Header Ads

তোর কি সেসব কথা মনে পড়ে বন্ধু?

তোর কি সেসব কথা মনে পড়ে বন্ধু,  লেখক শাহরিয়ার সোহাগ হয়ে ওঠার শুরুটা, Shahriar Sohag, romantic bangla poem, bangla poem for love, birthday wish bangla


২০১১ সালের ঘটনা।
পরিবার ছেড়ে কলেজে পড়তে আসা ছেলেটা তার পাশের মানুষগুলোর তাচ্ছিল্যে অতিষ্ট হয়ে ওঠে। তখন কথায় আঞ্চলিতা আসতো, এটা নিয়ে সবাই ঠাট্টা করতো। অনেকের সাথে কথা হলেও মন থেকে তখনো কারো সাথে মিশতে পারিনি। তবে এর পরবর্তী সময়ে কলেজ জীবনটা বেশ উপভোগ করেছি কিছু বন্ধুর জন্য।
ওর সাথে পরিচয় দেলোয়ার স্যারের ইংরেজী কোচিং এ। আমি পড়তাম আর্সে। আর একই কলেজে সে পড়তো কমার্সে। বন্ধুত্বের শুরুটা এখান থেকেই। তখন সময়ের সময়ের দেড় বছরে লাখ খানেক মোবাইলে ম্যাসেজ আদান-প্রদান হয়েছে আমাদের। ফেসবুকের এত ছড়াছড়ি কখন ছিল না আমাদের মধ্যে। তার সাথে আমার একটাই ছবি আছে। সেটাও কলেজ জীবন শেষে। আমাদের ফোনে খুব কথা হত। বলা যেতে পারে আমি কখন কোথায় কি করি সেটা আমার থেকে সে বেশি জানতো। আমি তার সব কথা শুনতাম, কারন এটুকু বিশ্বাস ছিল সে কখনো আমার খারাপ চাইবে না। আর সেও আমার কথা শুনতো। অসংখ্য দিন আমরা ঝগড়া করেছি। আমরা ঝগড়া করে ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকতাম তবে অভিমানে ফোন দিতাম না। রাগ ঝেড়ে সে ই আগে ফোন দিত। আমার বাসা ছিল মানিকপুর পুরাতন পটকা ফ্যাক্টরিতে। রাস্তার পাশের জানালায় এসে সে মাঝে মাঝে আমাকে ভয় দেখাতো।
কলেজ জীবনে তার টাকাতেই সেভ করতাম।
সে ছিল আমার লেখালেখির বিশাল ভক্ত। আমার অনেক লেখাই সে সবার আগে পড়েছে। আমার সে বইটা নিয়ে সবাই আর এত আলোচনা করে, বইটার নাম আমি দিয়েছিলাম 'বন্ধুত্বের ইতিকথা'। সে ই নাম বদলে দিলো "অসমাপ্ত বন্ধুত্ব"। সে হয়ত ভবিষ্যৎ বাণী পারতো। সে বলেছিল- 'দেখিস দোস্ত, তোর এই বইটা অনেক জনপ্রিয় হবে।' ঠিকই হয়েছে। আমার অপ্রাকাশ্য লেখাগুলো পড়তে পারা তখনকার সময়ে তার নেশা ছিল বলতে পারেন।
আমার মন খারাপ থাকলে সে প্রায়ই আমাকে খাওয়াতে নিয়ে যেত। বাসা থেকে যা টাকা দিত তাতে মাসের শেষ দিকে সে ই ছিল আমার ভরসা। তার কত টাকা যে পেটে ঢুকিয়েছি তার হিসেব নেই। আমি একবার প্রচন্ডে জ্বরে শয্যাশয়ী, সে ফল নিয়ে দেখতে এলো। কোচিং এ যাওয়া আসা একই সাথে হত। ওর আর শিলা তো জুটি ছিলি। তবে আমাদের মারামারিটা অনেক হত। কে বলবে তখন আমরা কলেজে পড়ি! প্রচন্ড শীতে পিচ্চিটা নাক মুখ ঢেকে পড়তে আসতো।
এই যে আজ আপনারা যারা আমাকে বলেন লেখালেখি চালিয়ে যেতে, তারা জানেন ই না আমার এই বন্ধুটা আমাকে লেখার জন্য কত জোর করতো! আমাকে বকা দিত! লেখালেখি ছোটবেলা থেকে করলেও বছর সাতেক আগে এই মানুষটার উৎসাহেই আজ আমি নামের শেষে 'লেখক' যোগ করতে পারি। আমাকে লেখক হতেই হবে- এজন্য তার উৎসাহ, তার স্যাকরিফাইস, তার গালাগালি কখনো ভুলবো না। তখন থেকে অভিনয় করতাম মঞ্চোতে। মনেতে ডিরেক্টর হবার বাসনা। সে একদিন বললো- আমি তোর অভিনয়, ডিরেকশন দেখিনি। তবে প্লিজ দোস্ত, তুই কখনো লেখালেখি ছাড়িস না।" হুমম। আমি আজো লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি রে দোস্ত।
অনেকেই আপনারা তার নাম জানেন। অসমাপ্ত বন্ধুত্ব বইটা পড়ে সবার প্রশ্ন প্রশ্ন ছিল - রিমু কে? হ্যা, এতক্ষণ যার কথা বলছি, সেই মানুষটার নাম রিমু। কম সময়ে তৈরী বন্ধুত্বের সম্পর্ক মানুষগুলোর মধ্যে সবার উপরে যে মানুষটা। আমার জীবনের প্রথম বই আমি এই মানুষটাকেই উৎসর্গ করেছি।
তাকে কখনো কিছু কিনে গিফট করেছি কি না মনে নেই। নাটকে আমার ব্যবহার করা গামছা দিয়েছিলাম একবার। রিমুর আর আমার রুমাল আর কলমের কোনো ঠিক ছিল না। দুজনই দুজনের টা মেরে দিতাম। এমনও হয়েছে ওর রুমাল চুরি করে রুমাল দেখে মনে পড়লো কোন একদিন এটা আমিই কিনেছিলাম। রিমু আমাকে ডায়েরি আর কলম বেশি গিফট করতো। তবে কত যে চেয়ে নিয়েছি তার ঠিক নেই।
রিমুর সাথে ২০১৩ সালের পর থেকে আমার আর যোগাযোগ নেই। সে আমাকে এড়িয়ে চলে, হয়তো কারণে বা কোনো কারণ ছাড়ায়। দিনে একশোবার কথা বলা বন্ধুটার সাথে এখন বছরে একবার কথা হয় না। রিমু হয়ত রিমুর মত করে ভালো আছে। আর আমি আমার মত করে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
দোস্ত, তোকে খুব মিস করি রে। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত। তোর শাসন, বকাগুলো, 'ঐ শালা' বলাটা বেশি মিস করি রে। ২০১২ সালে রাত ১২ টা ১২ মিনিটে তোর সাথে ১২ মিনিট ১২ সেকেন্ড কথা বলেছিলাম, মনে আছে? তোকে এতটাই মিস করি যে মাঝে মাঝে আমার প্রেমিকা আমাকে সন্দেহ করে জিজ্ঞেস করে তোর সাথে আমার প্রেম ছিল কি না? হাহাহা। আর আমার পাঠক মনে তো তুই এক কৌতূহলের নাম।
আমি কিন্তু এখনো কাউকে 'বেস্ট মর্নিং', 'বেস্ট নাইট' বলি না। কারণ অনেক বন্ধুর মধ্যে তুই ই ছিলি একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড। তবে এখন আর তোর নাম্বার থেকে কোনো এসএমএম আসে না।
আমার কাছে তোর নামটাও দিনে দিনে রহস্যময় হয়ে উঠছে। এই যেমন তুই কেমন আছিস, কি করিস, কোথায় আছিস এসব। শত মানুষের সহস্র দিনের লক্ষ স্মৃতির মাঝে সোহাগ নামটা কি তোর মনে আছে তো দোস্ত??  তোর কি সেসব কথা মনে পড়ে বন্ধু?
এক একটা সময় এক করে অনেকগুলো বছর তোর সাথে ঝগড়া করতে পারিনা। দেহের ভেতরের দমটা বন্ধ হয়ে আসে তোকে গালি দিতে পারি না বলে। কত দিন তোর চুল ধরে টানি না!
আমার কলেজ বন্ধু, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার জীবনের কম সময়ের সবচে বড় অংশ।
বিশ্বাস কর দোস্ত, তোর জায়গাতে কখনো কাউকে বসাইনি কখনো। তোকে নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করে, উত্তর দিতে পারি না। তোকে নিয়ে কিছুই বলতে পারি না। সে সময়ের স্মৃতিগুলো হাতড়ায়, তোকে খুঁজি, তবে পাই না। তোকে খুব ভালোবাসিরে দোস্ত। জীবনে খুব ভালো থাক। অনেক অনেক সুখী হ।

No comments

Powered by Blogger.