Header Ads

সোহাগনামা । পর্ব - ২

Shahriar Sohag, শাহরিয়ার সোহাগ, sohagnama, সোহাগনামা ২


আমি আমার প্রাইমারি স্কুল শেষ করেছি কয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে, আমার মা যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন ওখানে এখানে আমি কিছু ভালো বন্ধু পেয়েছিলাম ইমন, জনি, ইমামুল, তুষার ওরা আমার খুব ভালো বন্ধু এখনো আমাদের মধ্যে যোগাযোগ আছে যদিও ব্যস্ততার জন্য আগের মত নিয়মিত দেখা কিংবা কথা হয় না তবে আমি বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যে কখনো কোনো দূরত্ব আসেনি এবং আসবেও না হাজার বছর যদি বাঁচি আর হাজার বছর পরও যদি আমাদের মধ্যে দেখা হয় তবে তখনো আমাদের বন্ধুত্ব সেই প্রাইমারি স্কুলের প্রথম পরিচয়ের মতই থাকবে আমাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল যখন আমরা স্কুলেও ভর্তি হয়নি তখন থেকে আমি মায়ের সাথে স্কুলে যেতাম আর ইমন, জনি, ইমামুল, তুষারের বাসা স্কুলের কাছাকাছি হওয়াতে স্কুল মাঠে আমরা খেলাধুলা করতাম আমাদের শৈশবের অনেক স্মৃতি আছে বৃষ্টির সময় আবাদি মাঠের প্রবাহমান পানি স্কুল মাঠের উপর দিয়ে অতিক্রমের স্কুল মাঠে আটকে থাকা পানিতে আমরা মাছ ধরতাম স্কুল মাঠের কোনায় একটা আম গাছ আছে আমরা যখন ক্লাস ওয়ানে একসাথে ভর্তি হলাম, স্কুল ছুটির পর আমরা ওই আম গাছটাতে উঠে খেলা করতাম বেশিরভাগ সময় আমাদের গল্প কিংবা খেলার বিষয় বস্তু থাকতো মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধ নিয়ে গল্প করার অন্যতম একটা কারণ হলো তখন যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনী এসে আমাদের স্কুল এবং আশপাশের এলাকা তে ঘাঁটি করত তাদের শীতকালীন মহড়ার জন্য তাদেরকে দেখতাম ভারী অস্ত্রশস্ত্র সরঞ্জাম নিয়ে মহড়া দিতে তখন আমাদের মাথায় যেটা কাজ করতো এমন সময় যুদ্ধ হলে আমরা কি করতাম? যেমন পাকিস্তানিরা যদি এই গ্রামে হঠাৎ আক্রমণ করে সেক্ষেত্রে আমরা কিভাবে তাদেরকে প্রতিহত করবো? আমি, তুষার, ইমন, ইমামুল, জনি আমাদের মত করে দায়িত্ব ভাগ করে নিতাম যুদ্ধে আমরা কে কিভাবে অংশ নেবে, কার কাজ আমরা গাছের ডালে বসে সেসবের পরিকল্পনা করতাম এখনো আমার স্মৃতিপটে স্কুল এবং সেই আম গাছে আমাদের বন্ধুদের বসে থাকে এমন আজগুবি গল্পের কথা আমাকে এখনো মাঝে মাঝে খুব হাসায় কতই না চঞ্চল আর প্রাণোচ্ছ্বল সময় ছিল আমার সেই দিনগুলো জনির একটা পোষা ভেড়া ছিল ওর নাম পটু আমরা ওর ভেড়াকে নিয়ে খেলা করতাম একবার বন্ধু তুষারের গলাতে মামস হয়েছিল মামস হওয়ার জন্য ওর গলার একটা পাস ফুলেছিল আর আমি ভেবেছিলাম তুষার আমাকে না দিয়ে কিছু খাচ্ছে আমি কোনো কথা না বলে হঠাৎ গিয়েই তুষারের গালে জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলি শালা তুই আমাকে না দিয়ে একা একা খাচ্ছিস! ওমা আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম তুষারের গাল পুরো লাল হয়ে গেছে, আর তুষার সজোরে কান্না করছে তারপর জানলাম অসুস্থতার জন্য তুষারের গলা ফুলেছে আমি আমার সেই বাচ্চাকালেই সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটি প্রতিভার সন্ধ্যান পেয়েছিলাম তখন থেকেই একক অভিনয়ে বেশ পারদর্শিতা ছিল আমার আমি অভিনয় করে পুরস্কার ছাড়া বাড়ি ফিরিনি কখনো অভিনয়ে আমার হাতে খড়ি ছিল আমার মা আমার মায়ের লেখা চিত্রনাট্যে আমি প্রথম অভিনয় করে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম এরপর তো উপজেলা, জেলা, বিভাগ, এমনকি জাতীয় পর্যায়ে নিয়মিত অভিনয় করতে পেরেছি মায়ের পাশাপাশি তখন আমার অভিনয়ের গুরু ছিলেন আনিস মামা চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শিশু অভিনেতা ছিলাম আমি অবশ্য এই সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র বহু বছর আগেই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে নতুন কুঁড়ি শাপলা কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় আমি নিয়মিত অংশগ্রহণ করতাম আনিস মামার নির্দেশনা জারি গানে আমরা জেলা পর্যায়ে থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত উঠে এসেছিলাম তখন আমি ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে পড়ি কতই বা আর বয়স হবে ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলে বলা যায় তখন থেকে অভিনয়ের প্রতি আমার প্রেমটা শুরু হয়েছিল সেই সময় থেকে আমি কাব স্কাউট করতাম কাব স্কাউট আমার বেশ পরিচিতি ছিল উপজেলার বিভিন্ন কাব ক্যাম্পুরী গুলোতে আমি স্কুলের পক্ষ থেকে দলনেতা হিসেবে অংশগ্রহণ করতাম ২০০১ সালে আমি অভিনয় করার জন্য প্রথম ঢাকাতে আসি সেবার মৌসুমী প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমি ঢাকাতে বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে আসি অভিনয়ের জন্য সেবার আমার প্রথম ঢাকাতে আসা (প্রথম ঢাকা আসা, কোখায় থাকতাম এসবের বর্ননা) ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত আমি কয়ারপুর স্কুলে ছিলাম কয়ারপাড়া স্কুলে ভর্তির আগে অবশ্য মাস ছয়েক উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে বেলা প্রি-ক্যাডেট স্কুল পড়েছিলাম তবে আমার যাওয়া আসা এবং থাকা সহ বিভিন্ন চিন্তাতে মা আমাকে স্কুল বদলে তার স্কুলে নিয়ে গেলেন আমার এখনো মনে আছে আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি বিভিন্ন বন্ধুদের থেকে সাইকেল ধার নিয়ে সাইকেল চালানো শিখেছিলাম জনি, সঞ্জয়ের সাইকেল বেশি নিততাম খুব শখ ছিল নিজের একটা সাইকেল থাকবে তবে তখন থেকে আমি আমার পারিবারিক অভাব-অনটনের কথা বুঝতাম আমি কখনো আমার মায়ের কাছে কোন জিনিসের জন্য জোর করিনি এমনকি বড় বেলাতেও না আমি জানতাম যে সেটা আমার মা তার স্বল্প আয়ের মধ্যে দিতে পারবেন না অহেতুক একটা জিনিস চেয়ে জেদ করলে তাতে আমাকে জিনিসটি দিতে না পারার জন্য আমার মা খুব কষ্ট পাবেন এজন্য আমি খুব একটা জিনিস চাইতাম না তবে আমি যে বন্ধুদের থেকে সাইকেল ধার করে স্কুল মাঠে চালাতাম সেটা আমার মা খেয়াল করেছিলেন একবার কোনো এক কাজে স্কুলের অন্যান্য সহকর্মীদের মিলে যশোর গিয়েছিল সময়টা আমার ঠিক মনে নেই তবে আমার জীবনের একটা সুন্দরতম সময় ছিল সেই দিনটা মা আমাকে একটা সাইকেল উপহার দিয়েছিলেন লাল রঙের একটা সাইকেল তখনকার সময়ে খুব স্টাইলিস্ট ছিল সাইকেলটা আমি ভাবতেই পারিনি যে আমার মা তখনকার সময়টাতে আমাকে ঠিক এমন একটা সারপ্রাইজ দেবে এরপর মা ভ্যানে চড়ে স্কুলে যেওয়া আসা করতো আর আমি মায়ের ভ্যানের পেছনে পেছনে আমার সেই লাল সাইকেলে চড়ে যেতাম যখন আমি রাস্তাতে চালানোর জন্য বেশ পাকাপোক্ত হলাম তখন আমি নিজেই চলে যেতাম কিন্তু তাতে আমার মা খুব চিন্তিত থাকতো কারণ আমি পথে থাকলে মা আমাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা করে আমাদের তখনকার ভাড়া বাসা ছিল চৌগাছা উত্তরণ সিনেমা হলের সামনটা

একটা বাসার নিচতলা সামাদ স্যারের বাসা নামেই বাসাটা পরিচিত বাসার মালিক ছিলেন শাহাদৎ পাইলট স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক আব্দুস সামাদ ভদ্রলোক এখন স্বপরিবারে আমেরিকাতে থাকেন আমার জন্মই হয়েছের একই গলির আরেকটা বাসাতে আমার জন্ম থেকে শৈশব কৈশর এমনকি যৌবনের পুরোটা সময় আমি এই গলি, এই বাসাতে পার করেছি এমনকি আমার সাথে সংযুক্ত পরিচিত অনেকে জানিনা যে আমরা ওখানে ভাড়া থাকি অনেকে মনে করেন যে ওটা আমাদের বাসা কারণ আমরা একই জায়গাতে ঠিক এতগুলো বছর ভাড়া ছিলাম এই এই গলিতেও আমার কিছু খেলার সাথী ছিল স্কুলে ভর্তির আগে যদি বলা হয় আমার কোনো বন্ধু ছিল কিনা সে ক্ষেত্রে আমি সৈকত কৌশিকের নাম বলবো আমার থেকে বছর তিনেকের ছোট সৈকত কৌশিক সম্পর্কে আমার ভাগ্নে হয়, কিন্তু আমার খেলার সাথীও বটে আমার বন্ধু বললেও কোনো ভুল হবে না কৌশিককে তো মাঝে মাঝে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যে শাহরিয়ার সোহাগ তার কেমন মামা আর মুচকি হাসিতে কৌশিক উত্তর দেয় আপনের চেয়েও বেশি মামা কৌশিকের এমন উত্তর আমাকে বেশ মায়া দেয় সৈকত কৌশিক আর আমি, আমাদের তিনজনের বেড়ে ওঠা খেলাধুলা সব একই সাথে ছিল ওরা আমার থেকে ছোট বিধায় আমাদের ক্লাস আর স্কুল ছিল আলাদা কিন্তু আমাদের বিকেলগুলো কাটতো একই সাথে এই গলিতে আমাদের বিশাল বড় একটা সার্কেল ছিল আমার থেকে বয়সে বড়ড় অনেকেই ছিল তবে আমার খেলার সাথী ছিল অপু ভাই, কৌশিক,সৈকত, লিপু, জেনিথ জিথার, জনি, যুথি, ইতি, সার্জিয়া, মিনা, রিমা, সোহান, অয়ন অয়নের সাথে আমার মামা ভাহ্নে সম্পর্ক এই গলিতে প্রতি বিকেলে আমরা কুমির কুমির এলোনটি বেলোনটি, জুতা চোর, ডাংগুলি, ইচিং বিচিং, ক্রিকেট, ফুটবল যখন যেটা ইচ্ছে হত খেলতাম

No comments

Powered by Blogger.