সোহাগনামা |। পর্ব - ৪
তখন সম্ভবত আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। একটি পিকনিকে সাতক্ষীরা মন্টু মিয়ার বাগান বাড়িতে গিয়েছিলাম অন্যদের সাথে। আমার বাবা সম্পর্কের ব্যক্তিটা তখন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলাতে ব্র্যাক এনজিও কে হিসাবরক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। মন্টু মিয়ার বাগান বাড়িতে যাওয়ার পর হঠাৎ আমার বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। আমি মাকে কল করে জানালাম আমি বাবার সাথে দেখা করতে চাই। বাবার ব্যাপারে মা আমাকে কখনো কিছু বলতেন না। বাবার ব্যাপারটা মা সবসময় আমার উপরই ছেড়ে দিতেন। এই যেমন আমার ইচ্ছে হলে যোগাযোগ করবো, ইচ্ছে না হলে করবো না সে ব্যাপারে মায়ের কোন বিধি-নিষেধ কখনোই ছিল না। আমি মাকে যখন জানালাম যে আমি বাবার সাথে দেখা করতে দেবহাটা যেতে চাই তখন মা আমাকে তাৎক্ষণাৎ কিছু টাকা পাঠালেন যেন আমি ভালো ভাবে সেখানে যেতে পারি। কারণ আমার কাছে কোন এক্সট্রা টাকা ছিলনা। আমি বাবাকে ফোন করে জানালাম আমি তার কাছে যেতে চাই। উনি আমাকে যেতে নিষেধ করলেন কিন্তু আমার ছোট মন কোন নিষেধ না মানায় আমি নিজে নিজেই দেবহাটা রওনা দিলাম। আমি যখন দেবহাটা পৌঁছলাম তখন সময় সন্ধ্যা ছয়টা।
আমি ছোট্ট একটা
মানুষ। তারপর আবার সেখানকার সবকিছুই আমার কাছে অপরিচিত। আমি বাবাকে অসংখ্য বার ফোন
করলাম কিন্তু উনি আমার ফোন রিসিভ করছিলেন না। আমি ওনাকে কোনভাবেই জানাতে পারছিলাম
না আমার অবস্থান। অবশেষে উনি একবার ফোন রিসিভ করলে আমি উনাকে আমার অবস্থানের কথা
জানালাম। বললাম আমাকে নিয়ে যেতে এরপর থেকে উনি আমার ফোন আর রিসিভ করছিলেন না। আমি
সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত এগারো টা পর্যন্ত সেই একই জায়গাতে, যেটা আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত ওখানে বসে ছিলাম। আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে আমি
এরপর কোথায় যাব। কারণ ওখানে আমার পরিচিত বলতে আমার জন্মদাতা বাবা ছাড়া আর কেউ
নেই। রাত এগারোটার সময় উনি এসে আমাকে সে কি বোকা!
আমি কেন এসেছি, আমি কার অনুমতিতে এখানে এসেছি?
উনি বললেন এটা
নাকি আমার মায়ের চক্রান্ত। উনি আমাকে কোনোভাবেই তার বাসা তে নিতে রাজি হচ্ছিলেন
না। কারণ উনারা কয়েকজন কলিগ একসাথে থাকেন এবং উনি উনার কলিগদের সাথে আমাকে পরিচয়
করাতে চান না। উনার জামাই মানে আমার সৎ বোনের হাজবেন্ড কে উনি তার কলিগদের কাছে
নিজের ছেলে বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এ জন্য সেখানে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলে
তার মান সম্মান থাকবে না। আমি কি করবো?
কি বলবো আমার কি
করা উচিত আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমি যেন চোখে ধোঁয়াশা দেখছিলাম। তবে
সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমার উপর আমার জন্মদাতার দয়া হল। রাত সাড়ে এগারোটায় উনি
আমাকে তার রুমে নিয়ে গেলেন ভাত আর ডিম ভাজি খেয়েছিলাম সেই রাতে। খাওয়ার পুরোটা
সময় উনি খুব বকাবকি করলেন আমাকে। আমার শুধু মনে হচ্ছিলো রাতটা কখন শেষ হবে আর আমি
এখান থেকে চলে যেতে পারলে বাঁচি। তাকে একনজর দেখার জন্য এতটা দূর অপরিচিত একটা
জায়গাতে আমার যাওয়ার কোনোই মূল্য ছিল না তার কাছে।
No comments