Header Ads

সোহাগনামা |। পর্ব - ৩

 

Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, sohagnama, সোহাগনামা ৩

ছোটবেলায় আমার স্বপ্নের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা ছিল না। আমি এক এক সময় এক এক জিনিস হতে চাইতাম। আমাদের স্কুল মাঠে যখন সেনাবাহিনী কোনো ক্যাম্পেইনের জন্য আসতো তখন আমি আর্মি অফিসার হতে চাইতাম। আমি যখন বাসে চলাচল করতাম বাসের কন্ট্রাকটর এর হাতে অনেক টাকা দেখে মাকে বলতাম যে আমি বাস কন্ট্রাকটর হবো, কারণ তার কাছে অনেক টাকা। যখন মায়ের সাথে বেতন তোলার জন্য ব্যাংকে যেতাম তখন কখনো কখনো আমি ব্যাংকেও চাকরি করতে চাইতাম। তবে মজার ব্যাপার হলো চিরাচরিত পেশাগুলোর মত বা স্বপ্ন গুলোর মত আমার ভেতরে কখনো ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবার ইচ্ছে জাগে নি। আর তারপর তো জ্ঞান হবার পর নিজেকে একজন অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইতাম তবে শেষমেশ একজন লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি।


২০০৬ সাল হবে। তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। তারিখটা সঠিক মনে নেই। তবে রোজার ঈদ কিংবা কোরবানি ঈদের কদিন আগের ঘটনা। হঠাৎ আমার বাবা আমাকে ফোন করে বললেন উনি আমাকে ঈদের জন্য কেনাকাটা করে দিবেন। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। যে মানুষটা আমার সাথে কথা বলে না আমার খোঁজ নেয় না, সেই মানুষটা নিজে থেকে আমাকে ঈদের জন্য কেনাকাটা করে দিতে চাইলেন। আমি মাকে বলার পর মা আমাকে বাঁধা দেয়নি। আমাকে চৌগাছা বাজারের স্বর্ণপটি মোড়ে আসতে বলা হলো। আমি তো খুশিতে খুশিতে চলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সেখানে বাবা, বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী, তাদের মেয়ে এবং মেয়ে জামাই সেখানে। তারা সবাই মিলে আমাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে গেল। আমার জন্য শার্ট আর প্যান্ট কেনা হলো ছয়শ টাকা দিয়ে। এই টাকাটা আবার বাবা দিয়েছিলেন। তবে আমার জন্য খরচ হওয়া এই ছয়শ টাকার জন্য বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী বেশ মনোক্ষুন্ন হচ্ছিল, সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। আমার জন্য কোনো জুতা কেনা হলো না। কারণ তাদের কাছে টাকা নেই। আর টাকা না থাকার কারণ হচ্ছে তাদের একমাত্র জামাইয়ের জন্য আমার বাবা ছয় হাজার টাকা দিয়ে ব্লেজার বানিয়েছেন। আর তার জুতাও কিনতে হবে। সেজন্য বেশশ মোটা অংকের টাকা লাগবে। তাই আমার ভাগ্যে আর জুতা জুটল না। তবে আমার ছোট্ট মনটা একটা শার্ট একটা প্যান্ট পেয়েই তখনকার সময়ে বেশ খুশি। আমি সবাইকে দেখিয়ে বলতাম যেটা আমার বাবা কিনে দিয়েছে। আমার জীবনে বাবা বলে তাকে ডাকতে না পারার অপূর্ণতা অনেক বেশি। আমার এই জীবনে আমার অর্জন নেহাৎই কম নয়। অন্তত আমি সেটা মনে করি কিন্তু আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অপূর্ণতা হল আমি কখনো মন ভরে বাবা ডাকতে পারিনি। আমার স্কুল কিংবা কোচিংয়ে আমার অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবীদের দেখতাম তাদের বাবা তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে বা আনছে। নিজে না চাইলেও এমন একটা ইচ্ছা নিজের মনে সব সময় থাকতো। আমি কখনো আমার মাকে বলতে পারতাম না। কারণ আমার স্কুল শিক্ষিকা মায়ের পক্ষে স্কুল ছুটি নিয়ে কিংবা বন্ধ করে আমাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করা সম্ভব নয়। অনেক সময় বন্ধুদের বাবারা তাদেরকে সাইকেলে নিয়ে যাওয়া আসা করতো আমার ভিতরে একটা শূন্যতা কাজ করতো। এমনও হয়েছে বোর্ড পরীক্ষার সময় বন্ধুদের বাবা-মা পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে তাদের জন্য খাবার নিয়ে, পানি নিয়ে অপেক্ষা করতো। আর আমি আমার মত পরীক্ষা শেষ করে একা একা বাসায় ফিরতাম। কারণ আমার মা তখন স্কুলে থাকতেন আমার পুরো শিক্ষা জীবনে একটা দিনের জন্যও আমি বাবার সাথে স্কুলে যাই নি কিংবা বাবার সাথে ফিরি নি। আমার বাবা আমার পড়াশোনার খোঁজ নিতে কখনও আমার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যান নি। অবশ্য তিনি তো আমার খোঁজ নিতে আমাকেই কখনো খোঁজেন নি। সেখানে আমার খোঁজ নিতে স্কুলে খোঁজ নিতে যাওয়া, সেটা তার জন্য সময়ের অপচয় বৈকি। অবশ্য পরীক্ষার জন্য কয়েকবার আমার মা স্কুল ছুটি নিয়ে গিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে আমার বড়বোন, পলি খালা যেত।

No comments

Powered by Blogger.