Header Ads

সোহাগনামা || পর্ব - ১৫ || ২১ জুলাই, বিয়ের পর আমাদের প্রথম ঈদ

 

Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, sohagnama, সোহাগনামা ১৫

২১ জুলাই, বিয়ের পর আমাদের প্রথম ঈদ

 

বিয়ের পর আমাদের প্রথম ঈদ ঈদে বাড়ি যাওয়া নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময়টাতে ছিল করোনাকালীন লকডাউন কিছু গাড়ি চলছে অবশ্য, খুব গোপনে ঈদের সময়ে লকডাউন শিথিল করারও একটা গুঞ্জন জানতে পেরেছিলাম আগেই আবিদার খুব ইচ্ছে ছিল আমাদের বিয়ের পর প্রথম ইদে সে আমার বাড়িতে থাকবে আমার বাড়ি বলতে আমার মায়ের টাকায় ভাড়া নেওয়া বাজারে দুই রুমের একটা ছোট ফ্ল্যাট আর নানু বাড়িতে মায়ের বানানো দুই রুমের একটা বাড়ি ১০ শতক জমির উপর বানানো ছোট বাড়িটা আমার শশুর না দেখেই ছোট বাড়ি ছোট বাড়ি বলে বেশ প্রচারও করেছিল এর আগে অবশ্য আবিদা ছবিতে আমাদের বাড়ি দেখেছিল আবিদার খুব ইচ্ছে ছিল যশোরে আমার বাড়িতে যাওয়ার, গ্রাম দেখার যেহেতু আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে, অফিসিয়ালি আর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই তাই হয়তো ইচ্ছেটা আরো বহুগুণ বেড়ে যায় বিধি বাম, মা কল করে বললো করোনার এই অবস্থাতে বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই আর আমি তার কথা শুনতে নারাজ না পেরে মা প্রতিদিন আবিদাকে কল করে বোঝাতে লাগলো এই অবস্থাতে বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই আবিদা তো মায়ের কথার জবাব দিতে পারছে না, তবে তার খুব যাওয়ার ইচ্ছে আমার বিয়ের পর প্রথম ইদে আবিদা যশোরে থাকবে, তার থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন হলো বিয়ের পরের প্রথম ইদ যদি আমি ঢাকাতে করি তাহলে আমার শ্বশুরবাড়িতে করতে হবে সে ক্ষেত্রে কথা হবে বিয়ের পরে প্রথমেই শ্বশুরবাড়িতে ইদ করেছি বিয়ের পরেই আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদেরকে ভুলে গেছি, মাকে ছাড়া ঈদ করছি ইত্যাদি ইত্যাদি আরও বহু কথা কারণ কানাঘুষা করা মানুষগুলোর কানে অন্তত এই কথাটা তো যাবে না যে মায়ের জন্য বা মায়ের কথাতে আমরা ঢাকাতে থেকে গেছি সে যাই হোক, বহু ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা বাড়িতে যাব টিকিটের জন্য আমার মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রিকশায় গেলাম গাবতলী যেই গাবতলীতে মানুষের জন্য পা রাখা কষ্টকর, সেই গাবতলীর মানুষগুলো সেদিন গুনে শেষ করা যাবে এরইমধ্যে লকডাউনের শিথিলতার খবর প্রকাশ করেছে সরকার সেখানকার একজন লোকের মাধ্যমে জানতে পারলাম তারপর দিন থেকে ঈদে বাড়ি যাওয়ার অগ্রিম টিকিট দেওয়া শুরু হবে ইচ্ছে ছিল আবিদাকে নিয়ে আমি প্রথম দশক যাবো ফ্লাইটে এর আগে বহুবার একা একা বিমানে চলাচল করেছি আবিদা কে নিয়ে তখনও বিমানে ওঠা হয়নি তবে সেই মুহূর্তে টিকিটের স্বল্পতা, টিকিটের দাম বেশি আর আমার পকেটে সবকিছু মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা এসি বাসে যশোর যাবো তবে টিকিট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত টিকিট নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা থেকেই যায় পরদিন ১৪ জুলাই আবারও গাবতলী গিয়ে টিকিটটা করে নিলাম ১৫ জুলাই সকাল সাড়ে দশটায় ঢাকা গাবতলী থেকে আমাদের বাস আগের রাতে ব্যাগ গোছানো নিয়ে আবিদার সে কি প্রস্তুতি! প্রথম বারের মত শশুরবাড়িতে যাবে আমার একমাত্র বউ আবেদন আমরা সময় হাতে নিয়ে রওনা দেওয়াতে বাস ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে সকাল সাড়ে নয়টায় আমরা বাস কাউন্টারে হাজির ভাগ্যের নির্মম খেলায় আমাদের বাস আসলো দুপুর সাড়ে বারোটায় সাড়ে দশটার বাস ছাড়লো দুপুর পৌনে একটায় যাত্রাপথে খাওয়ার জন্য আমার শাশুড়ি রুটি আর আলু ভাজি দিয়েছিলেন আর আমি বাসে ওঠার আগে চিপস, চাটনি, নিমকি, ঝালমুড়ি, চানাচুর আর গরমের জন্য হাতপাখা কিনে নিয়েছিলাম রাত নয়টায় আমরা চৌগাছার বাসায় পৌঁছায় রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ লম্বা একটা ঘুম লেখালেখির সময়টাতে সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠা তখনকার সময়ে আমার একটা অভ্যাস অথবা বাজে অভ্যাস ছিল আমি ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারলাম মা আমাদেরকে রেডি হতে বলেছে, আমরা নানু বাড়িতে যাব আর আমার নানি নাকি ততক্ষনে হাঁসের মাংস রান্না শুরু করেছে আমি আর তার নাতবউ যাবো বলে আমি আবিদাকে বললাম শাড়ি পরতে আর মা বললো থ্রিপিস পড়তে, গরমে শাড়ি পরার দরকার নাই আমি বললাম প্রথম নানাবাড়িতে যাবে, শাড়ি পরুক আমার ইচ্ছাতে আমার বউ শাড়ি পড়ে নানি বাড়িতে গেল ঠিকই, তবে গরমের জন্য বাড়িতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শাড়ি বদলে নিলো বাড়িতে তখন আশপাশের সব বাড়ি থেকে খালা-নানী-কাজিনরা সবাই হাজির সোহাগের বউ দেখবে বলে সবার সাথে আবিদার পরিচয় করিয়ে দিলাম যাকে যাকে সালাম করা লাগবে আবিদাকে ইশারায় বলে দিলাম বাড়িতে বউ দেখতে আসা সবার জন্য কেজি মিষ্টি নিয়েছিলাম সেদিন বিকালে আমি, আমার খালাতো ভাই ইয়াসীন আর সজীব আবিদাকে নিয়ে বাঘার বিলে ঘুরতে যাই ঘুরে সন্ধ্যের আগে বাড়িতে, তারপর দিন সাঞ্চাডাঙ্গা বিল আর খড়িঞ্চা বিল ঘুরে চৌগাছার বাসায় চলে আসি হাসিব মামাদের বাড়ি, খালাতো ভাই অপুদের, ভাগ্নে সৈকতের বাড়ি, প্রতিবেশি লিটন মামাদের বাড়ি সব জায়গা ঘুরে, ঈদের আগের দিন আমার ছোট খালার বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাই ওহ প্রথমবার নাননুবাড়িতে যাবার আগেই কৌশিকের আম্মুর সাথে দেখা করি আবিদাকে নিয়ে ছোট খালার বাড়ি থেকে ঈদের জন্য নানুবাড়িতে যাই বাড়ির বউ এর প্রথম ঈদ, বেশ মোটা অংকের সালামি পেয়েছিল আমার বউ ঈদের নামাজ পড়ে দুপুরে আমাদের দাওয়াত ছিল বন্ধু নাহিদের বাসায় বিয়ের আগের দশ বছরের যতগুলো ইদ বাড়িতে করেছি, তার কোন ঈদের দুপুরবেলা নাহিদের আমার দাওয়াত মিস হয়নি সব জায়গা ঘুরে সহি সালামতে ঢাকায় ফিরে আসি ঈদের পরদিন কারণ তার পরদিন থেকে কঠোর লকডাউন ঈদের পরদিন রাতে আবিদাদের বাসাতে আমাদের দাওয়াত ছিল আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালোভাবেই বিয়ের পর প্রথমেই পার করলাম আমরা


ভালো লাগলে শেয়ার করুন 

শাহরিয়ার সোহাগ এর লেখা বইগুলো সম্পর্কে জানতে বা কিনতে ক্লিক করুন

No comments

Powered by Blogger.