আমাদের বেলা স্কুল মাঠ
আমাদের বেলা স্কুল মাঠ
এখন বিকাল হলে সৈকত বাসায় এসে খেলতে যেতে ডাকে না। কৌশিক বাসার সামনে এসে বিভিন্ন শব্দ করে ডাকে না। মা এখন বলেনা পড়া শেষ না হলে খেলতে যেতে দেবে না। খেলাতে কৌশিক আউট হলে স্টাম্প নিয়ে চলে যাবার হুমকি দিতো, কারো উপর রাগ করলে বল করার ছলে গায়ের জোরে বল করে তার গায়ে মারতো। সেসব অতীত এখন। সৈকত, কৌশিক, আমি, মামুন, রিয়াম, খালেদ, চন্দন, নিপুন, সোহান, হাসিব, সুমন কতদিন দেখা হয় না তোদের সাথে। মিঠুন দা রোগীর জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। গালিব ভাই দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত। এই ব্যস্ততাতেও গালিব ভাইয়ের একতলা সমান নো বল, ফাস্ট বলের সময় তার সেই আওয়াজ বড্ড মিস করি। ২ টাকা করে চাঁদা দিয়ে বল কিনতাম। কেউ কেউ ৫ টাকাও দিতো। রাবার ডিউজ থেকে উন্নতি হয়ে টেপটেনিসে খেলা আমাদের সেই দিনগুলো চাইলেও ফিরে আসবে না। ব্যাটিং এর নাম্বারিং লিখে ব্যাট দিয়ে ঢেকে রেখে একেকজন একেকটা দাগ ধরতো, সেভাবেই হত ব্যাটিং এর সিরিয়াল।
দল ভাগ করার সময় আমি প্রথমেই সৈকতকে নিতাম। কৌশিক মাঠের বাইরে লুকিয়ে থাকতো। সবাই জানতো কৌশিক আসবে কি আসবে না সেটা সিওর না। ভাগাভাগিতে যখন আমার পালা, কৌশিক বান্দা হাজির হতো। ব্যাচ, আমি কৌশিককে নিতাম। সৈকত-কৌশিক-আমি এই তিনজনকে এক দলে পড়তেই হবে। তাহলেই তো খেলা জমে যাবে বাতাবি লেবু গাছের ডালে আর ঝুলা হবে না। তন্মনা আপুদের বাসায় বল গেলে আন্টির ভয়ে কেউ আনতে যেতাম না। যে বল মারবে, তাকেই আনতে হবে। এসব কিছুই আর জীবনে আসবে না হয়তো। সময় মিলিয়ে বেলাস্কুল মাঠে গল্প করার জন্যও কাউকে পাওয়া যাবে না। দুই দলের ২২ টাকার খেলা এখন হবে না। সবুজ কুঁড়ি স্কুলে ইচ্ছে করে বল মেরে বল আনার অযুহাতে আমড়া পেড়ে খাওয়া হবে না। আগে ব্যাট করে বল করার সময় ইচ্ছে করে বল লুকিয়ে খেলা শেষ করে দেওয়াটা হবে না। যত বড় সিক্স ই মারি না কেন বল মাঠের ভেতরে থাকলেই সিক্স হবে। বল উড়ে মাঠের বাইরে গেলেই আউট, সেই সাথে ব্যাটসম্যানকে বল কুড়াতে যেতে হবে। ড্রপ লেগে বল বাইরে গেলে ফিল্ডারকে আনতে হতো। রানার মা মাঠে এসে সেলাই করতো। আমরা চিল্লাচিল্লি করতে যা তা বলে চিল্লাচিল্লি করতো আমাদের সাথে। এজন্য অবশ্য তাকে মনে মনে সবাই অপছন্দ করতো। নিজেরা ব্যাটিং করার পর বিপরীত দল যখন ব্যাটে যাবে, তখন মাগরিবের আযান দিলে ফিল্ডিং না করার আনন্দেই আমরা কুটি কুটি হয়ে যেকাম। মহাসীন চাচুর দোকানে এখন বল কিনতে যাওয়া হয় না। স্টাম্প পুতে গর্ত করার জন্য আসাদুল চাচু আর আমাদের বকবে না। আমরা সবাই এখন স্বাধীন। বকা খাওয়ার ঊর্ধ্বে। সীমান্ত এলাকা চৌগাছার সেই খেলার মাঠের এই মানুষগুলো সবাই আমরা বড় হয়ে গেছি। বড় বড় দায়িত্ব সামলাতে হয় আমাদের। এখন এটাই আমাদের জীবন। যে দিন গেছে, ফিরবে না তা আর। শুধু একটু থামলে পড়বে মনে কি সময় দিন ছিল আমাদের।
শাহরিয়ার সোহাগ
No comments