Header Ads

দাদা || শাহরিয়ার সোহাগ

দাদা, শাহরিয়ার সোহাগ, bangla poem collection, bangla poem about birthday, poem by Shahriar Sohag small poem,


আমি আমার দাদা কে কখনো দেখিনি। আমার জন্মেরও বেশ আগে তিনি গত হয়েছেন। তাই দাদার সাথে স্কুলে যাওয়া, নামাজে যাওয়া, বাজারে যাবার মত কোনো স্মৃতিই আমার নেই। বাবার বাড়িতে ভালো সম্পর্কের অভাবে দাদার জীবিত ভাইদেরকেও দাদা ডাকার সৌভাগ্য হয়নি। এবং হয়ত তিনি বেঁচে থাকলেও হয়ত তার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক হত না পারিবারিক দূরত্বের কারণে।
আবিদার সাথে পরিচয়ের পর থেকেই ওর মুখে দাদার অনেক গল্প শুনতাম। দাদা এই করেছে, সেই করেছে আরো কত কি? দাদার সাথে তার কত কত স্মৃতি! ধীরে ধীরে তার প্রতি হিংসা আর দাদার জন্য ভালোবাসা জন্মাতে থাকলো দাদাকে নিয়ে ওর গল্পগুলো শুনে। আবিদার বাবা ওর দাদার বড় সন্তান। আর আবিদাও বাড়ির বড় সন্তান। তার বাবা চাচারা চার ভাইয়ের তিন ভাই ঢাকাতে থাকে। এবং একই এলাকাতে। যৌথ পরিবারের মানুষগুলোরর মধ্যে মমতা ব্যাপারটা বেশিই থাকে। আবিদার এই পরিবারগুলোর ঢাকাতে উঠাবসা সব একই সাথে। আবিদার দাদা আর নানী তাদের সাথে থাকেন। আবিদার দের পরিবার। ওর দুই চাচা আর যে মামাটা ওদের একই এলকাতে থাকে, তাদের কাছে এই দুজনই সর্বচ্চো সম্মানের। তাই দাদা আর নানীর অনকেগুলো বাড়ি। তাদের যেখানে মন চাই সেখানেই থাকেন। এই দুটো মানুষের কাছে ভালোবাসা নেবার, আবিদার ভালোবাসার ভাগ নেওয়ার ইচ্ছেটা অনেক আগে থেকেই।

দাদা গত বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ। একটা প্রায়ভেট হাসপাতালে ভর্তিও ছিল বেশকিছু দিন। তখনো দেখতে গিয়েছিলাম অপরিচিত হিসেবে। আজ আবিদার পরীক্ষা চলছিল। আবিদার ছোট বোন আমাদের প্রেমের কথা জানতো। সে আমাকে ফোন করে বললো দাদার অবস্থা ভালো না। আবিদার এক্সাম শেষ হলে ওকে নিয়ে নিউমার্কেট যাবার কথা ছিল আজ। নন্দিতা দিদির লাঞ্চের ইনভাইটেশনটাও ক্যানসিল করলাম। আবিদাকে কিছু না জানিয়ে রিক্সা ঠিক করে রওনা হলাম ওর বাসার উদ্দেশ্যে। সে তখনো কিছু জানে না।তাকে কিছুই বলিনি। বাসার কাছাকাছি গেলে সে ঘটনা কিছুটা আঁচ করে পেরেছিল। তখন তাকে জানালাম দাদা বেশ অসুস্থ। সে বাসায় সামনে গিয়েই বাসার গেটে এ্যাম্বুলেন্স দেখে কেঁদে ফেললো। দাদাকে তখন আনা হল একটা প্রায়ভেট হাসপাতালে। আমি খবর পেয়েই আগেই ছিলাম সেখানে। প্রতিটা ঘটনা ঘটছে খুব দ্রুতই। এ্যাম্বুলেন্স থেকে দাদাকে স্ট্রেচারে নামাতে অপরিচিত হিসেবে আমি ধরলাম। দাদা নামক মানুষটার স্পর্শ পেলাম। দাদা, আবিদার দাদা। তিনি আমারো দাদা। হাসপাতাল থেকে জানানো হল দাদাকে দ্রুত আইসিইউ তে নিতে হবে। তবে তাদের আইসিইউ খালি নেই। সানিয়ার বাসা থেকে আমাদের কথা জানে না। সানিয়া আমাকে ফোন করে আইসিইউ এর কথা জানালো। আমিও আমার মত করে চেষ্টা করতে লাগলাম। ততক্ষণে আবিদার সেজো চাচা আরেক হাসপাতালে আইসিইউ এর ব্যবস্থা করেছেন। দাদা কে দ্রুত নেওয়া হল সেখানে। এদিকে দাদার অবস্থা আরো খরাপের দিকে। তারা আইসিইউতে নিতে চাইলো না। দাদাকে বাসাতে নেওয়া হল। আমিও আবিদার পরিবারের সাথে অদৃশ্য ভাবে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরছি।

হাসপাতাল থেকে দাদাকে আবিদাদের বাসায় নেওয়া হল। এদিকে সকাল থেকে আবিদাদের বাসাতে ঢাকার সব আত্মীয়স্বজন জড়ো হয়েছে। দাদাকে বাসায় নেওয়া হল। বাসার অনেকেই তখন কুরআন পড়ছেন।
আমি বাসায় এসেছি ততক্ষণে। ঘুমাতে পারছি না। মনে ভয় কাজ করে কখন না জানি একটা দুঃসংবাদ শুনবো। মাগরিবের আজানের সময় সানিয়ার ছোটবোন ফোন করে জানালো দাদা মারা গেছেন। বলেই তার সে কি কান্না!
এশার নামাজের পর তার জানাজার কথা ছিল দাদা যেই মসজিদে নামাজ পড়তেন। আমি আর আমার বন্ধু নাহিদ গেলাম সেখানে নামাজ পড়তে। দাদাকে তখন গোসলে নিয়ে গেছে। আবিদার পিচ্চি চাচাতো ভাই আবরার বারবার সবাইকে জিজ্ঞেস করছিল- দাদা কোথায়? দাদাকে কোথায় নিছে? দাদা কখন আসবে?

দাদাকে গোসল করিয়ে আনতে দেরি হয়ে গেছে। আব্বু, আম্মু, (আবিদার আব্বু আম্মু), চাচা, চাচি, ঢাকাতে আরো যারা ছিলেন সবাই দাদাকে নিয়ে গ্রামে যাবে। গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স এসে গেছে। প্রতিবেশিদের কাছে ততক্ষণর আমাদের দাদার নাম হয়ে গেছে "লাশ" লাশের গাড়ি নিয়ে গ্রামে ফেরার দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমার আছে।

সবাই দোয়া করবেন দাদার জন্য। তার ভালোবাসা নেওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে ছুঁয়ে দেখেছি দাদা কে। এটা আমার কাছে অনেক।



ভালো লাগলে শেয়ার করুন 

শাহরিয়ার সোহাগ এর লেখা বইগুলো সম্পর্কে জানতে বা কিনতে ক্লিক করুন

No comments

Powered by Blogger.