আমি তখন ভার্সিটির ফাস্ট ইয়ারে। সানিয়া তখন কলেজ ড্রেসের চঞল কিশোরী। বাসস্টান্ডে তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা, একই বাসে বাসায় ফেরা, বাসে ভিড়ের মধ্যে তাকে আমার সামনে রেখে প্রোটেক্ট করে হিরো হওয়া। গল্পটার শুরু এভাবেই।
একদিন সে আর বাসে উঠল না। সাইন্সল্যাব ওভারব্রীজ ক্রস করলো, আমিও তাকে ফলো করছিলাম। সে বুঝতে পেরে হেসেছিল। বাসে উঠেই রমনা। দুজনই নামলাম। তখনো দুজন একসাথে রিক্সায় ওঠার মত সাহস পাই নি।
আমার সাথে তার প্রথম কথা- আপনি কি আমাকে ফলো করছেন? আমি উত্তর দিয়েছিলাম হ্যা। তার কেন প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম তোমাকে ভালোবাসি তাই।
সাহস করে নিজের কথাটা বলেছিলাম। কারণ বিশ্বাস ছিল যে সে আর যাই হোক বকা দেবে না। সে ফুসকা খেতে চেয়েছিল। দুজন মিলে সেদিন ফুচকা খেয়েছিলাম। তার সাথে অনেক গল্প হয়েছে সেদিন।
প্রায় পাঁচ বছরের সম্পর্ক। কত স্মৃতিই তো জমে আছে। আজ তার বিয়ে।। সে আজ বউ সেজেছে। নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িকে আপন ভাবার শপথ নিয়ে। সে সবসময়ই বলতো তার বিয়েতে সে মেরুন রঙের শাড়ি পরবে। খবর পেয়েছি আজ তা ই পরেছে।
পাঁচ বছরের সুন্দর সময়ে কখনো দাগ লাগেনি। নিজের সাধ্যমত তার চাওয়া গুলো পূরন করেছি সব। সে যেটা খেতে চাইতো, যেখানে ঘুরতে যেতে চাইতো সব ইচ্ছাই সুপারম্যান এর মত পূরণ করতাম। তাই সে আমাকে তার সুপারম্যান বলে ডাকতো।
প্রেমিকার খোলা কেশ দেখতে আমার ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল। একদিন বৃষ্টি স্নাত সকালে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দুজন রমনা গেছিলাম। এই রমনা থেকেই তো আমাদের পথচলা শুরু হয়েছিল। পিচ্ছিল রাস্তায় হাটতে গিয়ে পিছলে পড়ার ভয়ে সে আমার হাত টেনে ধরেছিল। কথা দিয়েছিলাম তার হাত ছাড়বো না। তবে সুন্দর প্রেমের ইতি টেনে বাবার পছন্দের ছেলের সাথে আজ তার বিয়ে হচ্ছে।
বন্ধুরা এসে বারবার তার আপডেট দিচ্ছে আমাকে। বউ সাজে তাকে নাকি অনেক সুন্দর লাগছে। কি জানি? এত বছরে আগে তাকে এভাব তো দেখিনি।
পাঁচ বছরের প্রেমের স্মৃতিগুলো দিয়ে পাঁচ দুকুনা দশটা বই লিখতে পারবো আমি।
আমার স্মৃতি আর অনুভুতির পুরোটা জুড়েই তো গত পাঁচ বছরের সেই ছোট্ট সানিয়া।
সকালে ঘুমানোর মত বাজে অভ্যাস টা সানিয়ার জন্যই বদলাতে হয়েছে। তার ক্লাস সকাল সাতটাই। প্রেমের আগে সে একা আসতো ঠিক, তবে প্রেমের পরে মনে হত সে হয়ত পারবে না এক সকালে একা আসতে। তার উপর আবার মোহাম্মদপুর জিগাতলার রোডে ভোর সকালে ছিনতাই বেশি হয়।
আমি গত পাঁচটা বছর অলিখিত ভাবে তার পাহারাদার ছিলাম। পরিবার থেকে বেশিটা সময় সে আমাকে দিত। আর সেই মানুষটার আজ বিয়ে।
সবসময় তো আমি তাকে লেন্স পরিয়ে দিই। আজ কে পরিয়ে দিয়েছে কি জানি।
সানিয়া আজ বউ সেজেছে। আজ সানিয়া আহসানের বিয়ে। সানিয়ার বাসা লইটিং করা হয়েছে। শহরের নামকরা ফটোগ্রাফার ছবি তুলতে এসেছে। পার্লারের একদল এক্সার্ট এসেছে তাকে সাজাতে। সানিয়ার নামের শেষে নতুন পদবি যোগ হবে আজ।
সেই সানিয়া, গত পাঁচটা বছর আমি যার প্রেমিকে ভূমিকায় ছিলাম। আমি যাকে নিয়ে গল্প লিখতাম, কবিতা লিখতাম। গত পাঁচবছরে আমাদের প্রতিদিন ই একটা করে সুপ্রভাত আর গুড নাইট ছিল। প্রতিরাতে দুজনকে নিয়ে প্রায় হাজার দুয়েক স্বপ্ন ছিল।
আজ সানিয়ার বিয়ে। সানিয়া বউ সেজেছে। মেরুন রঙের শাড়ী পরেছে। চোখে লেন্সও পরেছে। গহনা আর ফুলে মুড়িয়ে রেখেছে নিজেকে। সেদিনের সেই পিচ্চি মেয়েটার আজ বিয়ে।
সানিয়া রেডি হয়ে গেছে। আমিই এখনো রেডি হতে পারলাম না। এত বড় লেখাটা লিখতেই সময় লাগল।
পাঁচ বছরের এই অলিখিত পাহারাদার আজ দায়িত্ব নেবে তার বাকিটা জীবনের। পাঁচ বছরের প্রেমিকা আজ থেকে আমার বউ হবে। পাঁচ বছরের প্রেমের অবসান। আজ থেকে আমরা স্বামী স্ত্রী হয়ে বাকিটা জীবন পার করার ওয়াদা করবো দুই পরিবার কে সাক্ষী করে।
সবাই দোয়া করবেন সোহাগ আর সানিয়ার জন্য।
ইতি-
শাহরিয়ার সোহাগ।
ভালো লাগলে শেয়ার করুন
No comments