দাদা || শাহরিয়ার সোহাগ
দাদা গত বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ। একটা প্রায়ভেট হাসপাতালে ভর্তিও ছিল বেশকিছু দিন। তখনো দেখতে গিয়েছিলাম অপরিচিত হিসেবে। আজ আবিদার পরীক্ষা চলছিল। আবিদার ছোট বোন আমাদের প্রেমের কথা জানতো। সে আমাকে ফোন করে বললো দাদার অবস্থা ভালো না। আবিদার এক্সাম শেষ হলে ওকে নিয়ে নিউমার্কেট যাবার কথা ছিল আজ। নন্দিতা দিদির লাঞ্চের ইনভাইটেশনটাও ক্যানসিল করলাম। আবিদাকে কিছু না জানিয়ে রিক্সা ঠিক করে রওনা হলাম ওর বাসার উদ্দেশ্যে। সে তখনো কিছু জানে না।তাকে কিছুই বলিনি। বাসার কাছাকাছি গেলে সে ঘটনা কিছুটা আঁচ করে পেরেছিল। তখন তাকে জানালাম দাদা বেশ অসুস্থ। সে বাসায় সামনে গিয়েই বাসার গেটে এ্যাম্বুলেন্স দেখে কেঁদে ফেললো। দাদাকে তখন আনা হল একটা প্রায়ভেট হাসপাতালে। আমি খবর পেয়েই আগেই ছিলাম সেখানে। প্রতিটা ঘটনা ঘটছে খুব দ্রুতই। এ্যাম্বুলেন্স থেকে দাদাকে স্ট্রেচারে নামাতে অপরিচিত হিসেবে আমি ধরলাম। দাদা নামক মানুষটার স্পর্শ পেলাম। দাদা,
আবিদার দাদা। তিনি আমারো দাদা। হাসপাতাল থেকে জানানো হল দাদাকে দ্রুত আইসিইউ তে নিতে হবে। তবে তাদের আইসিইউ খালি নেই। সানিয়ার বাসা থেকে আমাদের কথা জানে না। সানিয়া আমাকে ফোন করে আইসিইউ এর কথা জানালো। আমিও আমার মত করে চেষ্টা করতে লাগলাম। ততক্ষণে আবিদার সেজো চাচা আরেক হাসপাতালে আইসিইউ এর ব্যবস্থা করেছেন। দাদা কে দ্রুত নেওয়া হল সেখানে। এদিকে দাদার অবস্থা আরো খরাপের দিকে। তারা আইসিইউতে নিতে চাইলো না। দাদাকে বাসাতে নেওয়া হল। আমিও আবিদার পরিবারের সাথে অদৃশ্য ভাবে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরছি।
দাদাকে গোসল করিয়ে আনতে দেরি হয়ে গেছে। আব্বু,
আম্মু, (আবিদার আব্বু আম্মু), চাচা, চাচি, ঢাকাতে আরো যারা ছিলেন সবাই দাদাকে নিয়ে গ্রামে যাবে। গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স এসে গেছে। প্রতিবেশিদের কাছে ততক্ষণর আমাদের দাদার নাম হয়ে গেছে "লাশ"। লাশের গাড়ি নিয়ে গ্রামে ফেরার দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমার আছে।
সবাই দোয়া করবেন দাদার জন্য। তার ভালোবাসা নেওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে ছুঁয়ে দেখেছি দাদা কে। এটা আমার কাছে অনেক।
No comments