Header Ads

সোহাগনামা । পর্ব - ৬ || আমার শৈশবের শুক্রবার

 

Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, sohagnama, সোহাগনামা ৬

আমার শৈশবের শুক্রবার 


নামাজ পড়ে বাসায় এসেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাওয়াদাওয়া শেষ করতাম। দুপুর টার সংবাদ যেন একটু বেশি সময় হত, শেষই হতে চাইতো না। বলে রাখি আমার শৈশব ছিল বিটিভি যুগের। আগে থেকে জানতাম না শুক্রবার কি সিনেমা হবে? সংবাদ শেষে শিল্পী মামুনের "আমার বাংলাদেশের একতারাটা কতই ভালোবাসি" শিরোনামে একটা গান হত। সপ্তাহে এই একটা দিন খেলাধুলো করার অনুমতি পেতাম।

সিনেমার নাম দেখাতো। যদি সমসাময়িক সিনেমা হত তাহলে তো খেলা বাদ। তবে যদি আদিকালের মুভি দেখাতো তাহলে মন ভেঙে যেত। সারা সপ্তাহ অপেক্ষায় বৃথা হত। তখন খেলতে বের হতাম।

ছোটবেলায় ক্রিকেটটাই বেশি খেলেছি। বাসার গলিতে দেয়ালে দাগ দিয়ে স্টাম্প বানাতাম। গড়িয়ে গেলে চার, উড়ে গেলে ছয়, ব্যাটে লাগলে এক রান। স্টাম্পে বল লাগলে, ক্যাচ ধরলে, বল উড়ে প্রাচীর পার হলে বা হুজুরের বাড়ির টিনের জানালায় লাগলে আউট। ক্রিকেটের সঙ্গী বলতেই আমার শৈশবে দুটো নামই ছিল। বছর দুয়েকের ছোট বন্ধুমনা ভাগ্নে সৈকত আর কৌশিক। সৈকতের ব্যাট, কৌশিকের স্টাম্প আর আমার বল। বল হারালে আমিই কষ্ট পেতাম বেশি। ডিউজ বল ছেড়ে যখন টেপ-টেনিসে শুরু করলাম তখন সবাই চাঁদা তুলে টেপ কিনতাম। তবে কোন বড়ভাই যদি শখ করে খেলতে আসতো তাহলে তার থেকেই পুরো টেপের টাকা বাগাতাম। বেলা স্কুলের প্রতিটা অংশ আমাদের স্মৃতিবিজড়িত। এমন অনেক স্মৃতি আছে বেলা স্কুলে খেলার সময় কৌশিক রাগারাগি করে স্টাম্প নিয়ে চলে গেছে। একসময় আমিও ব্যাট কিনি। তবে জুনিয়র ব্যাচের সাথে খেলার সময় তারা ব্যাট চুরি করে।

প্রসঙ্গে আসি। আমার শৈশব ছিল শুক্রবারের ভালোবাসার সিনেমায়। রিয়াজ শাবনূর তখন হিট জুটি। প্রথম শাবনূরের প্রেমে পড়ি এই সিনেমা দেখেই। রিয়াজের জায়গাতে নিজেকে ভেবেছি বহুবার। সেই শৈশব আজ বাস্তবে, আমি মিডিয়াতে ক্যামেরার পেছনের মানুষ। এখনো মনে পড়ে- সাদা কালো সতের ইঞ্চির একটা জাদুর বাক্স। জানালার সাথে বাঁশে এন্টিনা বাঁধা। সিনেমার সুন্দর মুহূর্তে হঠাৎ ঝিরঝির করলে আমি দৌঁড়ে যেতাম এন্টিনা ঘোরানোর জন্য। আমার বড়বোন বাসা থেকে বলতো আরেকটু, আরেকটু, ডানে, বামে, হয়েছে, আবার ঝিরঝির কররছে, আরেকটু ঘুরা, হ্যাঁ ঠিক হয়েছে, চলে আস। সফলাতার তৃপ্তি নিয়ে আবার শাবনূরকে দেখতে বসে যেতাম।
বিশাল অপূর্ণতার সাগরে আমার মা আমার একমাত্র পূর্ণতা। চাকরিজীবী মা, তাই শুক্রবার দুপুরেই গরম ভাত খেতে পারতাম। সন্ধ্যায় সিনেমা শেষে বা খেলা শেষে বাসায় ফিরে আলিফ লাইলা দেখতাম। নিজেকে সিন্দাবাদ ভাবতাম। আর মন ভরে মেহজাবিন ডায়নীটাকে দেখতাম।

শৈশব শেষে যুবক হয়েছি। সতেরো ইঞ্চি সাদাকালো থেকে একুশ ইঞ্চি রঙিন বাক্স হয়েছে। পিচ্চি সৈকত এখন বুয়েটের শিক্ষানবিশ ইন্জিনিয়ার। কৌশিকটাও জীবন কে উপলব্ধি করে পরিনত হয়ে উঠেছে। অনেকে ভাবতে পারেন আমি বিভিন্ন সময় এই দুইটা নামই কেন বেশি বলি। এরা দুজন আমার আত্মার অংশ। আমরা যখন কিছুই বুঝতাম না, ঠিকমত কথাও বলতে পারতাম না, তখন থেকে আমরা এই তিনজন একসাথে। ওরা আমার ছোট। তবে অবুঝ বয়স থেকেই আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
এখনো প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার আসে। তবে শৈশবের মত তিন মামা-ভাগ্নে একসাথে জুম্মার নামাজ বা বিকালে ব্যাট হাতে মাঠে যেতেতে পারি না। বড় বোন নামক মানুষটার সাথে দেখা হয়না, কথা হয়না অনেকগুলো বছর। ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করতে পাঠিয়ে বাড়িতে মা একাই থাকে।

এখনো শুক্রবার আসে।
তবে শৈশবের সেই গোছালো প্রতিটা শুক্রবারগুলোকে খুব বেশি মিস করি।

 

 

No comments

Powered by Blogger.