Header Ads

কেমন আছো রাঁধা ?

 

Article,Books,slider,Writer,Featured, শাহরিয়ার সোহাগ, কেমন আছো রাঁধা, কেমন আছো রাঁধা, Shahriar Sohag;


কেমন আছো রাঁধা 


কেমন আছো রাঁধা? তোমাকে চিঠি লিখবো না লিখবো না ভেবে অবশেষে লিখতে বসলামম। কি করবো বলো, ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। আমারই বা দোষ কিসে বলো। সরকারি বাজেটের বাঁধগুলো তো এক বছরও টেকে না। আমার বাঁধ তো সেই তুলনায় অনেকদিন টেকসই ছিল। তবে দিনশেষে মানুষ বলে দাবি করি তো নিজেকে। অদৃশ্য বাঁধা, আর বাঁধ ভেঙে তাই আজ আমার এই আয়োজন তোমার জন্য। কি ভাবছো? আমি এতদিন পর হঠাৎ কোথা থেকে এলাম? সম্পর্কটা বর্তমান হলে আমি নিজেকে ফিনিক্স পাখি দাবি করতাম। তবে সম্পূক যখন অতীত, তখন নিজেকে ডুমুরের ফুল বলাটাই শ্রেয়। এবার তোমায় প্রশ্নের উত্তর দিই। চলমান মহামারীর এই বন্দি জীবনে টিভি দেখে আর সিগারেটে চুমু গুনে সময় পার করছি। এ বন্দি সময়ে যতগুলো সিগারেট টেনেছি, সে টাকা সরকারি কোষাগারে দিলে কিছু মানুষ অন্তত খেয়ে বাঁচতে পারতো। তবে তার আগে তো এই অখাদ্য খেয়ে নিজজের বেঁচে থাকাটা জরুরী। আর আমার টাকাটা শেষমেষ জনগনের কাজে আসবে এমন গ্যারান্টি দাবি করা আর বোকার রাজ্যে বাস করা একই কথা, তাই না? যেন আম ছালা দুটোই বেহাত হবার উপক্রম। একটা অন্তত থাকুক, কি বলো? হাতের সিগারেটটা শেষ করে টিভির সামনে বসেছিলাম তাবৎ দেশের খবর নেবো বলে। তবে কি আশ্চর্য, সব ছেড়ে এখন তোমার খবর নিতে আমার এই লিখতে বসা। রিমোট চাপতে চাপতে টিভি স্ক্রিনে হঠাৎ তোমায় দেখলাম।

তুমি তোমার ওই মধুর কন্ঠে গান শোনাচ্ছিলে। আমি বারবরই গানের ভক্ত। বিশেষ করে তোমার। ভেবো না প্রেমিকা ছিলে বলে একথা বলছি। তুমি আমার প্রেমিকা হবার আগে থেকেই তোমার গান আমার কানে আরাম দিত। আর প্রেমের পর তো ইচ্ছে মত তোমমার গান দিয়ে কান চুলকিয়ে নিতে পারতাম। থাক সেসবসব স্মৃতি রোমন্থন। সেটা কেবল কষ্ট ই দেবে। বর্তমান বলি তবে। তোমাকে বেশ মিষ্টি লাগছিল দেখতে। তুমি বদলাওনি দেখছি। এখনো সেই আগের মতই আছো। এক পাশ থেকে সিঁথি করা গোছালো চুল, চোখে কাজল, রং মেলানো ছোট্ট টিপ আর হাত ভর্তি শাড়ীর রঙের কাঁচের চুড়ি। তুমি তোমার প্রোগ্রামগুলোতে এভাবেই সেজে যাও। তোমার মনে আছে আমার সাথে দেখা করার সময়ও তুমি মাঝে মাঝে সেজে আসতে। তবে সেটাটা আমাদের ঘোরাঘুরির প্রথম দিককার কথা। আমি বলতাম- তুমি তো এমনিতেই অনেক সুন্দরি, সেজে আসার দরকার কি? আমি তোমার ভেতরের তুমিটাকেই ভালোবাসি। মানে সেসময়টাতে তুমি আমার বর্তমান ছিলে। তারপর থেকে তুমি আমার কাছে তোমার মত করে আসতে।
একটা অকৃত্রিম তুমি। আমি সেই অকৃত্রিম তুমিটাকেই ভীষণ ভালোবাসতাম। তোমার জন্য তোমার গলির মোড়ের চায়ের দোকানে অপেক্ষা করতে করতে কবিতা লিখতাম চায়ের কাপে চুমুক দিতে চিতে। আর তুমি আসলে কবিতা শোনাতাম তোমায়। ওই দোকানে একবার চায়ের বিল দেবার সময় দোকানকার শামসু ভাই দুইটাকা পরে নিতে বলেছিল। ওদিকে আর যাওয়াও হয়নি, আমার দুই টাকাটা ফেরত নেওয়াও হল না। তখন আমি সিগারেট খেতাম না। তুমি ব্যস্ত পার হবার সময় আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরতে। একদিন তো আমি তোমার নখের আঁচড়ে ব্যাথাও পেয়েছিলাম। তোমার মনে পড়ে- তুমি যেবার গান গেয়েছিলে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে, আমি সামনের সারিতে বসে তোমার গান শুনছিলাম। খুব সম্ভাবত স্বাধীনতা দিবসে হবে। গান শেষে ফেরার সময় তুমি তোমার বন্ধুদের এড়াতে আমাকে দূরে দূরে থাকতে বলেছিলে। আর আমি লুকিয়ে তোমাকে অনুসরণ করছিলাম। নিজে যে তিন গোয়েন্দার কিশোর পাশা মনে হচ্ছিল তখন। তারপর রাস্তা পার হয়ে, ফুলের দোকান গুলোর ওদিকটাই গিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় একটা রিক্সা ঠিক করে, হুট তুলে সোজা চলে গিয়েছিলাম হাতিরঝিল। লাল আর কালো রঙের শাড়িতে তোমাকে সেদিন বেশ লাগছিল। শাড়ীই যেন তোমার পূর্ণতা। সেদিনই প্রথম অনেকটা সময় একসাথে ছিলাম আমরা। আর তার প্রায় পুরোটা সময় ছিলাম তোমার হাত ধরে। শুধু হাত ঘেমে গেলে বদলে নিচ্ছিলাম হাত। তুমি বেশ ক্লান্ত ছিলে সেদিন। তবে আমার সাথে কিছুটা সময় বেশি থাকার জন্য কি নিদারুণ ভাবে ক্লান্তি লুকানোর চেষ্টা করছিলে তুমি। ভেবেছিলে আমি বুঝতে পারিনি? আমি বুঝেছিলাম, তবে স্বার্থপর স্বতঃস্ফূর্ত আমি তোমার ক্লান্তির তোয়াক্কা না করে পুরো ধন্যাজ্ঞান ঢেলে দিয়েছিলাম প্রেমে।
বেগুনবাড়ির দিকে লাল ইটের যে বিশাল সিঁড়িগুলো,
ওখানে বসে আমরা অনেকগুলো সন্ধ্যা কাটিয়েছি।
তুমি আমার কাঁধে মাথা রেখে দূরের বিল্ডিংগুলোর ছাদের উপরের চাঁদ দেখতে। তুমি গলাতে ঠান্ডা লাগার ভয় নিয়ে আমার সাথে হাতিরঝিলের ব্রীজের উপর তীব্র ঠান্ডা বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকতে শুধুমাত্র কিছু সুন্দর সময়ের আশায়। আচ্ছা, তখনকার সেই সুন্দর সময়গুলো এখন তোমাকে কষ্ট দেয় না? আমাকে তো দেয়। কাঁদায়ও। আচ্ছা, শান্তিনগরের সেই বার্গারের দোকানটাতে তুমি কি এখনো যাও? মনে আছে তোমার তুমি বার্গার খাওয়ার থেকে না খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে বেশি। আমি হঠাৎ কখন পানি চাইবো সেটা ভেবে তুমি বোতল হাতে বসে থাকতে। ওদিকে কি এখন যাও?
কিংবা সামনের ফুটপাত সেই দিয়ে এখন একা একা হাটো? তুমি সবসময় আমার বামহাত জড়িয়ে হাটতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনের যে ফুটপাতটা,
ওই রাস্তায় হাটার সময় কি এখনো আমার কথা মনে পড়ে তোমার? নাকি ব্যস্ততায় যাও ও না। কত সন্ধ্যা যে ওখানে আমরা হাত ধরে হেটেছি তার হিসাব তোমার ঈশ্বর আর আমার আল্লাহ ই ভালো জানেন। ওখানে হাটার সময় একদিন সে কি বালু ঝড়! তোমার মনে আছে? তুমি ভয় পেয়ে রাস্তার মধ্যে এত এত মানুষের মধ্যে চোখ বন্ধ করে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে। মুখ লুকিয়েছিলে আমার বুকে। আমি সে কি ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম। পাবো ই বা না কেন, একটা রিক্সাওয়ালা মামা কিভাবে যেন আমাদের দেখছিল।
আর বেইলী রোডের যাত্রীছাউনিটার কথা আমার এখনো ভীষণ মনে পড়ে। পাশে কেউ সিগারেট খেলে তুমি মুখ ঢেকে বসে থাকতে। ওখানে বসেই তো তুমি আমার হাত জড়িয়ে আমাকে গান শোনাতে - 'ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।' গানটা আমার ভীষণ রকমের পছন্দের ছিল। তাই তুমি আমাকে এই গানটা ই বেশি শোনাতে। এখন কেন জানি মনে হয় গানটা রুদ্র তার প্রেমিকা তসলিমার জন্য লিখলেও, তুমি গানটা গেয়েছিলে তোমার প্রেমিক এই আমার জন্যই। এই যেমন তোমাকে এখন কিছু বলতে হলে আকাশের ঠিকানাতে বলতে হয়। আজ অনেকদিন পর আমি আকাশের কাছে আমার সেই রাঁধার নামে চিঠি লিখছি। তোমার মনে পড়ে- আমি তোমাকে রাঁধা নামেই ডাকতাম। আর তুমি আমাকে ডাকতে কৃষ্ঞ নামে। কবি হয়ে কবিতার প্রেমিকাকে বহু উপমাতে সাজাতাম। সেটা তোমার পছন্দ ছিল না। তুমি সবসময় চায়তে তোমাকে এমন নামে ডাকি যে নামটা কেবল তোমার ই থাকে। হ্যাঁ, রাঁধা নামটা কেবলই তোমার জন্যই বরাদ্দ রেখেছিলাম। এখনো তেমনটাই আছে।
আকাশের ঠিকানাতে পাঠানো তোমাকে নিয়ে লেখা আমার এই চিঠিটা তোমার কাছে পৌঁছাবে কিনা, তুমি পড়বে কিনা সেটা আমি জানি না। পড়ার সময় হবে কি না এতকিছু না ভেবেই বড় আয়োজন করে আমি আজ তোমাকে লিখতে বসেছি। এই কবিতাটা আমি আকাশের ঠিকানাতে তোমার কাছে পাঠালাম।
কি জানি, তুমি চিঠিটা পাবে কি না। কিংবা চিঠিটা পেলেও আমার লেখার প্রতি আগের মত আগ্রহ থাকবে কি না।
তোমার মনে আছে, আমি খুব চা কফি পছন্দ করতাম। চা বাদে আমাদের প্রেম আড্ডা যেন জমতোই না। তুমি না খেলেও আমাকে দু-এককাপ চা খেতেই হবে।
হাতিরঝিল দিয়ে হেটে মধুবাগ বাজারের সেই চায়ের দোকানটাতে যতদিন লুকিয়ে চা খেতে গিয়েছি, ততবারই আমার সেই ছোট ভাই- আমাদের দেখে ফেলতো। কদিন আগে সেই ছোটভাই তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল। আমি তোমার হয়ে ওকে বলে দিয়েছি তুমি ভালো আছো। আমাদেরকে আবার যেতে বলেছে। ওখানে নাকি নতুন একটা চায়ের দোকান হয়েছে। মধুচা পাওয়া যায়। ওর দাওয়াত পেয়ে আমি কেবল মুচকি হেসেছি। মধুবাগে মধুচা, দারুনটা ব্যাপারটা? ওকে আমি বলতে পারিনি তোমার আমার আর একসাথে মধুবাগ যাওয়া হবে না। চা খাওয়ার কি যে এক বাজে অভ্যাস ছিল আমার। আমি চিনি কম খাই সেটা তোমার জানা ছিল। তুমিই দোকানদার মামা কে চিনি কম দিতে বলে দিতে। তোমার মনে আছে আমাদের প্রথম দেখার দিন, বইমেলার এক বিকেলে তুমি পেছন থেকে এসে চমকে দিয়েছিলে আমায়। আমি তো ভাবিই নি তুমি এভাবে আমাকে চমকে দেবে! তুমি খেয়েছিলে এককাপ কফি, আর আমি গুনে গুনে চার কাপ। রাস্তাঘাটে হঠাৎ হঠাৎ আমার চায়ের নেশা চাপতো। তোমার অবশ্য চা এত পছন্দ ছিল না। তোমার পছন্দের পুরো মানচিত্রটা আমার দখলে ছিল। যেদিন তোমার বাসাতে গিয়েছিলাম, সেদিনও তুমি আমার জন্য দুধকফি বানিয়েছিলে। তারপর দুজন মিলে তোমার বাসার সবচেয়ে বড় মগটাতে একসাথে কফি খেয়েছিলাম। সময়গুলো ভীষণ রকমের ভালো যাচ্ছিল আমাদের। তাই না? দুজনের সারাদিনের ব্যস্ততা সেরে, সারা সন্ধ্যে একসাথে থাকার পর আবার রাত জেগে ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতাম, তোমার কি মনে পড়ে রাঁধা, আমাদের সেই সময়গুলো? বেইলী রোড, তোমার বাসার গলি, রাজারবাগ ফুটপাত, হাতিরঝিল, হাটতে হাটতে এজিভি কলোনীতে যেতাম কেবল ডাব খেতে। অল্প সময়ে আমার গল্প ছিল অনেক।

হঠাৎ আমাদের সম্পর্কে কি এমন হল, না বুঝতে পারলে তুমি, না বুঝতে পারলাম আমি। সুন্দর সম্পর্কে খারাপের নজর পড়েছিল হয়ত। কি এক ভুল বোঝাবু্ঝিতে এক শহরে থেকেও দুজন আজ দুই দুনিয়ার বাসিন্দা। বেইলী রোডের সেই স্মৃতিবিজড়িত যাত্রীছাউনিতেই শেষ দেখা হয়েছিল আমাদের।
যেখানে আমার দোষ নেই সেখানে তুমি আমাকে ভুল বুঝে হেটে চলে গেলে আমাকে রেখে। আমি বারবার ভেবেছিলাম তুমি ফিরে তাকাবে। আমার শত ডাকেও তুমি সেদিন ফিরে তাকাও নি। তুমি তোমার মত হাটতে হাটতে দূরে মিলিয়ে গেলে। আমি অনেকটা রাত পর্যন্ত ওখানে বসে থেকে কেবল ভেবেছি তুমি আবারো ফিরে আসবে। কিন্তু তুমি আর আসো নি। সেই যে তুমি গেলে, আর ফিরলে না। একদিন, দুই দিন, এক সপ্তাহ, একমাস কথা না বলতে বলতে একসময় সে কি বিশাল দূরত্ব আসলো আমাদের মধ্যে। বিধাতা হয়ত চাননি তুমি আমি এক ছাদের নিচে থাকি। আমাদের বিচ্ছেদটা খুব সহজে হয়েছিল, তাই না রাধা? তবে তোমাকে ভুলে থাকাটা আমার জন্য সহজ হয়নি। তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা সময় আমাকে খুব কষ্ট দেয় প্রতিনিয়ত। কখনো কখনো অসহ্য হয়ে যায় সেসব ব্যাথা। কষ্টগুলোকে পুড়িয়ে মারতেই সিগারেট খাওয়া শুরু করেছি কয়েকমাস হবে। সিগারেট ভালো না। কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না, টাকা গুলোই নষ্ট হচ্ছে।

আজ হঠাৎ টিভিতে তোমাকে দেখলাম। টিভিতে তোমায় দেখে ফোনটা হাতে নিয়ে তোমায় কল করবো বলে ভেবেওছিলাম, আগে যেমন তোমাকে ফোন করে জানাতাম - আমি তোমাকে দেখছি। তবে ঠিক কল করবার আগে মনে পড়লো তোমার পাশে তোমার স্বামী থাকতে পারে। তোমাকে কল দেওয়াটা কি ঠিক হবে?

আমার সাথে তোমার সেই ভুল বোঝাবু্ঝিতে, আমার সাথে জেদ করেই বাড়িতে তুমি তোমার বিয়ের ইচ্ছের কথা জানালে। চোখের পলকে তুমি অন্য কারো হয়ে গেলে। জানি তুমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলে না। জেদের বশে বিয়ে করার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল নাকি ঠিক ছিল সে বিচার করার দায়িত্ব থেকে তুমি আমাকে বেশ আগেই অবসর দিয়েছো। তাই এব্যাপারে আমার কোননো মন্তব্য নেই। জীবনটা যেদিন আমাদের আলাদা হয়ে গিয়েছিল সেদিন থেকে তোমার কোনো সিদ্ধান্ত আমি নক গলাই নি পর্যন্ত। তবে খুব করে দেখা করতে চাইতাম, তোমার ভুল ভাঙাতে চাইতাম। তুমি আমাকে সে সুযোগটা দেওনি একবারের জন্যও। তুমি আমাকে যতটা খারাপ ভেবে দূরে ঠেলে দিয়েছো, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ততটা খারাপ আমি না। আমি একথাও নিশ্চিত করে বলতে পারি তুমি ঠিক কি কারণে আমাকে দূরে সরিয়েছো তার যৌক্তিক কোনো কারণও তুমি বলতে পারবে না। তবে আমি কখনো জিজ্ঞেস করবো না। তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আবেগে জমানো অভিযোগ লেখা খাতাটা কদিন আগে সজ্ঞানে পুড়িয়ে ফেলেছি সিগারেটে আগুন জ্বালাবার পর ম্যাচের কাঠির বাকি আগুনে। আমার চোখে তুমি আমার জীবনের একটা সুন্দর সময়ের সেই সময়কার একমাত্র সঙ্গী। যার সাথে আমার জীবনের অনেকগুলো সুন্দর সময় আছে। তবে মজার ব্যাপার কি জানো, আমাদের এই গল্পগুলো কখনো তৃতীয় পক্ষ্যের কানে পৌঁছাবে না। এখন যে যার মত ব্যস্ত হয়ে গেছে। তুমি ব্যস্ত গান আর সংসারে। আমি ব্যস্ত তোমাকে ভুলতে। তোমাকে ভুলতে গিয়ে একটা ব্যাপার উপলব্ধি করলাম। কাউকে বারবরবার ভুলতে চায়লে সে মানুষটা তার মনে আরো শক্ত করে জেঁকে বসে। এই যেমন আমার মনে তুমি। যতবার ভেবেছি ভুলে যাব, কারও বেশি মনে পড়ে যায়। গানটা তো আমার সাথে মিলে যায়। তুমি হঠাৎ এই গানটা হায়লে কেনন আজ! গানের অনুষ্ঠানটাতে সবাই তোমার গানে মুদ্ধ হচ্ছিল হয়ত, তবে আমি তোমার চুলের নিচে- অল্প একটু সিঁদুর দেখেছিলাম। একদিক থেকে সিঁথি করা বলে সিঁদুর চাপা পড়েছে চুলের নিচে।
আচ্ছা আমার মত তোমার স্বামীও কি তোমাকে প্রোগ্রাম শেষে আনতে যায়। হয়তোবা যায়। হয়তবা সে আমার থেকেও বেশি কেয়ারিং। আমি তো সুন্দরি প্রেমিকা নিয়ে খুব টেনশনে থাকতাম। আর তার তো ঘরে সুন্দরি বউ। টেনশন তো থাকবেই। তোমার মনে আছে একদিন তোমার প্রোগ্রামে কল করতে করতে বুগো হয়ে গেছিলাম কিন্তু লাইনে পাইনি। শেষমেষ তোমাকে বলবো বলে লেখা কবিতাটা তোমায় সরাসরি শুনিয়েছিলাম হাতিরঝিলের সেই লাল সিঁড়িতে বসে।
আমাদের সেই ইচ্ছেগুলোর কথা তোমার মনে আছে? তুমি চাকরি করবে, আর আমি লেখালেখি করবো। আমরা বাসা নেবো তোমার অফিসের কাছাকাছি, লেখালেখির জন্য আমার আলাদা ঘর থাকবে। আমরা কয়টা বাচ্চা নেবো, বাচ্চার নাম রাখবো,
সব ঠিক করে রেখেছিলাম সেই অল্প ক দিনেই।
আচ্ছা ভালো কথা, তোমাদের বাচ্চার নাম কি রাখবে?
আমাদের পছন্দ করা নাম? নাকি বাচ্চার বাবার পছন্দ করা নাম? নাকি তোমাদের দুজনের নাম মিলিয়ে নতুন নাম রাখবে। তোমার মনে পড়ে, তোমার পছন্দের বেলী ফুল এনে তোমার অভিমান ভাঙিয়েছি বহুবার। তোমার সাথে স্বামীবাগের সেই হোটেলটাতে- ভর্তা দিয়ে খাওয়া হল না। প্রিয় সমুদ্র দেখাও হল না। তোমার একটা ইচ্ছে ছিল, বিয়ের পর আমি যখন রাত জেগে গল্প লিখবো, তখন তুমি আমাকে খুব জ্বালাবে। অথচ প্রায়শ রাত জেগে গল্প কবিতা লিখি, তুমি আমাকে এতটুকুও বিরক্ত করো না। আমরা বিধাতার একই আকাশের নিচে থাকি। তবে আজ আমাদের ঘরদুটো আলাদা, তাই না? আচ্ছা রাঁধা, তুমি কি এখনো আমার লেখা পড়ো? তুমি কি এখন আমায় দেখলে চিনতে পারবে?

আমি যখন তোমায় বলতাম আমি দাড়িগোঁফ রেখে সন্নাসী হবো, তুমি আমাকে খুব করে বকতে।
তোমার পছন্দ ছিল আমার ছোট চুল আর মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়ি। সে দাঁড়ি তোমার গালে ঘষে লাল করে দেওয়া ছিল আমার বেশ পছন্দের কাজ। অথচ আমার পছন্দ বড় চুল আর মুখভর্তি দাঁড়ি। তুমি আমাকে প্রায়ই চুল কাটতে বলতে। আর আমি তোমাকে বোঝাতাম- ছোট চুল টেনে তুমি আমায় আদর করতে পারবে না।
করোনার এই মহামারীতে বন্দি জীবনে আমার চুলগুলো বেশ বড় হয়েছে। তুমি কি এখন আমায় দেখলে চিনতে পারবে প্রিয়? আচ্ছা না চিনতে পারো, এখন তো বলো কেমন আছো? নতুন মানুষের সাথে সংসার, নতুন একটা পরিবারের- সাথে সম্পর্ক। সব মিলে কেমন চলছে তোমার দিনকাল। এখনো কি মাঝ রাতে হঠাৎ তোমার মন খারাপ হয়? যদি মন খারাপ হয়ও, তুমি আগে যেমন আমার কবিতা শুনে মন ভালো করতে, এখন কিভাবে মন ভালো করো? নাকি তোমার বর্তমান তোমার মন খারাপ হতেই দেয় না। আমি সবসময়ই চাই তুমি ভালো থাকো। তোমার মত করে ভালো থাকো।

একটা কথা রাখবে রাঁধা? আবার যদি কখনো দেখা হয়ে যায় এই মায়ার তল্লাটে, সেদিন তুমি একটা গান শুনিও আমায়। সেদিন আমায় একটু ছুঁতে দেবে?
আমার না খুব করে ইচ্ছে করে তোমায় ছুঁয়ে দেখার।
একবারের জন্য হলেও যদি তোমাকে আমার বুকে খুব করে চেপে ধরে তোমার কপালে চুমু দিই, তুমি কি নেবে সে চুমু? আর যদি এই মহামারীতে অসুস্হ আমি মারা যাই, তুমি আমার মুখটা শেষবারের মত দেখতে আসবে তো তোমার ব্যস্ত সময় আর প্রতিকূল অবস্থার মাঝে?
যদি আসো, তুমি তখন আমাকে একটু হলেও ছুঁয়ে দিও। তোমাকে আমি ধন্যবাদটাও বলতে পারবো না তখন। চোখ খুলে দেখবোও না তোমাকে, তবুও,
একটু ছুঁয়ে দিও। ভালো থাকো রাঁধা।


ইতি- তোমার অতীত,
কবি, কিংবা কৃষ্ঞ।

শাহরিয়ার সোহাগ

 

ভালো লাগলে শেয়ার করুন 

শাহরিয়ার সোহাগ এর লেখা বইগুলো সম্পর্কে জানতে বা কিনতে ক্লিক করুন

No comments

Powered by Blogger.