প্রিয় মানুষ
প্রিয় মানুষ
দীর্ঘ মেডিকেল জীবনের পর কদিন আগে তোমার নামের আগে কাঙ্খিত "ডাক্তার" শব্দটা যুক্ত করার অফিসিয়াল অনুমতি পেয়েছো। বাড়ির বড় মেয়ে ডাক্তার হবে, এটা ছিল আব্বু আম্মুর স্বপ্ন। তুমি তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছো। আমার সাথে তোমার পরিচয় তুমি মেডিকেলে ভর্তি হবার বছরেই। লিটন চাচ্চু, ইকবাল চাচ্চু, দাদা, নানী, বড় মামা সবার দোয়াতে তুমি আজ তোমার বর্তমান অবস্থানে এসেছো। আমি তোমার সময়টাতে তোমার পাশে থেকেছি মাত্র।
তুমি কিংবা আমি আমাদের দেশটাকে কতটা ভালোবাসি সেটা আমরা জানি। দেশের এই নিকট দুঃসময়ে তোমার দায়িত্ব যে সবচে বেশি। আমি তো দুকলম লিখেই খালাস। আগামি সপ্তাহে তোমার ইন্টার্নী শুরু হবে। আমি হয়ত ঘরে বসে আগামি বইমেলার জন্য লিখবো। তবে তোমাকে ঠিকই এই মহামারীতে কাজ করতে হবে। আমি বরাবরই তোমাদের পেশাকে শ্রদ্ধা করি। কারণ আমার চোখে তোমরাই শ্রেষ্ট। হতাশাগ্রস্থ পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর মত অসম্ভবকে তোমরাই সম্ভব করো প্রতিনিয়ত। দেশের এই খারাপ সময়ে তুমি আর তোমার পেশার সব মানুষগুলোর সুস্থতা কামনা করি। তোমাদের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। যদিও এরপরও একদল মানুষ তোমাদের পিছে লাগবে। আশা হারিও না প্রিয়। তোমরাই এই জাতীয় দুঃসময়ে একমাত্র আলোকবর্তিকা। কিছু মানুষের জন্মই হয়েছে কথা বলার জন্য। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মেডিকেল ইকুভমেন্ডের অনেক বেশিই ঘাটতি সেটা জানি। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করবে তোমরা, আর উনারা ভিক্রি সাইন দেখিয়ে সংংবাদ সম্মেলনে এতবার
"আমরা" শব্দ ব্যবহার করবে, মনে হবে যে তারাই সব উদ্ধার করেছে। তোমার জন্য একটা ড্রেসের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।
পাঁচ বছরে নিয়ম করে নিয়মিত দেখা করা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডের শেষে, আইটেম, কার্ড, ফাইনালের শুরু আর শেষে কোকড়া চুলের এই মুখটা না দেখলে তুমি শান্তি পেতে না। আমিও উদগ্রীব থাকতাম তোমার মায়ামুখের হাসি দেখতে। পাঁচ বছরের স্মৃতিচারণেও বছর খানেক সময় লাগবে, তাই না?
তোমার কিচ্ছু হবে না প্রিয়। সাহস রাখো মনে। তুমি পারবে। এবং তোমরা পারবেই। দেশের জন্য যদি নিজেকে উৎসর্গ করার প্রয়োজন মনে হয়, তবে একবিন্দুও ভাববে না। মনে রাখবে পরিবার, প্রিয়জনের উর্ধ্বে তোমার আমার বাংলাদেশ। আমি বইলিখে মানুষের আনন্দ দিই, ফটোগ্রাফিতে মানুষের সুন্দর সময়গুলোকে ক্যামেরাবন্দি করি ঠিকই, তবে সেই মানুষগুলোর মুখের হাসির জন্য একমাত্র অবদান তোমাদের, আপনাদের। দেশের নামটা আর সমসাময়িক অবস্থা লেখার সময় হাত কেঁপে উঠছে বারবার। কোথায় আছি, কোন দিকে যাচ্ছে আমার দেষ, ভেবে কুল পাই না। তবুও ভাবি, আলো ফুটবেই। এবং তোমরা একেকজন ডাক্তার যেন একেকটা আলোকবর্তিকা।
তুমিই বাংলাদেশ প্রিয় মানুষ। তোমার মত একজনের সাথে এতগুলো সময় কাটাতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।
- শাহরিয়ার সোহাগ
No comments