জমানোর জায়গাকে বাদামতলা বলা শেখাচ্ছে। চা নিয়ে কোনো সুন্দর নামও তো দেওয়া যেতে পারতো এই জায়গাটার। তবে দেবে কে? যে যার মত ব্যস্ত। সময় সুযোগে চা খায়। তবে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে আন্দোলন করার মত সময় কারোর ই নেই।

শেখা বা জানার শেষ নেই। আর জীবন যেহেতু একটা ই। তাই হয়তো সবাই এটাকে বাদামতলা হিসেবে মেনে নিয়েছে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়াও হতে পারে। এ ব্যাপারে অবশ্য পক্ষে বিপক্ষে মতামত থাকতে পারে। সিমেন্টের এক পিলার থেকে আরেক পিলারে কারেন্টের তারগুলো মাকড়োশার মত জাল বানিয়েছে। মাকড়োশার জালে তো তাও একটা সৌন্দর্য্য আছে। এই তারগুলোতে কিছুই নেই। তারাগুলোকে প্রাণহীন দেখায়, তবে কেউ ছুঁয়ে দেখতে গেলে তাকে নাচিয়ে আকাশে তুলে দেবে কয়েক সেকেন্ডেই। মাঝে মাঝে তারে আগুনের ফুলকি হয়। উৎসুক জনতা ভিড় করে তা উপভোগ করে। কেউ কেউ ভিডিও করে যারা দেখেনি তাদেরকে দেখার সুযোগ করে দেয়। ব্যাপারটা হাস্যকর বটে।

 

ভোর সকাল থেকে এখানকার দোকানদারদের ব্যস্ততা শুরু হয়। চায়ের দোকান, বুটমুড়ির দোকান, শাক সবজি আলু পটলের দোকান, ছুরি চাকু পিটচুলকানীর দোকান, এ্যালোভেরার শরবতের দোকান, সবই আছে এখানে। খোলা আকাশের নিচে বহু মহাজনের এ যেন এক মস্তবড় শপিং মল। তবে সবকিছুর ভিড়ে চায়ের দোকানেই বেঁচা-বিক্রি বেশি হয়। ভিড় হয়। ঢাকা পড়ে যায় অন্য দেকানগুলো। শহরের কিছু নব্য জমিদার গোছের আরাম প্রিয় মানুষ আছে যারা সকাল দুপুরে না খেলেও বেলা বারোটায় ঘুম থেকে উঠে এই বাদামতলাতে এসে এককাপ চা খাবেই। চায়ের দোকানদার সামাদ মামা এখানে বেশ জনপ্রিয়। মামার পুরো নাম সামাদুল ইসলাম। ডাক নাম সামাদ। এই বাদাম তলাতে সামাদ মামা নামেই সে বেশি পরিচিত। তার দাদা তাকে সমেদ বলে ডাকতো। যদিও সমেদ নাম টা তার পছন্দ না। সারাদিন দাঁড়িয়ে হাজার কাপ চা বানিয়েও কোনো ক্লান্তি নেই সামাদ মামার। ক্লান্তি লুকানোর মন্ত্র জানেন সামাদ মামা। শুধু তামাটে চেহারাই বার্ধক্যের ছাপ। আগের চেয়ে বেশ শুকিয়েছে মামা। ব্যবহারে বংশের পরিচয় বলে একটা প্রবাদ আছে। তবে সামাদ মামার বংশ বড় না হলেও তার ব্যবহারের জন্যই তিনি বড় মনের মানুষ। অবশ্য বড় বংশের হলে তো বাদামতলায় সে চা বিক্রি করতো না। চটপটে সামাদ মামার বয়স যেন এক গোলক ধাঁধাঁ। অনেকে বিশ্বাস ই করতে চায় না যে যুদ্ধের সময় তার বয়স নাকি দশ বছর ছিল। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। ঘনিষ্ঠ ক্রেতাদের সাথে সময় সুযোগ বুঝে মাঝে মধ্যে যুদ্ধের সময়ের স্মৃতি হাতড়ান সামাদ মামা। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রান্নার পানি এনে দিতেন। বিড়ি বিক্রির কথা বলে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে খরব নিয়ে যেতেন। বয়সে পিচ্চি হওয়াতে সামাদ মামাকে হানাদাররা সন্দেহও করতো না। কখনো কখনো নাকি সে হানাদারদের হাত পা টিপে দিতে যেত। একবার নাকি এমন মাসাজ দিতে গিয়ে হানাদারদের পানির ট্যাংকিতে এক খাবলা গোবর দিয়েছিলো। সেই গোবর খেয়ে হানাদারদের সবার নাকি সাত দিন পেট খারাপ ছিল। এটার জন্য দুই সৈন্যকে তারা শাস্তিও দিয়েছিলো। তবে মজার কথা হল তারা সামাদ মামা কে সন্দেহ ই করেনি। সামাদ মামার বাড়ি বিক্রমপুর। যুদ্ধের পর কয়েকবছর নারায়নগঞ্জে একটা চায়ের দোকানে কাজ করতেন। এরপর এরশাদের আমলে  এই বাদামতলাতে এসে চায়ের দোকান দিলেন। সামাদ মামা যখন এখানে এসেছিল তখন এখানে শুধু একটা মসজিদ ছিল। নামাজের আগে পরে মুসল্লিরা চা খেতো। তারপর তো এই এলাকার নিরবতা দৌঁড়ে পালালো। কোলাহল দখলে নিলো সবকিছু। চা বানানোতে তার প্রায় চল্লিশ বছরের উপরে অভিজ্ঞতা। ত্রিশ বছরের বেশি তো এই এক জায়গাতেই। তার হাতের চা খেয়েই জোয়ান যুবকেরা আজকে সরকারী আমলা, দেশের ওজনয়ালা চেয়ারের মানুষ। তারাও মাঝে মাঝে সরকারী গাড়িতে করে সামাদ মামার হাতের চা খেতে আসে। এই সামাদ মামাও জানেনা এই জায়গার নাম বাদামতলা হলো কিভাবে।

No comments

Powered by Blogger.