Header Ads

সোহাগনামা || পর্ব - ৮

 

Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, sohagnama, সোহাগনামা ৮

রিমু হয়তো বা আর দশটা সাধারণ মানুষের কাছে খুব সাধারন। তবে আমি রিমুকে অসাধারন রুপের পেয়েছিলাম। অথবা আমার চোখে রিমু অসাধারণ ছিল। অথবা সে সত্যিই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের একটা মানুষ ছিল। যদি কোন কিছুর সাথে তুলনা করা হয়, বরাবরই আমি রিমুকে জিতিয়ে দিয়েছি। আমার কাছের মানুষদের কাছে এই নামটা বেশ জনপ্রিয় আর রহস্যময়ী। ওর মত ওর নামটাও ছোট। তবে তার মনটা অনেক বড় ছিল। অনেক বড় বলতে আকাশ বা সাগরের মত, অথবা তার চেয়েও বড়। যদি আমাকে বলতে বলা হয় আমি এখনো আমার কোন বন্ধুটাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি কিংবা মিস করি, আমি ওর নামটাই বলবো। আমি বিশ্বাস করি মানুষ তার কৃতকর্মের ফল বেঁচে থাকাকালীন কিছুটা পায়, আর বাকিটা পরকালে। হয়তো বা মাঝেমধ্যে এমন কোনো ভালো কাজ করেছিলাম যার বদৌলতে সৃষ্টিকর্তা আমাকে একটা বন্ধু দান করেছিলেন। রিমুর সাথে আমার বন্ধুত্ব শুরু হয় ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২, দেলোয়ার স্যারের কোচিং শেষে কাচারিতে ফুচকা খেতে গিয়ে। তবে পরিচয়টা আরো বেশ কিছুদিন আগে থেকে। প্রথমে আমরা দু'জন দু'জনকে তুমি বলে ডাকতাম। আর তারপর তুই-তামারি শুরু। আমাদের মধ্যে বেশকিছু নিকনেম ছিল। ইডিয়েট, হটকাট, হনুমান। অবশ্য এর বাইরেও আরো বেশ কিছু নাম ছিল, তবে সেগুলো আর না বলি। একবার আমি রিমুকে বেশ বোকা বানিয়েছিলাম। আমি রিমুকে বলেছিলাম আমি আমাদের বন্ধু সাকিবকে বলেছি রিমু সাকিব কে ভালোবাসে। তবে সত্যিটা হলো রিমু আমাকে তেমন কোনো কিছুই বলেনি। আচ্ছা রকম চিল্লাচিল্লি করলো আমার সাথে। আর আমি শর্ত দিয়েছি আমাকে খাওয়াতে হবে। সে খাওয়াতে রাজি হল না। তার কথা হলো- আমি যদি এমনিই খেতে চাইতাম, তাহলে সে খাওয়াতো। তবে এখন সে খাওয়াবে না। আর আমার উত্তর ছিল ব্ল্যাকমেইল করে খাওয়ার একটা আলাদা মজা আছে। রিমু বিষয়টা নিয়ে খুব টেনশনে ছিল। পরদিন শুক্রবার। শনিবারে কলেজে গিয়ে রিমু সাকিবকে সত্যিটা বলে দেবে। আমি শনিবার তাড়াতাড়ি কলেজে গেলাম। সাকিবকেও তাড়াতাড়ি কলেজ আসতে বললাম ওর সাথে আমার জরুরী কথা আছে এই বলে। কলেজ গিয়ে দেখলাম সাকিবের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। মাথায় শয়তানি বুদ্ধি এলো। আমি বললাম- রিমু ঠিকই বলেছে।

- কি বলেছে?

- তোর চেহারাটা সুন্দর। তবে মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ির জন্য তোকে ছাগলের মত দেখাচ্ছে। রিমু দাড়ি কাটতে বলেছে।

আমার এই কথায় পুরো বিষয়টা আবার উল্টে গেলো। রিমু কলেজে গিয়েয়ে সাকিবকে খু্ঁজছিল, আর সাকিব রিমুকে দেখে লজ্জায় পালাচ্ছে। কারণ রিমু তাকে ইনডিরেক্টলি ছাগল বলেছে। রিমু নিচতলায় থাকলে সাকিব থেকে চারতলায়। আর রিমু চারতলায় থাকলে সাকিব থাকে মাঠে। আমি পুরো বিষয়টা দারুণভাবে এনজয় করছিলাম। রিমু কোনো ভাবেই সেদিন সাকিবকে বলার সুযোগ পেলো না মূল ঘটনাটা।

সেদিন বিকেলে রিমু তো রীতিমতো আমার উপর ক্ষেপে আছে। আমি সাকিবকে কল করে বললাম - কি করা যায়? রিমু তোকে লজ্জা দিলো! তাহলে এখন একটা কাজ কর, তুই রিমুকে কল কর, আমি নাম্বার দিচ্ছি। রিমু কে কল করে বলবি - রিমু কথাটা তুমি সোহাগকে বললে কেন? ও যদি সবাইকে বলে দেয়? তুমি তো নিজেই আমাকে বলতে পারতে, আমি রাগ করতাম না। আর এই কথা তুমিই আমাকে ফাস্ট বললে। আমার কথা মতো সাকিব রিমুকে কথাগুলো বলে কয়েক ঘন্টা মোবাইল বন্ধ রাখলো। সুতরাং সাকিবের সাথে যোগাযোগের আর কোন উপায় ছিলোনা। রিমু ভাবলো এই কথাগুলো হয়তো তার সেই ভালবাসার প্রস্তাবের উত্তর। রিমু আমাকে কল দিলো, বুঝলাম ওর খুব মন খারাপ। আমি বললাম পরদিন কলেজে গিয়ে আমাকে ফাস্টফুডে নিয়ে যেতে হবে। অবশেষে রিমু রাজি হলো। আমাকে নিয়ে জিপসিতে গেল নুডুলস খাওয়ানোর জন্য। শিল্পকলা একাডেমীর সামনে জিপসি রেস্টুরেন্টটা এখন আর নেই। আমাকে রিকুয়েস্ট করলো আমি যেন ওর সামনে সাকিবকে কল করে পুরো ঘটনাটা ক্লিয়ার করে দিই। খাওয়ার পর আমি যখন রিমুকে আমার পুরো ফাজলামি টা বললাম, ওতো রেগে আগুন। তবে এই পুরো সময়টা দারুণ উপভোগ্য ছিল আমার কাছে। এবং এটা আমার কলেজ জীবনের একটা অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা। খুব অল্পদিনের সে আমার খুব ভালো বন্ধু তো হলোই, সেইসাথে ভালো মেসেজ চ্যাটিং বন্ধুও। আমি মোটামুটি আমার সব বিষয়ই তার সাথে শেয়ার করতাম। আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সেই জীবনের দুর্বিষহ সময়গুলো, কোন কথায় তার কাছে লুকাতাম না। কখন কার সাথে থাকতাম বা কোথায় কি করতাম সবকিছু সেই জানতো। আমি আমার ক্লাসের একমাত্র অন্য জেলার স্টুডেন্ট ছিলাম। সবার বাসা মুন্সীগঞ্জে আর আমার বাসার সবচেয়ে দূরে। কলেজ জীবনের এই অল্প সময়ে এই মানুষগুলোর মধ্যে কারো কাছে তার খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। আর সেই বন্ধুটা যদি হয় রিমু তাহলে তো কথাই নেই। রিমু যেমন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তেমনি আমিও রিমুর বেস্ট ফ্রেন্ড 'ছিলাম'সেই সময়ে রিমুর কিছু মোবাইল বন্ধু ছিল। তাদের অনেকেই রিমুর বেস্ট ফ্রেন্ড হতে চাইতো। তবে রিমু তাদেরকে উত্তর দিতো- দেখো মানুষের বেস্ট ফ্রেন্ড তো অনেকগুলো হয় না। বেস্ট ফ্রেন্ড একজনই হয়। তুমি আমার ভালো বন্ধু হতে পারো। তারা রিমুর বেস্ট ফ্রেন্ডের নাম শুনতে চাইতো। আর মুচকি হেসে রিমু তাদেরকে বলতে- তার বেস্ট ফ্রেন্ডের নাম সোহাগ।

একদিন রিমু দাঁড়িয়ে আছে, আমি আর শিলা রিমুর কাছে আসলাম কোন একটা বিষয়ে কথা বলতে। তবে শিলা বললো ওর সাথে আগে কথা বলতে হবে। আর আমি বললাম আমি আগে কথা বলবো। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছিলাম না। রিমু তো বিপদে পড়ে গেল সে কার কথা আগে শুনবে। আমার উপস্থিত বুদ্ধিতে আমরা তিনজন ত্রিভূজ আকারে দাঁড়ালাম। তারপর রিমুকে বললাম আমরা দুজনই তোর বন্ধু তবে যাকে তুই বেশি ভালবাসিস, তোর যার ইচ্ছে তার কথা আগে শুনবি, আমরা কেউ কিছু মনে করবো না। শিলাও আমার এমন প্রস্তাবে রাজি হলো। রিমু শিলা একসাথে কলেজ কোচিং যাওয়া-আসা করতো। ওদের দুজনের বাড়িও প্রায় একই রাস্তায়। তবে আমার এই প্রস্তাবে রিমুর আচরণটা আমার জীবনের অন্যতম একটা স্মরণীয় সময় হয়ে থাকবে। ত্রিভুজের অন্যদিক থেকে রিমু আমার কাছে এসে বললো- সোহাগ কি বলবি বল। আমি যেন তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। সব বন্ধুদের মধ্যে সে আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, সে সেটা আরো একবার প্রমাণ করলো। আমাদের মধ্যে বেশ কিছু মিল ছিল। কখনো কখনো অলৌকিক ভাবে আমরা একজন আরেক জনের মনের কথা বলতে পারতাম। আমরা কেউ কারো উপর রাগ করে থাকতে পারতাম না। মাঝে মাঝে আমাদের মধ্যে মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হতো। কিন্তু বেশিক্ষন রাগ করে থাকতে পারতাম না। রাগের পর কেউ কারো সাথে আগে কথা বলতে চাইতাম না। তবেবে কথা বলতে না পেরে দুজনই কষ্ট পেতাম। তেমনি একটা দিনের কথা বলি। একদিন কোন এক কারণে আমাদের খুব কথা কাটাকাটি হয়। আমি রিমুকে বলি- তুই আমাকে প্রতিদিন ফোন দিস কেন? তুই জীবনে আমাকে ফোন দিবি না। রিমু বললো- আমি তোকে ফোন দিয়ে নাকি? তুই তো আমার সাথে কথা বলার জন্য দিনে হাজার বার কল করিস। আমি তোকে ফোন দেবো না। অবশেষে কথা হলো কেউ কারো সাথে আর কথা বলবো না। ফোন রাখার পর আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কি করবোরবো। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছি। আমরা সেই সময় প্রতিদিন সরাসরি কথা বলা বাদেও মিনিমাম আট দশবার ফোনে কথা বলতাম। সামান্য বিষয়েও কল করতাম। আমার বন্ধু অমিকে কল করে রিমুর সাথে আমার মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর কথা জানালাম। ওহ, অমির সাথে আমি রিমুর বন্ধুত্ব করিয়ে দিয়েছিলাম। আমি অমিকে বললাম ও যেন রিমুকে বলে আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিয়েছি। ও যদি আমার সাথে কথা বলে তাহলে আমিও কথা বলবো। অমি রিমুকে কল করলো, তবে অমির কাছে রিমু ধরা দিলো না নিজের দুর্বলতার কথা। অমিও আমার সম্পর্কে রিমুকে কিছু বললো না। কিছুক্ষণ পর আমি আমাকে কল দিয়ে জানালো রিমু নাকি কাঁদছে। আমি তৎক্ষণাৎ রিমুতে কল করে বুঝলাম রিমু সত্যি সত্যিই কান্না করছিল আমার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে বলে। মানে রিমুর সাথে কথা না বলতে পেরে আমি যেমন মন খারাপ করে আছি তেমনি রিমুও কাঁদছিল কখন তার সোহাগ বন্ধু তাকে ফোন করবে এই ভেবে। এ ধরনের রাগারাগি কিংবা চ্যালেঞ্জে বরাবরই আমি হেরে যেতাম। কারণ ওর সাথে কথা বলতে ভালো লাগতো। কারণ তখনকার ওই সময়টাতে আমার কথা বলার মত তেমন কোনো বন্ধু ছিল না। আমাদের কোন খুশির অথবা কষ্টের খবর আমরা আমাদের সাথেই প্রথমে শেয়ার করতাম। ফোনে কথা বলার সময় রিমু কোন কারণে কান্না দিলে আমার থেকে লুকাতে পারতো না। আর আমি মন খারাপ অবস্থায় রিমুর সাথে হাসতে হাসতে কথা বললেও ধরা পড়ে যেতাম। রিমুভ খুব শান্ত, হাস্যোজ্জ্বল এবং নরম স্বভাবের মেয়েয়ে ছিলল। ওর মাথায় কোনো শয়তানি বুদ্ধি কাজ করতো না। এক্ষেত্রে শিলা অবশ্য ছিল রিমুর উল্টোটা। আমি রিমুর কোনো কথাতে না বলতে পারতাম না। তাই আমি যেটা করতে চাইতাম না কিংবা ভালো লাগতো না সেটা আমি রিমুকে আগেই জানিয়ে দিতাম যেন সে আমাকে অনুরোধ না করে। রিমু ছিল আমার জীবনের অন্যতম একজন বিশ্বাসী বন্ধু। সেও আমাকে যথেষ্ট বিশ্বাস করতো। বিশ্বাস নামক অদৃশ্য বস্তুটা হল বন্ধুত্বের সবচেয়ে বড় শক্তি যেটার বিন্দুমাত্র ঘাটতি ছিল না আমাদের বন্ধুত্বে। রিমু আমাকে যেটা বলতো আমি সেটা শুনতাম, মেনে চলতাম। কারণ আমি বিশ্বাস করতাম রিমু আমাকে এমন কিছুই কখনো করতে বলবে না যেটাতে আমি কষ্ট পাই কিংবা আমার জন্য ক্ষতিকর। আর আমার প্রতি ওর বিশ্বাসের কথা বলতে গিয়ে একটা ছোট গল্প না বলে পারছিনা। একবার রিমুর এক বন্ধুর সাথে ওর তর্ক হয়েছিল। তর্কের বিষয় ছিলো তারা তাদের বেস্ট ফ্রেন্ডকে কতটুকু বিশ্বাস করে? সেই মেয়েটা নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে নিয়ে গর্ব করে বলেছিলো সে নাকি তার সেই ছেলে বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে এক রুমে থাকতে পারবে, সে তার সেই বন্ধুকে এতটাই বিশ্বাস করে। আর রিমু তখন তার বেস্ট ফ্রেন্ড সোহাগকে নিয়ে গর্ব করে বলেছিলো- সে সোহাগকে এতটাই বিশ্বাস করে যে সোহাগের সাথে নির্দ্বিধায় এক বিছানায় রাত কাটাতে পারবে। এই উদাহরণটা নিন্দুকের খারাপ ভাবে নিলেও আমি এখানে আমার প্রতি আমার একজন বন্ধুর বিশ্বাসকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমি যদি কখনো ইচ্ছে করেও রিমুকে ভুলে যাই, তবুও রিমু বিশ্বাস করবে না যে তাকে আমি ভুলে গেছি। সে ভাববে আমি হয়তো বা ব্যস্ত আছি, বা কোন বিপদে আছি। যদি কখনো মাঝ রাতে ওকে কল করে বলি যে আমি ওর রুমের জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তবে সে হয়তো জানালা খুলে বাইরে তাকিয়ে দেখবে আমি সত্যিই আছি কিনা। মনে মনে ভাববে সোহাগ পাগল বলেছে যখন, থাকতেও পারেআমি যে কথা ই বলি সে অন্ধের মত বিশ্বাস করে। তবে আমি যদি সিগারেট খেতে খেতেও তাকে বলি আমি সিগারেট খাচ্ছি। তবুও সে বিশ্বাস করবে না। তবে আমি সিগারেট খাইনা, শুধু উদাহরণ দিতে বললাম। আমি অন্তত তার কাছে কখনো মিথ্যা বলিনি। আমি জানি রিমু আমাকে যথেষ্ট বিশ্বাস করে এবং ভালোবাসে। আমার মতে আমি যদি কারোর কাছে মিথ্যে বলে নিজেকে আহামরি ভাবে উপস্থাপন করি তবে সে হয়তো বিশ্বাস করবে ঠিকই, তবে সেই উপস্থাপনের অন্তঃকথা হলো সে আমাকে বিশ্বাস করেছিল আর আমি তার বিশ্বাস ভেঙেছি। আমার আর রিমুর বন্ধুত্বে কোন প্লিজ, সরি, থ্যাংকস রিকুয়েস্ট ব্যবহার হতো না। এগুলোর ব্যবহার একশো চুয়াল্লিশ ধারার মতো নিষিদ্ধ ছিল। কারণ আমি এগুলো পছন্দ করতাম না। তাছাড়া বন্দি খাঁচার পাখি অথবা মানুষের হাতে ফুল ছিল আমাদের দুজনের কাছে অপ্রিয়। ২০১১ তে শুরু হওয়া বন্ধুত্বের এক বছর পূর্তিতে ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রিমু আমাকে ট্রিট দিয়েছিল জিপসিতে। ক্লাসের সহপাঠী সুইটি একদিন আমাকে বলেছিল আমি নাকি ভালো বন্ধু হওয়ার যোগ্যই না। কারণ সেদিন আমি তার রিক্সা ভাড়া দিয়ে দিই নি। তার কথা সেদিন নতুন একটা জিনিস শিখেছিলাম, বন্ধু মানে রিক্সা ভাড়া দিয়ে দেওয়া। মজার ব্যাপার হল এই ঘটনার পর থেকে আমি রিমু কোথাও একসাথে গেলে আমি রিক্সা ভাড়া দিয়ে দিতাম। রিমুর সাথে একবার আমার কোন একটা বিষয় নিয়ে চ্যালেঞ্জ হয় এবং এটাও বলা হয় যে হেরে যাবে সে অন্যজনকে খাওয়াবে। যেদিন রাতে চ্যালেঞ্জ হয় তার পরদিন সকালে রিমু আমাকে কল করে বললো- সোহাগ, যদিও তোর সাথে আমার চ্যালেঞ্জ হয়েছে, তবুও আমি মন থেকে চাই তুই চ্যালেঞ্জে জিতে যা। খাওয়া কোনো ফ্যাক্ট না, একজন বিল দিলেই হল। তবে তুই হেরে গেলে তুই খুব কষ্ট পাবি। আর তোকে হারিয়ে জয়ী হওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। তুই জয়ী হলেই বরং আমি খুশি। আর তুই হেরে গেলে আমি খুব কষ্ট পাবো রে। সেদিন সত্যিই আমার চোখদুটো আবেগে ভিজে গিয়েছিল। একজন বন্ধু হিসেবে অন্য বন্ধুর কাছ থেকে যত টুকু ভালোবাসা আশা করা যায়, আমি তার থেকে ততটা ভালোবাসা পেয়েছি, উৎসাহ পেয়েছি। আমি যদি এই কখনো রিমুকে বলতাম আমি কী পারব আমার স্বপ্ন পূরণ করতে, লেখক হতে, আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে? এমন প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে রিমু বরাবরই বলতো - সে বিশ্বাস করে যে আমি একদিন আমার স্বপ্নপুরণ করতে পারবো। আমি একদিন বিখ্যাত হবো আমার নিজ গুণে। সে এটাও বিশ্বাস করে যে তার এই বিশ্বাসটা আমি রাখবো। এখনকার এই সময়টাতে আমি বিখ্যাত হতে চেষ্টা করছি এবং যদি কখনও বিখ্যাত হইও বা, সেখানে রিমুর অবদান অনস্বীকার্য। কারণ আমার এই বিখ্যাত হওয়ার পথচলার শুরু সময়টাতে রিমুর উৎসাহের কমতি ছিল না। আমি যদি কখনো তাকে মজার ছলে বলতাম যে আমি হয়তো আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না, তাহলে রিমু আমাকে খুব বকা দিতো। নিজের যোগ্যতায় যদি কখনো সুযোগ পাই বিজয়ের মঞ্চে ওঠার, তাহলে সেই মঞ্চে আমি হাতেগোনা যে কয়েকজন মানুষের নাম উল্লেখ করবো, তার মধ্যে রিমুর নামটাও থাকবে। আমার কোন সাফল্যে রিমু যেমন সবচেয়ে বেশি খুশি হতো, তেমনি আমার মন খারাপ থাকলে বা আমি অসুস্থ থাকলে রিমু খুব টেনশন করতো। আমার কোনো শুভ সংবাদ সর্বপ্রথম আমি ওকে জানাতাম। আর মন খারাপ থাকলেও তাকে কল করতাম। কখনো কখনো আমি রিমুকে ভীষণ বকতামম। রিমু তখন চুপচাপ আমার বকা শুনতো। আর রিমু আমাকে বকলে আমি চুপ করে থাকতাম। কারন দোষ না থাকলে কেউ কাউকে বলতাম না। তবে যে যাকে বকতাম না কেন বকা শুনতে বা বকা দিতে দুজনের খারাপ লাগতো। তবে বকা দেয়ার কারণ হয়তো এক বন্ধুর উপর অন্য বন্ধুর কর্তব্য জাহির করা।

No comments

Powered by Blogger.