সোহাগনামা || পর্ব - ৫
২০০৭ সালে পুড়াপাড়াতে আমার এক নানি মারা যায়। ওই নানী সম্পর্কে আমার মায়ের মামি। উনি আবার আমার বাবার ফুপিও। সেই সূত্রে ওই নানির মৃত্যুতে আমার নানু বাড়ি থেকে যেমন লোকজন সবাই যায়, তেমনি আমার দাদা বাড়ি থেকেও সবাই শেষ বিদায় জানাতে আসে। ওখানেই আমি প্রথম আমার দাদা বাড়ির আত্মীয়-স্বজনের সান্নিধ্যে আসি। আমার বাবারা দুই ভাই, দুই বোন। আমার দাদারও দুই বিয়ে। প্রথম পক্ষে বড় ফুফু আর আমার বাবা। আর পরের পক্ষে আমার আরেক ফুপি আর চাচা। সেদিন এক যোজন যোজন দূরত্বে অবসান হয়েছিল। আমার ফুপি ফুপা সবাই আমাকে এই গ্রামে যেতে বলে। আমি যেন লোভ সামলাতে পারি না। তার দুই দিন পরেই আমি আমার জীবনে প্রথম দাদা বাড়িতে যাই। তাও কিনা একা। মশিউরনগর বাজারের পাশেই আমার ছোট ফুপির বাড়ি। আমি বাস থেকে নেমে প্রথমে ছোট ফুপির বাড়িতে যাই। আমার ফুপাতো বোন চ্যামেলী আপু, সাবিনা আপুর সাথে আমার সেই প্রথম দিনেই সখ্যতা তৈরি হয়। আমার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল সাবিনা আপুর। সাবিনা আপু আমার থেকে এক বছরের বড়। চ্যামিলি আপু তিন বছরের বড়। আর লিমা আমার এক বছরের ছোট। আমার বড় ফুপির বড় ছেলে কবির ভাইয়ের গ্রামে একটা দর্জির দোকান ছিল। আমি যেদিন তাদের বাড়িতে প্রথম যাই, আমাকে শার্ট-প্যান্ট গিফট করেছিল কবির ভাই। ওই দিনটার কথা ভুলতে পারবো না। কারণ সেদিনই কবির ভাইয়ের মেয়ে কবিতা কবির ভাইয়ের দোকানের পেছনের পুকুরে পড়ে যায়। সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে হাতে করেই বাজিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন। সেদিনের পর প্রায়ই আমি আমার গ্রামের বাড়িতে যেতাম। দুই ফুপির বাড়িতে দেখা করতাম। আমার বাবার যে চাচা গুলো আছে তাদের বাড়িতেও যেতাম। কিন্তু বাবার বাড়িতে যেতে পারতাম না। কারণ বাবা তখন বাড়িতে থাকতেন না। আমি গ্রামে যাই বলে আমার ফুপিদের সাথে বাবার গ্যাঞ্জাম শুরু হলো তারা আমাকে কেন তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়। আর যখন আমার সাথে মাঝে মাঝে বাবার কথা হতো তখন আমাকে প্রশ্ন করতো আমি কেন তাদের বাড়িতে যাই। তার যারা শত্রু আমি বেছে বেছে শুধু তাদের বাড়িতে যাই। আমি বলতাম আমি কারো বাড়িতে যাব না, তাহলে আমি সরাসরি তোমার বাড়িতে যাব। কিন্তু সে তো তার বাড়িতে আমাকে নেয় না। তখন তার উত্তর ছিল এমন- তার যখন ইচ্ছে হবে সে তখন আমাকে নিবে। সে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিংবা আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বাধ্য নয়। ছোট ফুফু যেহেতু বাবার ছোট, ছোট ফুপি ই সবচেয়ে বেশি কথা শুনেছে আমার জন্য। কিন্তু ফুপি আমাকে নিষেধ করতে পারতো না। কারন আমি তখন সেভেন এইটে পড়ো একটা ছেলে। শখ করে ফুপি বাড়িতে গিয়েছি, আমাকে তো আর বের করে দিতে পারে না। আমার যখন খারাপ লাগতো, যখন ইচ্ছে হতো যে কোন সময় আমি ফুপি বাড়িতে চলে যেতাম। আমার জন্য অনেক কথা হজম করতে হতো ফুপি কে।
No comments