Header Ads

প্রিয় মানুষ


প্রিয় মানুষ, শাহরিয়ার সোহাগ, shahriar sohag book, bangla romantic book, bangla love sms, rokomari books, daraz books, bangla love book

প্রিয় মানুষ 

দীর্ঘ মেডিকেল জীবনের পর কদিন আগে তোমার নামের আগে কাঙ্খিত "ডাক্তার" শব্দটা যুক্ত করার অফিসিয়াল অনুমতি পেয়েছো। বাড়ির বড় মেয়ে ডাক্তার হবে, এটা ছিল আব্বু আম্মুর স্বপ্ন। তুমি তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছো। আমার সাথে তোমার পরিচয় তুমি মেডিকেলে ভর্তি হবার বছরেই। লিটন চাচ্চু, ইকবাল চাচ্চু, দাদা, নানী, বড় মামা সবার দোয়াতে তুমি আজ তোমার বর্তমান অবস্থানে এসেছো। আমি তোমার সময়টাতে তোমার পাশে থেকেছি মাত্র।

আজ তুমি ডাক্তার।
তুমি ডাক্তার হয়েছো মানুষের সেবার জন্যই। গত পাঁচটা বছর আমিও তোমাকে একথাটা বহুবার বলেছি- তোমার কাজ সেবাদান, উপার্জন নয়। দিন কোন না কোনো ভাবে চলে যাবে। তবে চিকিৎসার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জীবনটা যেন থমকে যাবে।

তুমি কিংবা আমি আমাদের দেশটাকে কতটা ভালোবাসি সেটা আমরা জানি। দেশের এই নিকট দুঃসময়ে তোমার দায়িত্ব যে সবচে বেশি। আমি তো দুকলম লিখেই খালাস। আগামি সপ্তাহে তোমার ইন্টার্নী শুরু হবে। আমি হয়ত ঘরে বসে আগামি বইমেলার জন্য লিখবো। তবে তোমাকে ঠিকই এই মহামারীতে কাজ করতে হবে। আমি বরাবরই তোমাদের পেশাকে শ্রদ্ধা করি। কারণ আমার চোখে তোমরাই শ্রেষ্ট। হতাশাগ্রস্থ পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর মত অসম্ভবকে তোমরাই সম্ভব করো প্রতিনিয়ত। দেশের এই খারাপ সময়ে তুমি আর তোমার পেশার সব মানুষগুলোর সুস্থতা কামনা করি। তোমাদের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। যদিও এরপরও একদল মানুষ তোমাদের পিছে লাগবে। আশা হারিও না প্রিয়। তোমরাই এই জাতীয় দুঃসময়ে একমাত্র আলোকবর্তিকা। কিছু মানুষের জন্মই হয়েছে কথা বলার জন্য। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মেডিকেল ইকুভমেন্ডের অনেক বেশিই ঘাটতি সেটা জানি। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করবে তোমরা, আর উনারা ভিক্রি সাইন দেখিয়ে সংংবাদ সম্মেলনে এতবার "আমরা" শব্দ ব্যবহার করবে, মনে হবে যে তারাই সব উদ্ধার করেছে। তোমার জন্য একটা ড্রেসের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।

পাঁচ বছরে নিয়ম করে নিয়মিত দেখা করা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডের শেষে, আইটেম, কার্ড, ফাইনালের শুরু আর শেষে কোকড়া চুলের এই মুখটা না দেখলে তুমি শান্তি পেতে না। আমিও উদগ্রীব থাকতাম তোমার মায়ামুখের হাসি দেখতে। পাঁচ বছরের স্মৃতিচারণেও বছর খানেক সময় লাগবে, তাই না?

করোনাতে বহু ডাক্তার আক্রন্ত হয়েছে আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে। উন্নত বিশ্বে মারাও গেছে অনেক ডাক্তার। তবুও আমি তোমাদের দিয়ে আশাবাদি। গনস্বাস্থ্য মেডিকেলের সাম্প্রতিক সাফল্য
আমাদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। তোমারাও পারবে।
আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও ধন্যবাদ এগিয়ে আসবার জন্য

তোমার জন্য কিছু কথা।
হয়ত নিয়মিত দেখা হবে না এই মুহূর্তে। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবে। তোমার গুরুত্বের সর্বচ্চোটা যেন থাকে তোমার রোগীর জন্য। আমি তো বাকি সময়ের পুরোটা সময়ই তোমার থাকবো। খেয়ে নেবে ঠিক মত, যদি সময় পাও। সময় না পেলে খাওয়ার দরকার নেই। এটা তোমার পেশাগত জীবনের প্রথমেই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে নিজের সেফটির ব্যাপারটাও খেয়াল রেখো। কোন মন্ত্রী কি বললো, রোগীন কোন আত্মীয় কি বললো এসব তোমার ভাবনাতে এনো না। আপাতত মাথাতে রোগী আর ওষুধ রাখো। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ডার্লিং পয়েন্টের শুকটি ভর্তা আর কালো ভুনা খাবো এক দুপুরে। গত দিন তো বন্ধ ছিল সব। ঢামেকে না হয় আবারো চটপতি খেতে যাব। গোলাপগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বুড়িগঙ্গা, দিয়াবাড়িতেও নিয়ে যাব।
কৌশিকের ফার্মেসী প্রায় রেডি। ওখানেও চেম্বার করবে তুমি। আমি এখনো তোমার পরিবারের কেউ হতে পারিনি। আব্বু আম্মুও তোমার ভালো চান নিশ্চয়ই। এমন কিছু করো যেন তাদের সম্মান বাড়ে। জীবনের নিশ্চয়তা কারোরই নেই। তবে এই ক্ষুদ্র জীবন ভাগ হয়ে ছড়িয়ে যাক লাখো মনে-প্রাণে-দেহে।

তোমার কিচ্ছু হবে না প্রিয়। সাহস রাখো মনে। তুমি পারবে। এবং তোমরা পারবেই। দেশের জন্য যদি নিজেকে উৎসর্গ করার প্রয়োজন মনে হয়, তবে একবিন্দুও ভাববে না। মনে রাখবে পরিবার, প্রিয়জনের উর্ধ্বে তোমার আমার বাংলাদেশ। আমি বইলিখে মানুষের আনন্দ দিই, ফটোগ্রাফিতে মানুষের সুন্দর সময়গুলোকে ক্যামেরাবন্দি করি ঠিকই, তবে সেই মানুষগুলোর মুখের হাসির জন্য একমাত্র অবদান তোমাদের, আপনাদের। দেশের নামটা আর সমসাময়িক অবস্থা লেখার সময় হাত কেঁপে উঠছে বারবার। কোথায় আছি, কোন দিকে যাচ্ছে আমার দেষ, ভেবে কুল পাই না। তবুও ভাবি, আলো ফুটবেই। এবং তোমরা একেকজন ডাক্তার যেন একেকটা আলোকবর্তিকা।

তুমিই বাংলাদেশ প্রিয় মানুষ। তোমার মত একজনের সাথে এতগুলো সময় কাটাতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।

পাঠক,
আপনার প্রিয়জনের কথা ভেবে আমার প্রিয়জন হাসপাতালে। আমার প্রিয়জনের কথা ভেবে আপনারাও বাড়িতে থাকুন প্লিজ। ভালো থাকুক সবার প্রিয়জন। নিজে সচেতন হন। পরিচ্ছন্ন থাকুন সর্বদা। করোনা নিয়ে ঠাট্টা, ট্রোল করবেন না প্লিজ। ডাক্তারদের জন্য দোয়া করবেন প্লিজ। তারা ভালো থাকলেই ভালো থাকবে আপনার প্রিয়জন। আমরা একদিন এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

- শাহরিয়ার সোহাগ

 


ভালো লাগলে শেয়ার করুন 

শাহরিয়ার সোহাগ এর লেখা বইগুলো সম্পর্কে জানতে বা কিনতে ক্লিক করুন

No comments

Powered by Blogger.